দুর্নীতির নানা অভিযোগ ওঠার পরিপ্রেক্ষিতে প্রচণ্ড সমালোচনার মধ্যে পদত্যাগ করেছেন ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন লেবার মন্ত্রিসভার সদস্য টিউলিপ সিদ্দিক। যুক্তরাজ্যের সদ্য সাবেক সিটি মেয়র টিউলিপ সিদ্দিক বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানার মেয়ে এবং ব্রিটেনের লেবার পার্টির এমপি। তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার।
পদত্যাগপত্রে টিউলিপ সিদ্দিক যা লিখেছেন বায়ান্ন টিভির পাঠকদের জন্য তা হুবহু তুলে ধরা হলো।
‘প্রিয় প্রধানমন্ত্রী,
সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে আমার প্রতি যে আস্থা ও সহযোগিতা আপনি দেখিয়েছেন তার জন্য অপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমার অনুরোধে সাড়া দিয়ে মন্ত্রিত্বের মানদণ্ডবিষয়ক আপনার স্বাধীন উপদেষ্টা যে দ্রুততা ও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে কাজ করেছেন এবং আমার বর্তমান ও অতীতের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও জীবনযাপনের বন্দোবস্ত নিয়ে পুরো বৃত্তান্ত তুলে ধরার সুযোগ দিয়েছেন, সে জন্য আমি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ।
আপনি যেমনটি জেনেছেন, আমার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে পুরো বিষয়ের বিস্তারিত পর্যালোচনা করে স্যার লাউরি নিশ্চিত করেছেন যে আমি মন্ত্রিত্বের বিধি (মিনিস্ট্রিয়াল কোড) লঙ্ঘন করিনি। তিনি উল্লেখ করেছেন, এমনটি বলার কোনো প্রমাণ নেই যে আমার যে সম্পদ রয়েছে বা যেখানে আমি বসবাস করেছি, সে বিষয়ে আমি অনুচিত কিছু করেছি। তা ছাড়া আইনসিদ্ধ উপায় ব্যতীত আমার কোনো সম্পদ এসেছে, এমনটি বলার কোনো প্রমাণও নেই।
আমার পারিবারিক সম্পর্ক একটি প্রকাশ্য বিষয়। আমার মন্ত্রী হওয়ার সময় আমি আমার সম্পর্কের বিস্তারিত এবং ব্যক্তিগত স্বার্থের বিষয়গুলো সরকারের কাছে তুলে ধরেছিলাম।
কর্মকর্তাদের সঙ্গে ব্যাপকভাবে আলোচনা করার পর আমি আমার স্বার্থসংশ্লিষ্টতার ঘোষণায় এটা উল্লেখ করার পরামর্শ পেয়েছিলাম যে আমার খালা বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং স্বার্থগত দ্বন্দ্ববিষয়ক ধারণা এড়াতে বাংলাদেশ–সংশ্লিষ্ট বিষয়াবলি থেকে আমাকে সরিয়ে রাখার জন্য। আমি আপনাকে নিশ্চিত করছি যে এসব বিষয়ে পূর্ণ স্বচ্ছতার সঙ্গে এবং কর্মকর্তাদের পরামর্শ মোতাবেক কাজ করেছি এবং তা অব্যাহত রেখেছি।
তারপরও এটা স্পষ্ট যে অর্থ মন্ত্রণালয়ে ইকোনমিক সেক্রেটারি হিসেবে আমার দায়িত্ব চালিয়ে যাওয়াটা সরকারের কর্মকাণ্ড থেকে মনোযোগ ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে পারে। এই লেবার সরকার এবং সরকার জাতীয় পুনরুজ্জীবন ও রূপান্তরের যে কর্মসূচি নিয়েছে, তার প্রতি আমার আনুগত্য রয়েছে এবং সব সময় সেটা থাকবে। তাই আমার মন্ত্রিত্বের পদ থেকে আমি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
আমাকে আপনার সরকারে দায়িত্ব পালনের সুযোগ দেওয়ার জন্য আমি আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। পেছনের সারি থেকে যেভাবে পারি আপনার সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাব।
শুভ কামনা, টিউলিপ সিদ্দিক এমপি’
এদিকে, পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে টিউলিপের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও তার পদত্যাগের বিষয়ে এক বিবৃতিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার বলেছেন, স্বাধীন উপদেষ্টা হিসাবে স্যার লরি ম্যাগনাস আমাকে আশ্বস্ত করেছেন যে তিনি মন্ত্রিত্বের কোডের কোনো লঙ্ঘন খুঁজে পাননি এবং আপনার পক্ষ থেকে আর্থিক অসঙ্গতির কোনো প্রমাণ পাননি।’
কিয়ার স্টারমার আরও বলেন, ‘আমি স্বাধীন উপদেষ্টার কাছে স্ব-রেফার করার জন্য এবং তথ্য প্রতিষ্ঠার সাথে আপনার সম্পূর্ণ সহযোগিতার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমি কৃতজ্ঞ যে ব্রিটেনকে পরিবর্তন করার জন্য আমাদের এজেন্ডা প্রদান থেকে চলমান বিভ্রান্তির অবসান ঘটাতে, আপনি একটি কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এবং এটি পরিষ্কার করতে চান যে আপনার সামনে এগিয়ে যাওয়ার দরজা খোলা রয়েছে।’
প্রসঙ্গত, টিউলিপ সিদ্দিকের লন্ডনে বিনামূল্যে ফ্লাট উপহার পাওয়ার ঘটনায় ব্রিটেনের রাজনৈতিক অবস্থা বেশ কয়েকদিন ধরে রীতিমতো উত্তাল। সমালোচনার ঝড় বইছিলো পার্লামেন্টেও।টিউলিপের অভিযোগ খতিয়ে দেখার পাশাপাশি দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলো বিরোধী কনজারভেটিভ দলসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের আইন প্রণেতারা। টিউলিপকে সরিয়ে দেওয়ার সবশেষ দাবি জানায়, দুর্নীতিবিরোধী জোট-ইউকে অ্যান্টি-করাপশন কোয়ালিশন। এই জোটে রয়েছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা হিসেবে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত অক্সফাম ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল। এতে বেশ চাপের মুখে পড়েন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির নেতা কিয়ার স্টারমার। তাছাড়া, দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় টিউলিপ সিদ্দিক দলের ভেতর ও বাইরে কোনঠাসা হয়ে পড়েন।