আর্কাইভ থেকে বাংলাদেশ

গোবিন্দগঞ্জে বড়দহ সেতুতে টোল আদায়ে নানা অনিয়ম

গোবিন্দগঞ্জে বড়দহ সেতুতে টোল আদায়ে নানা অনিয়ম

গাইবান্ধার নাকাই-গোবিন্দগঞ্জ সড়কের বড়দহ সেতুতে টোল আদায় নিয়ে চলছে নানা অনিয়ম। গাইবান্ধা সড়ক ও জনপদের বিভাগের নিধারিত বেঁধে দেওয়া মূল্য লঙ্ঘন করে অতিরিক্ত টাকা আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মোটরসাইকেল, রিকশা-ভ্যান টোলের আওতামুক্ত হলেও তাদের কাছে টাকা নেয়া হচ্ছে। এনিয়ে আদাকারীদের সঙ্গে যানবাহন চালকদের প্রায়ই বাক-বিতণ্ডা হচ্ছে। চালককে মারধরের ঘটনাও ঘটেছে। ফলে যানবাহন চালকরা প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

গাইবান্ধা সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগ সূত্র জানায়, কোনও সেতুর দৈর্ঘ্য ২০০ মিটারের বেশি হলে সেটি টোলের আওতায় পড়ে। এই সেতুটির দৈর্ঘ্য ২৫৩ মিটার। ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে সেতুর উপর দিয়ে চলাচলকারী যানবাহন থেকে টোল আদায়ে দরপত্র আহ্বান করা হয়। সেতুর টোল আদায়ের দায়িত্ব পায় শহিদুল ইসলাম। তবে তার কাছ থেকে টোল আদায়ের দায়িত্ব নেন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার নাকাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সহ-সভাপতি ও নবনির্বাচিত নাকাই ইউপি চেয়ারম্যান সাজু খন্দকার।

সূত্রটি জানায়, টোল আদায়ের মূল্য নিধারিত রয়েছে। এরমধ্যে প্রতিবার পারাপারের জন্য ট্রেইলার (ট্রলি) ১১৫ টাকা, ভারী ট্রাক ১০০ টাকা, মধ্যম ট্রাক ৫০ টাকা, বড়বাস ৪৫টাকা, মিনি ট্যাক-ট্রলি ৪০ টাকা, পাওয়ার টিলার-ট্রাক্টর ৩০টাকা, মিনিবাস-কোস্টার ২৫ টাকা, মাইক্রোবাস ২০ টাকা, পিক-আপ, কনভারশনকৃত জীপ, বেকার-ক্রেন ২০ টাকা, সিডান কার ১৫ টাকা।

কিন্তু টোল আদায় করা হচ্ছে ট্রেইলার (ট্রলি)  ১৩০-১৪০ টাকা, ভারী ট্রাক ১২০-১৫০টাকা, মধ্যম ট্রাক ৭০-৮০টাকা, বড়বাস ৭৫-৮০টাকা, মিনি ট্যাক-ট্রলি ৫০-৬০ টাকা, পাওয়ার টিলার- ট্রাক্টর ৪০-৫০ টাকা, মিনিবাস-কোস্টার ৩৫-৪৫টাকা, মাইক্রোবাস ৩০-৩৫ টাকা, পিক-আপ, কনভারশনকৃত জীপ, বেকার-ক্রেন ৩০-৪০ টাকা, সিডান কার ২৫-৩০ টাকা।  

বড়দহ সেতুটি নাকাই ও হরিরামপুর ইউনিয়নের সীমানায় নির্মিত। সরেজমিনে দেখা গেছে, যানবাহন থেকে টোল আদায়ের দৃশ্য। সেতুর পূর্বপাশে দাঁড়ানো তিনজন আদায়কারী। তারা যানবাহন আসামাত্র বাঁশ দিয়ে আটকাচ্ছেন। টোল আদায় করছেন। এসময় অতিরিক্ত টোল নেওয়ার কথা কয়েকজন চালক জানালেন। সেতুতে টোলের তালিকা টানানো হয়নি। ফলে বহিরাগত চালকদের কাছে মনগড়া টোল নেওয়া হচ্ছে। এমনকি মোটরসাইকেল, রিকশা-ভ্যান টোলের আওতামুক্ত হলেও তাদের কাছে টাকা নেয়া হচ্ছে।

