সীমান্তের ওপার থেকে পাকিস্তানের `জঙ্গি’দের হামলায় বারবার উত্তপ্ত হচ্ছে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর উপত্যকা। `জঙ্গিদের’ হামলায় রক্তাত্ব হচ্ছে ভূস্বর্গ। গুলি-বোমার শব্দ, ভারি বুটের আওয়াজ, কান্না, রক্ত, নিথর দেহ-সব মিলিয়ে কাশ্মীরে এক থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে। গত কয়েক মাসে কাশ্মীরে তিন ডজনেরও বেশি হামলা চালিয়েছে তথাকথিত জঙ্গিরা। যাদের পেছন থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী-ভারতের অভিযোগ এমনটাই।
নয়াদিল্লির দাবি, গত কয়েক মাসে যেসব ‘জঙ্গি’ হামলা হয়েছে, তার পেছনে রয়েছে নতুন ধরণের কৌশল। প্রথমত নতুন একটা জঙ্গি সংগঠনকে সামনে এনে কাজটা করতে চাইছে পাকিস্তান। কিছুদিন আগে রিয়াসিতে তীর্থ যাত্রীদের বাসে ‘জঙ্গি’দের হামলার ঘটনার দায় নিয়েছিল ‘টিআরএফ’। পুরো নাম ‘দ্য রিসিসটেন্স ফ্রন্ট’, যেটি পাকিস্তান থেকে নিয়ন্ত্রিত হয় বলে দিল্লির দাবি।
২০১৯ সালে কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা লোপ পাওয়ার পর এই সংগঠনটির জন্ম। এই সংগঠনের মূল চালিকা শক্তি লস্কর-ই-তইবা। ভারতীয় গোয়েন্দাদের সন্দেহ আড়ালে থেকে লস্করই পরপর ‘জঙ্গি’ হামলার পরিকল্পনা সাজিয়ে চলেছে।
দ্বিতীয় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করছে, অ্যাকশনের জন্য জায়গা নির্ধারণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রায় দুই দশক পর আবার দক্ষিণ কাশ্মীরকে টার্গেট করেছে ‘জঙ্গি’রা। গত কয়েক দিনের ধারাবাহিক কার্যকলাপের দিকে চোখে রাখলেই বিষয়টা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। রিয়াসি, কাঠুয়া, ডোডা, রাজৌরি বিভিন্ন জায়গায় যে টার্গেট করেছে জঙ্গিরা, তার সবকটা ক্ষেত্রই দক্ষিণ কাশ্মীর। আর কাশ্মীরের এই অংশটা এলওসি বা নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর নয় বরং আন্তর্জাতিক সীমানা ঘেঁষা।
নয়াদিল্লির অভিযোগ, দুই দশক পর ফের দক্ষিণ কাশ্মীরকে টার্গেট করেছে জঙ্গিরা। কাশ্মীরের দক্ষিণের জেলাগুলিতে পর পর হামলার ঘটনায় স্পষ্ট অনুপ্রবেশের জন্য এই রুটকেই কাজে লাগাচ্ছে ‘জঙ্গি’রা। জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ বোলছে, বর্তমানে উপত্যকায় পাকিস্তানের ৭০ জন ‘সন্ত্রাসী’ সক্রিয় রয়েছে। দক্ষিণ কাশ্মীরে পুরো এলাকা ঘন জঙ্গল এবং প্রত্যন্ত পার্বত্য এলাকা রয়েছে।
ভারতীয় সেনাবাহিনী বোলছে, এই এলাকাকে আগেও বারবার অনুপ্রবেশের একটা বড় রুট হিসেবে ব্যবহার করেছে ‘জঙ্গি’রা। এই রুট দিয়ে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর থেকে ‘লস্কর’ বা ‘টিআরএফ’ এর সশস্ত্র সদস্যরা দক্ষিণ কাশ্মীরে প্রবেশ করে চালাচ্ছে হামলা। প্রাণ নিচ্ছে নিরীহ কাশ্মীরিদের।
জঙ্গিদের পুরনো প্ল্যান হচ্ছে পাহাড় জঙ্গলকে ব্যবহার করা।দক্ষিণ কাশ্মীরের ভূ-প্রকৃতি তাদের সেই কাজটা সহজ করে দিচ্ছে।ভারতের সাবেক কর্মকর্তারা মনে করছেন,অনুপ্রবেশ না আটকে ‘জঙ্গি’ নিধন করার পরিকল্পনা বেশ কঠিন। কারণ ঘন জঙ্গলে ঢাকা উচুঁ পাহাড় থেকে লুকিয়ে হামলা চালায় ‘জঙ্গি’রা। তাই টহলদারির বদলে অনেকক্ষেত্রেই ড্রোনের ওপর ভরসা করতে হচ্ছে ভারতীয় বাহিনীকে।
সম্প্রতি পুলওয়ামায় হামলার পর বড় ধরণের অভিযান পরিচালনা করে ভারতী সেনাবাহিনী। পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে ‘জঙ্গি’দের বেশ কয়েকটি ঘাঁটি উড়িয়ে দেয় তারা। ধ্বংস করে জঙ্গিদের একাধিক লঞ্চ প্যাড।
এদিকে, সম্প্রতি মোদি প্রশাসন ইঙ্গিত দিয়েছে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরকে ভারতে ফিরিয়ে আনার সব রকম চেষ্টা করা হবে। এলওসি বরাবর কড়া নিরপাত্তা বেষ্টনীও তৈরি করা হয়েছে। ফলে সেই অংশ দিয়ে অনুপ্রবেশ বা জঙ্গি কার্যকলাপ চালিয়ে যাওয়া বেশ কঠিন ‘জঙ্গি’দের কাছে।
এই পরিস্থিতিতে ‘জঙ্গি’দের প্রয়োজন নতুন রুট। আর সেটা খুঁজতে গিয়েই দুই দশক আগের জম্মুর পিরপাঞ্জাল রেঞ্জ হয়ে উঠেছে ‘জঙ্গি’দের নতুন এন্ট্রি পয়েন্ট। একারণে ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠছে কাশ্মীরের এই এলাকা। তাই আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই একমত পোষণ করছেন, দক্ষিণ কাশ্মীরের বিভিন্ন রুটে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী মোদির কপালে দুশ্চিন্তার বিশাল ভাঁজ পড়েছে।
এমআর//