আর্কাইভ থেকে ক্রিকেট

সেমিতে ওঠার লক্ষ্যে অটুট রাখতে মাঠে নামছে অস্ট্রেলিয়া-আফগানিস্তান

সেমিতে ওঠার লক্ষ্যে অটুট রাখতে মাঠে নামছে অস্ট্রেলিয়া-আফগানিস্তান
আজ অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে আরেকটি রূপকথার জন্ম দিয়ে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওঠার লক্ষ্যে অটুট থাকার জন্যই মাঠে নামবে রশিদ, মুজিব, নবিরা। ফলে দুই দলের ম্যাচটি বাড়তি উত্তাপ ও উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। বিশ্বকাপের ৩৯তম ম্যাচে পরস্পরের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া ও আফগানিস্তান। এরই মধ্যে সেমিফাইনালের খুবই দ্বারপ্রান্তে অস্ট্রেলিয়া। মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) আফগানদের হারাতে পারলেই সেমিফাইনালের টিকিট কাটবে অজিরা। হেরে গেলে অপেক্ষায় থাকতে হবে তাদের। সাত ম্যাচ খেলে অস্ট্রেলিয়ার অর্জন ১০ পয়েন্ট। তারা ৫টি ম্যাচে জয় পেয়েছে এবং ২টি ম্যাচে হেরেছে। অন্যদিকে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে ওঠার ইতিহাস হাতছানি দিচ্ছে আফগানিস্তানের সামনে। সাত ম্যাচ খেলে তাদের অর্জন ৮ পয়েন্ট। ৪টি ম্যাচে জিতেছে আফগানরা। ৩টি ম্যাচে হারের রেকর্ড। আজ অস্ট্রেলিয়াকে হারাতে পারলে সেমিফাইনালের দ্বারপ্রান্তে চলে যাবে আফগান-যোদ্ধারা। একই সঙ্গে যদি প্রাথমিক পর্বের শেষ ম্যাচেও জয় পায় তারা, তাহলে কোনো প্রকার হিসাব-নিকাশ ছাড়াই সেমিফাইনালে উঠে যাবে আফগানিস্তান। তা না হলে তাদের অন্য দলগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে এবং নানা সমীকরণ মেলাতে হবে। ফলে এত হিসাব-নিকাশে না গিয়ে জয় পেতে চাইবে আফগানরা। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়া ও আফগানিস্তানের মধ্যকার ম্যাচটি বাংলাদেশ সময় বেলা আড়াইটায় শুরু হবে। এই ম্যাচের চলতি ধারাবিবরণী সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ বেতার। নিজেদের প্রথম দুই ম্যাচে হেরে বিশ্বকাপে যাত্রাটা দুঃস্বপ্নের মতো হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার। ভারতের কাছে ৬ উইকেটে এবং দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে ১৩৪ রানে হেরে টুর্নামেন্টের শুরুতেই বিপাকে পড়ে দলটি। কিন্তু এই দুই ম্যাচের পর থেকে নাম অনুযায়ী খেলছে অস্ট্রেলিয়া। শ্রীলঙ্কাকে ৫ উইকেটে হারিয়ে দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়ায় দলটি। এরপর পাকিস্তানের বিপক্ষে ৬২ রান, নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ৩০৯ রান, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৫ রান ও সর্বশেষ ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৩ রানে জিতেছে তারা। ম্যাচের ফল দিয়ে শুধু বিচার নয়, যেভাবে যে পরিস্থিতিতে আগ্রাসী ও দাপুটে ক্রিকেট খেলে জয় তুলে নিয়েছে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা, তাতে তারা ফেভারিটের মতোই খেলছে এখন। বিশেষ করে তাদের বিস্ফোরক ব্যাটিং ও বিধ্বংসী বোলিং লাইনআপ দুর্দান্ত। এরই মধ্যে পাওয়ার ব্যাটিংয়ের চমৎকার প্রদর্শনী দেখিয়েছে তারা। তাদের দলের টপ অর্ডার, মিডল অর্ডার ব্যাটাররা দারুণ ফর্মে আছেন এবং লম্বা রানের ইনিংস খেলেছেন। তবে তাদের দুশ্চিন্তার জায়গা হলো দলের সেরা অলরাউন্ডার গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে পাচ্ছে না। গলফ খেলতে গিয়ে ইনজুরিতে পড়েছেন তিনি। এটি তাদের জন্য অস্বস্তির কারণ। অন্যদিকে মিচেল মার্শ পরিবারের জরুরি প্রয়োজনে দেশে ফিরে যান। এ জন্য গত ম্যাচে খেলতে পারেননি। জানা গেছে, তিনি দলের সঙ্গে যোগ দিচ্ছেন। অন্যদিকে দলের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্সরা। এই পেসাররা যেকোনো ব্যাটসম্যানকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন। পেসের পাশাপাশি স্পিনেও আলোকিত অস্ট্রেলিয়া। অ্যাডাম জাম্পার টুর্নামেন্টে সর্বোচ্চ ১৯ উইকেট শিকার করেছেন। এই স্পিনার অস্ট্রেলিয়া বোলিংয়ের মূল অস্ত্র। সব মিলিয়ে আফগানিস্তানের জন্য আজ বড় পরীক্ষার নাম অস্ট্রেলিয়া। এদিকে প্রত্যাশা ছাড়িয়ে বিশ্বকাপে তাক লাগানো পারফরম্যান্স উপহার দিয়ে যাচ্ছে আফগানিস্তান। তাদের গায়ে ছোট দলের তকমা লেগে থাকলেও বড় দলগুলোর চেয়ে তাদের পারফরম্যান্স অনেক উজ্জ্বল। বাংলাদেশ ও ভারত কাছে হেরে বিশ্বকাপে যাত্রা শুরু হয়েছিল আফগানদের। তবে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বড় অঘটনের জন্ম দেয় তারা। ইংলিশদের বিপক্ষে পাওয়া ৬৯ রানের জয়টি তাদের আত্মবিশ্বাসের জ্বালানি হিসেবে কাজ করে। পরের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে ১৪৯ রানের বিশাল ব্যবধানে হারলেও পাকিস্তানকে হারিয়ে আকেরটি রূপকথার জন্ম দেয় আফগান-যোদ্ধারা। সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তানকে ৮ উইকেটে সহজেই হারায় তারা। এরপর শ্রীলঙ্কাকে ৭ উইকেটে এবং নেদারল্যান্ডসকে ৭ উইকেটে হারিয়ে বিশ্বকাপে ৪ জয় তুলে নেয় আফগানিস্তান। টানা তিন ম্যাচে জয়ের ছন্দে থাকা এই দলটি অস্ট্রেলিয়াকেও মাটিতে নামিয়ে দিলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। ব্যাটিং, বোলিং ও ফিল্ডিং- এই তিন গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে সমানভাবে জ্বলে উঠছে আফগানরা। বিশেষ করে তাদের মূল শক্তির জায়গা হচ্ছে বোলিং বিভাগ। সেখানে বিশ্বমানের স্পিনার রয়েছে তাদের। রশিদ খান, মুজিব উর রহমান ও মোহাম্মদ নবি মিলে স্পিনে আফগানিস্তান দলকে আলাদা করে রাখছে। তাদের বিষাক্ত স্পিনে নীল হতে দেখা যায় প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের। এ ছাড়া পেস ইউনিটও তাদের বেশ কার্যকর ও ধারালো। পাশাপাশি আফগান ব্যাটাররাও লম্বা ইনিংস খেলার ছন্দে রয়েছে। সব মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ার জন্য আফগানিস্তানও আজ হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ পর্যন্ত বিশ্বকাপ আসরে দুইবার সাক্ষাৎ হয়েছে দল দুটির। ২০১৫ ও ২০১৯ সালের আসরে দুবারই দাপুটে জয় তুলে নেয় অস্ট্রেলিয়া। এই দুই ম্যাচের আগে ২০১২ সালে শারজায় একটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছিল দুই দল। সেবারও জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। এ নিয়ে ওয়ানডে ক্রিকেটে চতুর্থবার অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে আফগানিস্তান। এবার অতীতের হতাশা কাটিয়ে তারা জয়ের মুখ দেখতে পারে কি না- সেটিই দেখার বিষয়।

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন সেমিতে | ওঠার | লক্ষ্যে | অটুট | রাখতে | মাঠে | নামছে | অস্ট্রেলিয়াআফগানিস্তান