লেখক ব্রাম স্টোকারের কলমে ফুটে ওঠা কাউন্ট ড্রাকুলার গল্প আজও মনে ভয় ধরায়। নাম শুনলেই চোখে ভেসে ওঠে, ট্রান্সিলভ্যানিয়ার দুর্গের উঁচু দেওয়াল বেয়ে নেমে আসছে ভয়ঙ্কর সে ড্রাকুলা। রক্ততৃষ্ণা মেটাতে এখনি ঘাড়ের কাছে মুখ নামিয়ে এনে যেন বসিয়ে দেবে শ্বদন্তগুলি।
আদতে ড্রাকুলার অস্তিত্ব ছিল কি না, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে এখনও। তবে তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে এসে যে সত্যিই ড্রাকুলার আবির্ভাব ঘটতে পারে, তা বোধ হয় ভাবতে পারেননি কেউই।
এ ড্রাকুলার ঠিকানা ট্রান্সিলভ্যানিয়া নয়, তুরস্ক। বাবার সঙ্গে থাকেন তিনি। ‘দ্য জার্নাল অব সাইকোথেরাপি অ্যান্ড সাইকোসোম্যাটিক্স’ এ ব্যক্তির নাম প্রকাশ না করলেও তার মানসিক ও শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে নানা তথ্য প্রদান করেছে।
সারা দিন রক্ত পান করেও একজন কী করে শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকতে পারেন, এ নিয়ে সন্দেহ জাগে চিকিৎসকদের। তাই ওই ব্যক্তির স্বাস্থ্যগত পর্যবেক্ষণ করার সিদ্ধান্ত নেন তারা।
তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারেন, দু’বছর ধরে টানা রক্তপান করে চলেছেন তিনি। প্রথম দিকে রক্ততৃষ্ণা মেটাতে নিজের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ব্লেড দিয়ে কেটে নিজের রক্তই পান করতেন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এটি তার নেশায় পরিণত হয়ে যায়।
কিছু দিন পর রক্তের নেশা এমন তীব্র আকার ধারণ করে যে, অচেনা ব্যক্তিকেও আক্রমণ করতে শুরু করেন তিনি। কখনও তাদের গায়ে কামড় বসিয়ে, কখনও বা তাদের ছুরি দিয়েও আহত করে রক্তপান করতেন তিনি। আর এ কারণে বহু বার তাকে গ্রেপ্তারও করেছে তুর্কি পুলিশ। এমনকি, ছেলেকে রক্তের জোগান দিতে ব্লাড ব্যাঙ্ক থেকে রক্ত কিনেও আনতেন তার বাবা।
চিকিৎসকদের দাবি, ওই ব্যক্তি বহু বছর ধরেই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। তার চার মাসের মেয়ে শারীরিক অসুস্থতায় ভুগে মারা যায়। কন্যাবিয়োগের শোক সামলে উঠতে পারেননি তিনি। এমন পরিস্থিতিতেই নিজের কাকাকে চোখের সামনে খুন হতে দেখেন তিনি। শুধু তাইই নয়, জার্নালের রিপোর্ট অনুযায়ী জানা যায়, তার এক বন্ধু ওই ব্যক্তির সামনেই তার কাকাকে নৃশংস ভাবে খুন করে। খুন করার পর মৃতদেহের মাথা, এমনকি যৌনাঙ্গও কেটে ফেলে।
একের পর এক ভয়াবহ ঘটনা ঘটতে থাকায় তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলতে শুরু করেন। ২৩ বছর বয়সি এ ব্যক্তিকে পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, তিনি নিজের মনেই কথা বলে যান। তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করায় তিনি জানান, তার নাকি এক ‘অদৃশ্য’ বন্ধু রয়েছে। সেই বন্ধুর সঙ্গেই কথা বলেন তিনি। সেই ‘অদৃশ্য’ বন্ধুই নাকি তাকে রক্ত খাওয়ার নির্দেশ দেন।
অন্য ব্যক্তিদের আক্রমণ করার সময় নাকি তিনি কিছু বুঝতেই পারেন না। এমনকি তিনি এ-ও বুঝতে পারেন না, কী করে তিনি অন্য জায়গায় পৌঁছে যান। অনেক সময় সেই 'অদৃশ্য বন্ধু' আত্মহত্যা করতেও বলেছেন তাকে।
তুর্কির ডেনিজলি মিলিটারি হাসপাতালের চিকিৎসক ডিরেন সাকারয়া এবং তার সহকর্মীরা দু’বছর ধরে এ ব্যক্তির চিকিৎসা চালান।
ডিরেনের মতে, এ ব্যক্তি মানসিক অবসাদ, মদ্যাসক্তি, মাল্টিপল পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার, পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডারসহ বহু রোগে ভুগছেন।
চিকিৎসকেরা এটাও জানিয়েছেন, তার মধ্যে ‘ভ্যাম্পায়ারিজম’-এর লক্ষণ খুঁজে পাওয়া গিয়েছে।
অনন্যা চৈতী