গ্লোবাল সাউথের দেশগুলোর ওপর তথাকথিত কোনো পছন্দ বা বিভক্তি চাপানো সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। সর্বজনীন নিয়ম ও মূল্যবোধকে অস্ত্রে পরিণত করার প্রচেষ্টাকে আমাদের অবশ্যই প্রত্যাখ্যান করতে হবে। বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া বিভিন্ন ইস্যুতে বিশ্ব নেতাদের নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞার চক্র বন্ধ করার আহ্বানও জানান তিনি। পাশাপাশি সবাইকে সব ধরনের হুমকি, উসকানি ও যুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে বলেও পরামর্শ দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) জোহানেসবার্গের স্যান্ডটন কনভেনশন সেন্টারে ‘নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক অব ব্রিকস’-এর সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের পক্ষে ভাষণ প্রদানকালে এসব কথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ব্রিকসকে বহুমুখী বিশ্বের বাতিঘর হিসেবে আবির্ভূত হতে হবে এবং প্রতিক্রিয়ার সময় অন্তর্ভুক্তিমূলক প্ল্যাটফর্ম হতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের এই বহুমুখী বিশ্বে ব্রিকসকে একটি বাতিঘর হিসেবে প্রয়োজন। আমরা আশা করি- আমাদের প্রতি প্রতিক্রিয়ার সময় এটি একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক প্ল্যাটফর্ম হিসেবে আবির্ভূত হবে। আমাদের শিশু ও যুবকদের কাছে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে- আমাদের জাতিগুলো সংকটে পড়তে পারে, কিন্তু কখনোই পরাজিত হবে না।
ব্রিকস প্লাস ডায়ালগের ফাঁকে ইরানের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম রাইসি ও ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব এন্তোনিও গুতেরেস, উগান্ডার ভাইস প্রেসিডেন্ট, দক্ষিণ আফ্রিকার উপ-প্রধানমন্ত্রী, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও সৌদি আরবের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুশল বিনিময় করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি বিপজ্জনক অস্ত্র প্রতিযোগিতা থেকে পিছিয়ে এসে বিশ্বব্যাপী জনগণের প্রয়োজনীয় পণ্যগুলোর প্রতি মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। বিশ্বজুড়ে শান্তি, ন্যায়বিচার ও স্থিতিশীলতার জন্য আমাদের দায়িত্ব নিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাইকে একসঙ্গে অবশ্যই আন্তর্জাতিক অর্থায়ন ও প্রযুক্তির জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। জলবায়ু, ন্যায়বিচার, অভিবাসীদের অধিকার, ডিজিটাল ইক্যুইটি এবং ঋণ স্থায়িত্বের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের নিজস্ব মুদ্রা ব্যবহারের সুযোগসহ নিয়ম-ভিত্তিক বহুপাক্ষিক বাণিজ্য ব্যবস্থা সংরক্ষণ করতে হবে।
ইউএনজিএ-তে বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের উদ্ধৃতি দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, উদীয়মান বিশ্বে আমাদের জন্য, আমাদের ভাগ্য ও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে আমাদের নিজেদের সামর্থ্যের ওপর বিশ্বাস রাখতে হবে। বঙ্গবন্ধু ৫০ বছর আগে যে বার্তা দিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী তা এখনও সত্য বলে মনে করেন।
বাংলাদেশ সম্পর্কে তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়নে দৃঢ় অঙ্গীকার নিয়ে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতি। আমরা ২০০৬ সালে ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে দারিদ্র্য কমিয়ে ২০২২ সালে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে নিয়ে এসেছি। আমরা একই সময়ে চরম দারিদ্র্য ২৫ দশমিক ১ শতাংশ থেকে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে কমিয়েছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সরকার সারা দেশে ডিজিটাল গণ অবকাঠামো তৈরি করেছে। আমাদের জনসংখ্যার প্রায় ১০৮ শতাংশ সেলুলার মোবাইল সংযোগে অ্যাক্সেস আছে, যা বিশ্বব্যাপী গড় থেকে বেশি। গত অর্থবছরে মোবাইল ফিনান্সিয়াল সিস্টেমস ১১১ দশমিক ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের লেনদেন রেকর্ড করেছে। এতে অন্যদের সঙ্গে আমাদের গ্রামীণ নারীরা ব্যাপকভাবে উপকৃত হয়েছেন।
এএম/