রাজশাহী মহানগরীতে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সার্টিফিকেট তৈরীর সরঞ্জাম, দেশী-বিদেশী ভূয়া দলিল দস্তাবেজ তৈরীর মূল কারিগরসহ দুই প্রতারককে আটক করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
মঙ্গলবার (১১ জুলাই) দুপুরে র্যাবের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এর আগে, গতকাল সোমবার (১০জুলাই) বিকেল সাড়ে ৬টায় দিকে রাজশাহী র্যাব-৫ মোল্লাাপাড়া ক্যাম্পের সদসন্যরা রাজপাড়া থানার পূর্ব মোল্লাপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক ও ওই সরঞ্জমাদি উদ্ধার করে।
আটককৃতরা হলো, নগরীর পূর্ব মোল্লাপাড়া এলাকার মৃত কাবিল উদ্দিনের ছেলে আনিসুর রহমান অরফে রেজাউল (৬৬) ও কোর্টবুলনপুর এলাকার রাজিব হোসেনের ছেলে শেখ রেজওয়ানুল করিম অরফে সানিক (২২)।
র্যাব জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব জানতে পারে, রাজশাহী নগরীর রাজপাড়া থানাধীন পূর্ব মোল্লাপাড়া গ্রামের আনিছুর রহমান অরফে রেজাউল করিম তার বাড়িতে কতিপয় ব্যক্তিরা জালিয়াতির জন্য ভূয়া সীলমোহরের সাহায্যে জাল দলিল ও ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ তেরি করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছে। এমন সংবাদের প্রেক্ষিতে র্যাব আনিছুর রহমান অরফে রেজাউল করিমের বাড়িতে অভিযান চালায়। এসময় র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে কৌশলে পালানোর চেষ্টাকালে তাদেরকে আটক করে র্যাব।
র্যাব জানায় আটকের পর জিজ্ঞাবাদে তারা জানিয়েছে, আনিছুর রহমান দীর্ঘদিন যাবৎ ভূয়া দলিল দস্তাবেজ তৈরীর কাজে নিয়োজিত ছিল। তিনি সুকৌশলে ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে প্রস্তুত করত এবং মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধে অংশগ্রহণের প্রমাণক হিসেবে ব্যবহৃত অস্ত্র জমা দেয়ার জয় বাংলা লেখা সনদও প্রস্তুত করে দিত। তার কাছে কেউ ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা সনদ, ভূয়া জামানত, ভূয়া দলিল চাইলে বিভিন্ন অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তিনি তা তৈরী করে দিতেন। ভূয়া দলিল দ্বারা জমি দখলদারদের তিনি পুরাতন পাকিস্তানী আমলের দলিলও নিজস্ব পন্থায় তৈরি করে দিতেন।
জাল দলিল তেরির জন্য কালীকলম ব্যবহার করতেন তিনি। কারণ পাকিস্তান আমলে কালি-কলমে দলিল লেখা হতো। তিনি পুরাতন দলিল প্রস্তুত কারণের ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের সীল নিজে তৈরি করে ব্যবহার করতেন। তার কাছে বিভিন্ন কর্মকর্তার ২০৫ টি ভূয়া সীলমোহর পাওয়া যায়। তিনি নিজেকে বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ভূয়া জাল দলিল প্রস্তুতকারক হিসেবে দাবি করেন। তার কাছে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভূয়া দলিল প্রস্তুত করতে প্রতারক জমি দখলকারীরা যোগাযোগ করতো। তিনি এ যাবৎ সহস্রাধিক জাল দলিলসহ বহু মুক্তিযুদ্ধের জাল সনদ তৈরি করে দিয়েছেন। তিনি বিশেষ কেমিকেল ব্যবহার করে দলিলকে পুরাতন দেখানোর পন্থা আবিষ্কার করেছেন। যার মাধ্যমে তিনি জাল দলিল প্রস্তুত করেন যা ধরার উপায় থাকে না।
আটককৃতরা স্বীকার করে তারা পরস্পর যোগসাজসে দীর্ঘদিন ধরে জাল-জালিয়াতির উপকরণ তৈরি করে প্রতারণা করে আসছে। এছাড়াও তিনি ২০১৩ সালে জাল জালিয়াতির মামলায় আটক হয়েছিলেন।
উদ্ধার সরঞ্জামাদির মধ্যে রয়েছে, ১৪ টি স্বাধীনতা সংগ্রামের ভূয়া সনদপত্র, ১৫টি ‘জয় বাংলা’ লেখা সম্বলিত ফাঁকা সনদ, ২৫৪৮টি বাংলাদেশী স্ট্যাম্প, ৮৩৩টি পাকিস্তানী স্ট্যাম্প, ২৫৩টি ভারতীয় স্ট্যাম্প, ২০৫টি জালিয়াতির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরকারি কর্মকর্তার নামীয় ও পদবী সম্বলিত ভূয়া সীল, ২টি বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মনোগ্রাম সম্বলিত লোহার পাত ও ২টি পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় মনোগ্রাম সম্বলিত লোহার পাত (যাহার সাহায্যে স্ট্যাম্পের পিছনে জল ছাপ দিয়া জালিয়াতির সাহায্যে বিভিন্ন ভূয়া দলিল প্রনয়ণ করা হয়), তিনটি জালিয়াতির কাজে ব্যবহৃত দোয়াত কলম, ১টি দোয়াত কালি, ১টি স্ট্যাম্প প্যাড।
আটককৃতদের রাজশাহী নগরীর রাজপাড়া থানায় সোপর্দ করে তাদের বিরুদ্ধে জালিয়াতি ও প্রতারণা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে।