ভারতের খ্যাতনামা গীতিকার ও সংগীতশিল্পী কবীর সুমনবাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিয়ে মিথ্যা প্রচারণার বিরুদ্ধে বরাবরই সরব। তিনি স্পষ্টভাবে বলছেন, ‘ভারত থেকে যারা বাংলাদেশের মুসলমান আর হিন্দুদের সম্পর্কে মিথ্যে কথা প্রচার করে চলেছে তারা জেনে রাখুক মিথ্যে প্রচারে শেষ পর্যন্ত কোনও কাজই হয় না।’
সম্প্রতি ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর ‘নির্যাতন’ হচ্ছে বলে খবর প্রকাশিত হয়। এতে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের বিভিন্ন জায়গায়। এমনকি, ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলায় বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনে হামলা ও ভাঙচুরের মতো ঘটনাও ঘটে।
এরই পরিপ্রেক্ষিতে নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়েছেন শিল্পী কবীর সুমন। নিজের কাছে পাঠানো নবীন এক বাংলাদেশি বন্ধুর ফেসবুক বার্তার বিষয়টি উল্লেখ করে শনিবার (৭ ডিসেম্বর) কবীর সুমন ফেসবুকে এক পোস্ট দিয়েছেন। বায়ান্ন টিভির দর্শক ও পাঠকদের জন্য কবীর সুমনের ওই পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
"আমি হিন্দু পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি।
কিন্তু আমি মানুষ হতে চাই।
মুসলমানেরা আমার ও আমার পরিবারের উপরে অত্যাচার করেনি
জেঠু
আমার প্রনাম নিবেন"
কথাগুলি একটু আগে আমায় লিখে জানিয়েছেন আমার স্নেহভাজন এক নবীন বাংলাদেশি বন্ধু। তাঁর নাম আমি প্রকাশ করছি না। মাঝেমাঝে তিনি কলকাতায় এসে আমার সঙ্গে দেখা করে যান। তাঁর পরিচয় জানলে আমার দেশে তাঁর কপালে কী জুটবে কে জানে।
ভারত থেকে যারা বাংলাদেশের মুসলমান আর হিন্দুদের সম্পর্কে মিথ্যে কথা প্রচার করে চলেছে তারা জেনে রাখুক মিথ্যে প্রচারে শেষ পর্যন্ত কোনও কাজই হয় না, পশ্চিম বঙ্গের সন্দেশখালি এবং আর জি কর নিয়ে অকথ্য অনর্গল মিথ্যে প্রচার যেমন প্রচারকদের কোনও সুবিধেই ডেকে আনেনি।
জয় ভালবাসা!
কবীর
এর আগে, গেলো ৩০ নভেম্বর আরেকটি পোস্টে সীমান্তের কাঁটাতার বেড়ায় ফেলানির মরদেহের ঝুলে থাকার বিষয়টি তুলে ধরে জানতে চান- ‘সীমান্তের কাঁটাতার-বেড়া থেকে ফেলানি যখন ঝুলছিলেন, কিসের কার অবমাননা হচ্ছিল তখন?’
প্রসঙ্গত, কবীর সুমন একাধধারে গায়ক, গীতিকার, অভিনেতা, সাংবাদিক, গদ্যকার ও সাবেক সংসদ সদস্য। হিন্দু পরিবারে জন্ম নেওয়া কবীর সুমনের পূর্বনাম ছিল সুমন চট্টোপাধ্যায়। ২০০০ সালে বাংলাদেশী সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমীনকে বিয়ে করার জন্য ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়ে কবীর সুমন নাম গ্রহণ করেন।
বিশিষ্ট আধুনিক ও রবীন্দ্রসংগীত গায়ক কবীর সুমন ১৯৯২ সালে ‘তোমাকে চাই’ অ্যালবামের মাধ্যমে বাংলা গানে এক নতুন ধারার প্রবর্তন করেন। তার স্বরচিত গানের অ্যালবামের সংখ্যা পনেরো। সঙ্গীত রচনা, সুরারোপ, সংগীতায়োজন ও কণ্ঠদানের পাশাপাশি গদ্যরচনা ও অভিনয়ের ক্ষেত্রেও তিনি স্বকীয় প্রতিভার সাক্ষর রেখেছেন। তিনি একাধিক প্রবন্ধ, উপন্যাস ও ছোটোগল্পের রচয়িতা এবং হারবার্ট ও চতুরঙ্গ প্রভৃতি মননশীল ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রের রূপদানকারী। নন্দীগ্রাম গণহত্যার পরিপ্রেক্ষিতে কৃষিজমি রক্ষার ইস্যুতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত আন্দোলনে তিনি সক্রিয়ভাবে যোগদান করেন এবং সেই সূত্রে সক্রিয় রাজনীতিতে তার আবির্ভাব ঘটে। ২০০৯ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্র থেকে দেশের পঞ্চদশ জাতীয় নির্বাচনে জয়লাভ করে লোকসভার সদস্য নির্বাচিত হন।
এমআর//