কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের এক ছাত্রী পর্দা করায় জঙ্গি বলার অভিযোগ উঠেছে একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. জসিম উদ্দিন নামের এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ওই ছাত্রীর অভিযোগ, কেন একজন শিক্ষক একজন ছাত্রীর ব্যক্তিগত বিষয়ে জানতে চাইবে? তবে বিষয়টি মিথ্যা ষড়যন্ত্র ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেন অভিযুক্ত শিক্ষক মো. জসিম উদ্দিন।
খোজঁ নিয়ে জানা যায়, গত ২১ আগস্ট (রবিবার) বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ৪র্থ সেমিস্টারের 'Business Statistics-2 ও (FIN-222) কোর্সের ভাইবা অনুষ্ঠিত হয়। এতে পর্দা করায় এক ছাত্রীকে 'মৌলবাদী জঙ্গি' বলে সম্বোধন করে এবং ভাইবাতে ম্যানার জানেন না বলে হেনস্তা করেন। পরে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী বিষয়টি সিনিয়রদের জানালে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এদিকে গণমাধ্যমের সাথে কথা না বলতে নিষেধ করেন অভিযুক্ত শিক্ষক জসিম উদ্দিন।
ভুক্তভোগী ছাত্রীর রেফারেন্স দিয়ে এক শিক্ষার্থী লিখেন, ভাইবাতে প্রথমে স্যার বলেন, আপনি কি ভাইবা দেওয়ার ম্যানার শিখেন নাই? ভাইবা দেয়ার ম্যানার হলো মুখ খুলে আসতে হবে। এতো পড়াশোনা করে কি করবেন আগে মেনারস শিখেন। আপনি এইভাবে ভাইবা দিতে আসছেন জঙ্গী মৌলবাদীদের মতো। নিকাব খুলেও তো ভাইবা দেওয়া যায়। আমাকে জিজ্ঞেস করা হয় ভার্সিটি এডমিশন দিসেন কেমনে, বলসি তখন পর্দার বুঝ ছিলো না জানতাম না পর্দা যে ফরজ, বুঝ আসার পর থেকে পর্দা করা শুরু করেছি। বলে মুখ খোলা রেখেও তো পর্দা করা যায়।
আর তখন আপনি এডাল্ট ছিলেন আর একটা এডাল্ট মেয়ে তো সব বুঝে।আমি বলেছি স্যার সবাই তো আর পর্দার বুঝ টা আগে থেকে পায় না। আমি নাকি তর্ক করেছি তাই আমাকে বের করে দিয়েছে। তিনি আরও লিখেন, সংবিধানেও যার যার ধর্ম পালনের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।সেখানে আমার পর্দা নিয়ে পারসোনাল এট্যাক করার চেষ্টা। একাডেমিক টপিকের চেয়ে বেশি আমার মুখ খুলা নিয়েই প্রশ্ন ছিলো।
একই ব্যাচের একাধিক শিক্ষার্থী জানান, অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন নারী শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত বিষয়ে কথা বলার অভিযোগ রয়েছে। গতকাল ভাইবা দিতে গিয়ে ছাত্রীদের বিভিন্ন ধরণের কথা বলে হেনস্তা করেন। বয়ফ্রেন্ড আছে কিনা, মেয়েরা এত সুন্দরী হয় কিভাবে, কি ধরণের ছেলে পছন্দ ইত্যাদি জানতে চায়। তারা বলেন, মেয়েদের প্রতি স্যারের একটু দুর্বলতা আছে। ব্যক্তিগত ব্যাপারে কথা বলে। একজন মেয়েকে জিজ্ঞেস করে বয়ফ্রেন্ড নাই তবু এত সুন্দর কেন। মেয়েদের একাডেমিক খুবই কম প্রশ্ন করে। ছেলেদের সাথে পারসনাল কথা বলেনা, একাডেমিকই বলেন। পর্দা করা মেয়েদের কে বিভিন্ন সময়ে হেনস্তা করেন বিভিন্ন কথা বলে। ভাইবাতে পর্দা করায় এক ছাত্রীকে মৌলবাদী বলেন এবং জঙ্গি নাকি জিজ্ঞাস করেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষক বিষয়টি মিথ্যা ও ষড়যন্ত্র উল্লেখ করে বলেন, এবিষয়গুলা নিয়ে কথাই হয়নি। এটি একটি মিথ্যাচার ও ষড়যন্ত্র। কর্পোরেট ভাইবাতে পর্দা ব্যবহার করবেন কিন্তু স্মার্টলি যাবেন নমনীয়ভাবে যাবেন। ওই শিক্ষার্থীকে জাস্ট এতটুকু বলেছি, তাও বলেছি ভাইবার পরে। ভুক্তভোগী ছাত্রীকে সাংবাদিকদের যোগাযোগ না করতে নিষেধ করার বিষয়ে তিনি বলেন, এ ধরণের কোন কথাই হয়নি। সে আসছিল, তখন আমি বলেছি আমি হয়তো বুঝাতে পারিনি। সে বলছে স্যার বুঝতে পারছি।
এবিষয়ে বিভাগটির সভাপতি এমদাদুল হক বলেন, একজন শিক্ষক কিভাবে ভাইবা নিবেন এটি সম্পূর্ণ ওনার ব্যাপার। এমন বিষয়টি মাত্র তোমার থেকে শুনেছি। ছাত্রছাত্রী যদি অভিযোগ দেয় তাহলে আমরা বিষয়টি দেখব।
এ বিষয়ে জেন্ডার বিশেষজ্ঞ ও কুবি যৌন হয়রানী প্রতিরোধ সেলের সদস্য দিল নাসি মহসিন বলেন, এমন ঘটনা অবশ্যই নির্যাতন। এজন্য ছাত্রীর ব্যক্তিগত বিষয়ে শিক্ষক কথা বলতে পারেন না, এটি কোন সাধারণ শিষ্টাচারে পড়েনা। আমাদের দেশে আমরা অনেক কিছু দেখেও না দেখার মত করে চলি। আমরা কোন রেজাল্ট পাইনা। শিক্ষক যদিও ওই দৃষ্টি নিয়ে বলে থাকে তাহলে অবশ্যই অন্যায় কাজ। ব্যক্তিগত সম্পর্ক থেকে বলতে গেলেও, যেখানে ওইরকম চাহিদা নাই।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, বিষয়টি সত্যতা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় তদন্ত করবে। এর ফলাফলের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় সিদ্ধান্ত নিবে।
উল্লেখ্য, এর আগে বঙ্গবন্ধু জন্ম বার্ষিকীতে ক্লাস নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে।