সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ সরকারের পতন ঘটেছে। কোনো ধরণের প্রতিরোধ ছাড়াই রাজধানী দামেস্কে প্রবেশের কয়েক ঘণ্টা পরই বিদ্রোহী যোদ্ধারা এ ঘোষণা দেয়। এর আগে তৃতীয় বৃহত্তম শহর হোমস দখল করে নেয় তারা। গত সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে বিদ্রোহীরা একের পর এক শহর দখলে নেয়।
রোববার(৮ ডিসেম্বর) বিদ্রোহী দলগুলো টেলিগ্রাম বার্তায় জানিয়েছে, ‘বাথ শাসনের অধীনে ৫০ বছরের নিপীড়নের পরে, এবং ১৩ বছরের অপরাধ ও অত্যাচার এবং (জোর করে) বাস্তুচ্যুত হওয়ার পর... আমরা আজ এই অন্ধকার সময়ের অবসান এবং সিরিয়ার জন্য একটি নতুন যুগের সূচনা ঘোষণা করছি।’
এর আগে, সিরিয়ার বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শামের (এইচটিএস) প্রধান আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি বলেছেন, বিদ্রোহী যোদ্ধারা দামেস্ক ও হোমস শহরের একদম কাছে পৌঁছে গেছেন। খুব শিগগিরই বাশার আল–আসাদ সরকারের পতন হবে।
শুধু তাই নয়, বিদ্রোহী যোদ্ধাদের প্রতি এক বার্তায় সাধারণ মানুষের প্রতি ভালো আচরণ করার আহ্বান জানিয়েছেন এইচটিএস প্রধান। তিনি বলেছেন, ‘আমার ভাইয়েরা, আপনাদের প্রতি আমি আবারও আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা যেসব শহর ও গ্রামে প্রবেশ করবেন, সেখানকার মানুষের সঙ্গে দয়ালু ও নম্র আচরণ করবেন।’অস্ত্র সমর্পণ করার পর সরকারি বাহিনীকে সাধারণ ক্ষমা করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন বিদ্রোহী গোষ্ঠী এইচটিএস প্রধান।
বার্তা সংস্থা এএফপি এবং রয়টার্স তাদের প্রতিবেদনে বলছে, বিদ্রোহীদের দামেস্ক দখল ঘোষণার মুখে অজ্ঞাত স্থানে পালিয়ে গেছেন প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ। এর মধ্য দিয়ে আসাদ পরিবারের পাঁচ দশকেরও বেশি শাসনামলের অবসান ঘটলো বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
তবে প্রেসিডেন্ট আসাদ রাজধানী থেকে পালিয়ে গেছেন বলে প্রচারিত খবর অস্বীকার করেছে দেশটির সরকার। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহামেদ আল-রহমুন রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে বলেছেন যে দামেস্কের চারপাশে একটি "অত্যন্ত শক্তিশালী সামরিক বেষ্টনী তৈরি করা হয়েছে এবং এই প্রতিরক্ষা রেখা কেউ ভেদ করতে পারবে না"।
অন্যদিকে, বিরোধীপক্ষকে সমর্থনকারী সিরিয়ান ইমার্জেন্সি টাস্ক ফোর্স -এসইটিএফ দাবি করেছে যে দামেস্কের "শীঘ্রই পতন হবে" এবং শহরটি কার্যত বেষ্টিত। তারা আরও দাবি করেছে যে ইরানি বাহিনী এবং রাশিয়ান নৌযান সিরিয়া থেকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে। এই সম্ভাব্য প্রত্যাহার দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় নিয়ে আসতে পারে।
১৩ বছর আগে আরব বসন্দের জেরে ইরাক, লিবিয়া, তিউনিশিয়া ও মিশরসহ বেশ কয়েকটি দেশে ক্ষমতার পালাবদল হয়। ওই আরব বসন্তের জের ধরে সিরিয়ার বিক্ষোভ শুরু হয়। ক্রমে তা রুপ নেয় গৃহযুদ্ধে। রাশিয়া আর ইরানের সমর্থনপুষ্ট বাশার আল আসাদ নিজের ক্ষমতা অনেকটা সংহত করে রাখতে পেরেছিলেন। তবে গত সপ্তাহ থেকে শুরু হওয়া নতুন লড়াইয়ে একের পর এক বড় বড় শহরের নিয়ন্ত্রণ হারায় সরকারী বাহিনী।
হোমস থেকে সিরিয়ান সেনাবাহিনী সরে যাওয়ার পর হাজারো বাসিন্দা রাস্তায় নেমে আসে। তারা নাচতে নাচতে স্লোগান দিতে থাকে, ‘আসাদ শেষ, হোমস মুক্ত’ এবং ‘সিরিয়া দীর্ঘজীবী হোক, বাশার আল-আসাদ নিপাত যাক।’ বিদ্রোহীরা আকাশে গুলি ছুড়ে উল্লাস প্রকাশ করে। তরুণেরা আসাদের পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে।
প্রসঙ্গত, ১৯৭০ সালে সামরিক বাহিনীর জেনারেল হাফিজ আল আসাদ সিরিয়ায় ক্ষমতা দখল করেন। পরবর্তীতে শক্ত হাতে তিন দশকের বেশি সময় সিরিয়া শাসন করেন। তিনি সিরিয়াকে ক্রমেই মুক্তবাজার অর্থনীতির দিকে নিতে থাকেন। ২০০০ সালে তার মৃত্যু হলে হাফিজ আল আসাদের কনিষ্ঠ ছেলে বাশার আল আসাদ প্রায় দু যুগ ধরে স্বৈরাচারি কায়দায় ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখেন।