‘ইরানে অবশ্যই হামলা চালানো হবে। নিজের ভূখন্ড ও জনগণের ওপর ইরানের ভয়ঙ্কর মাত্রার হামলা কোনাভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। ইরানকে এর জন্য চরম মূল্য দিতে হবে। তেহরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাব দিতে হামলা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে তেলআবিব। ফ্রান্সসহ পশ্চিমা দেশগুলো অস্ত্র সহায়তা না করলেও ইসরাইল এ যুদ্ধে জয়ী হবে।’
রোববার (৬ অক্টোবর) জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষনে ইরানের বিরুদ্ধে এভাবেই প্রতিশোধ নেওয়ার হুঙ্কার দিলেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। পাশাপাশি এক হাত দেখালেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁকে। ফিলিস্তিনের গাজাসহ মধ্যপ্রাচ্যের সাতটি ফ্রন্টে ইসরাইল সেনাবাহিনী যুদ্ধ করছে উল্লেখ করে ইসরাইলি সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমার একটি মেসেজ আছে। মেসেজটি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁর উদ্দেশ্যে। ইসরাইলিরা আজ সাতটি ফ্রন্টে যুদ্ধ করছে। শত্রুদের বিরুদ্ধে সাতটি ফ্রন্টে ইসরাইল নিজেদের রক্ষা করছে। এই সাতটি ফ্রন্টের মধ্যে রয়েছে উত্তর সীমান্তে ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহ, গাজায় হামাস, ইয়েমেনে হুথি বিদ্রোহীরা, পশ্চিম তীরের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো এবং ইরাক ও সিরিয়ায় শিয়া মিলিশিয়ারা।
ইরানের সমর্থন ও মদতপুষ্ট লেবাননের সশস্ত্র ইসলামি গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে দমনে ইসরাইল গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে দক্ষিণ লেবাননে স্থল অভিযান। এই অভিযান শুরুর ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ইসরাইলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে একের পর এক ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান।
ইরানের সেনাবাহিনীর এলিট শাখা ইসলামিক রেভোল্যুশনারি গার্ড কর্পস –আইআরজিসি সেদিন সন্ধ্যার পর থেকে ২ অক্টোবর ভোর পর্যন্ত প্রায় ২০০ ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে। অধিকাংশ ক্ষেপণাস্ত্র লক্ষ্যে আঘাত হানার আগেই অবশ্য ক্ষেপণাস্ত্র সুরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে ধ্বংস করে দেওয়ার দাবি করেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
ইরানের এই হামলা সম্পর্কে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইরান আমাদের অঞ্চল এবং আমাদের শহরগুলোতে দুবার ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে। ইসরাইলে যে মাত্রার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান, বিশ্বের অন্য কোনো দেশ তাদের ভূখণ্ড ও জনগণের ওপর এই মাত্রার হামলা বরদাস্ত করবে না, ইসরাইলও করবে না। নিজের ভূখণ্ড ও নাগরিকদের রক্ষা করা শুধু অধিকারই নয়, এটি ইসরাইলের দায়িত্বও। ইসরাইল সেই দায়িত্ব নিশ্চিতভাবেই পালন করবে।’
এদিকে, যুক্তরাজ্যের পর এবার ফ্রান্সও ইসরাইলে অস্ত্র পাঠাচ্ছে না। ইসরাইলে অস্ত্র পাঠানোর ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দিতে পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি আহবান জানিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। পাশাপাশি লেবাননে ইসরাইলি স্থল অভিযানের সিদ্ধান্তে নেতানিয়াহুর সমালোচনা করেছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট। তিনি জানান, এই মুহূর্তে সংঘাত কমিয়ে আনাকে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। লেবানন আরেকটি গাজা হয়ে উঠতে পারে না, এমনকি লেবাননের জনগণ তাদের প্রাণ হারাতে পারেন না।
ফরাসি প্রেসিডেন্টের এমন মন্তব্যের কড়া প্রতিক্রিয়া জানান নেতানিয়াহু। জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে নেতানিয়াহু বলেন, ‘যখন সারাবিশ্ব ইরানি বর্বরতার বিরুদ্ধে ইসরায়েলের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে এই সময়ে এসেও ম্যাঁক্রোসহ বেশ কয়েকজন পশ্চিমা নেতা ইসরায়েলের ওপর অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা দেয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। তাদের প্রতি ধিক্কার।’
প্রসঙ্গত, ইরানের সমর্থন ও মদতপুষ্ট সশস্ত্র ইসলামি গোষ্ঠী হিজবুল্লাহকে দমনে চালানো বিমান হামলায় হিজবুল্লাহপ্রধান হাসান নাসারুল্লাহ নিহত হন। এর বদলা নিতেই ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থাপনা লক্ষ্য করে একের পর এক ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরানের সেনাবাহিনী। আর ইরানের এই হামলার জবাব দিতে মরিয়া হয়ে উঠেছে নেতানিয়াহু বাহিনী। যেকোনো সময় এই হামলা চালানো হতে পারে বলে জানিয়েছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
এমআর//