গোবিন্দগঞ্জের হরিরামপুর গ্রামের ট্রাক্টর চালক মিল্লাত হোসাইন বলেন, ট্রাক্টর পারাপারের জন্য সরকার ৩০ টাকা টোল নির্ধারণ করেছে। অথচ নেয়া হচ্ছে ৪০-৫০ টাকা। প্রতিবাদ করলে আদায়কারিরা নিরীহ চালককে গালিগালাজ ও মারধর করেন। বগুড়া জেলার ট্রাকচালক জাহিদুল ইসলাম বলেন, বগুড়া থেকে নাকাই হয়ে গাইবান্ধার দুরত্ব কম। তাই এই রুটে যাতায়াত করে থাকি। কিন্তু ১০০ টাকা টোল হলেও ১২০-১৫০ টাকা নেয়া হচ্ছে।

এদিকে এই সেতুতে টোল আদায় বন্ধে স্থানীয়ভাবে আন্দোলন গড়ে উঠে। গঠিত হয় বড়দহ সেতু টোল মওকুফ বাস্তবায়ন কমিটি। কমিটির উদ্যোগে মানববন্ধন, সড়ক অবরোধ, সভা-সমাবেশ হয়। টোল আদায় বন্ধ হয়নি। বড়দহ সেতু টোল মওকুফ বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ১৯৯৭ সালে সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। তখন এর দৈর্ঘ্য ছিল ১৪৮ মিটার। কিন্তু সওজ বিভাগের কাজের দীর্ঘসূত্রিতার করণে নদী ভেঙ্গে সেতুর দৈর্ঘ্য ২৫৩ মিটারে দাঁড়িয়েছে। আঠারো বছরে সেতুর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ফলে দরিদ্র মানুষকে আইনের ফাকে পড়ে টোল দিতে হচ্ছে। তাও ইচ্ছামত টোল নেয়া হচ্ছে। প্রতিদিনই যানবাহন চালকদের সঙ্গে খারাপ আচরণ ও মারধর করা হচ্ছে। অথচ দরিদ্র এলাকার মানুষের কাছে টোল না নেওয়ার শর্তে আন্দোলন শীতিল করে টোল আদায়ের সুযোগ দেয়া হয়। সেই শর্ত এখন মানা হচ্ছে না। সাজু খন্দকার প্রভাব খাটিয়ে অতিরিক্ত টোল আদায় করছেন।

বড়দহ সেতুর টোল আদায়কারী শফিকুল ইসলাম বলেন, ঠিকাদার যেভাবে আদায় করতে বলেন, যা নির্দেশ দেন, তারা তাই করে থাকেন। এখানে তাদের করণীয় কিছুই নেই। তবে তিনি চালকদের মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেন। এসব বিষয়ে দায়িত্ব নেওয়া ঠিকাদার সাজু খন্দকার বলেন, চালকদের মারধরের অভিযোগ সঠিক নয়। সরকার নির্ধারিত হারেই টোল আদায় করা হচ্ছে। তাঁর দাবি, মোটরসাইকেল, রিকশা-ভ্যানের টোল নেওয়া হয়না। টোল আদায়ের দায়িত্ব না পাওয়া তাঁর প্রতিপক্ষ এসব অপপ্রচার চালাচ্ছেন।

এসব বিষয়ে গাইবান্ধা সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ ফিরোজ আখতার বলেন, অভিযোগটি তদন্ত করে দেখা হবে। তদন্তের সত্যতা পাওয়া গেলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন গোবিন্দগঞ্জে | বড়দহ | সেতুতে | টোল | আদায়ে | নানা | অনিয়ম