আন্তর্জাতিক

নেপালে রাজতন্ত্র ফেরাতে আন্দোলন, কলকাঠি নাড়ছে ভারত!

বায়ান্ন আন্তর্জাতিক ডেস্ক

কাঠমান্ডুতে স্মরণকালের বৃহত্তম জনসভায় সাবেক রাজা জ্ঞানেন্দ শাহকে অভ্যর্থনা ছবি: সংগৃহীত

‘দেশে গণতন্ত্র-টনতন্ত্র দিয়ে কিছ কিছু হবে না শিগগিরিই ফেরাতে হবে আগের রাজার শাসন বিশ্বের একমাত্র হিন্দু রাষ্ট্রের তকমা আবারও ফিরে আসুক।’এমনই দাবিতে সম্প্রতি সোচ্চার হয়েছে ভারতের প্রতিবেশি দেশ নেপালের রাজতন্ত্রের সমর্থক সাধারণ জনগণ রাজধানী কাঠমান্ডুতে স্মরণকালের বৃহত্তম জনসভায় রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহকে অভ্যর্থনা জানানো হয়

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে বলা হয়, গ্যালো রোববার  নেপালের সবশেষ রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহর সমর্থকদের মিছিলে দেখা গিয়েছে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের পোস্টারও!  আর এঘটনায় পার্বত্যময় দেশটির রাজনীতিতে তুমুল বিতর্ক আর সমালোচনার ঝড় শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি ও রাজতন্ত্রের সমর্থকরা নানা অভিযোগ তুলে একে অন্যের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন

নেপালের জনগণের কাছে এখন মিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন-কেন আন্দোনকারীরা যোগী আদিত্যনাথের পোস্টার নিয়ে শামিল হয়েছিলেন আন্দোলনে? এর জবাব নিয়ে জল্পনা আর গুঞ্জনের ডালপালা বেড়েই চলছে

কানাঘুষো চলছে যোগীর পোস্টার নিয়ে আন্দোলন করার অন্যতম কারণ হলো নেপালে রাজতন্ত্র ফেরানোর আন্দোলনে পূর্ণ সমর্থন রয়েছে উত্তর প্রদেশের এই মুখ্যমন্ত্রীরযোগী আদিত্যনাথের সঙ্গে জ্ঞানেন্দ্র শাহর  মধুর সম্পর্ক থাকায় এই গুঞ্জনের ডালপালা আরও বেড়ে গেছে

 দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বলছে, ২০০৮ সালে নেপালে রাজতন্ত্রের অবসানের পরই সমালোচনায় সরব হয়েছিলেন বিজেপি নেতা যোগী আদিত্যনাথ বিজেপির এই নেতা নেপালের রাজতন্ত্রের কট্টর সমর্থক এবং রাজা জ্ঞানেন্দ্রর সমর্থনে এই বিক্ষোভ প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির দূর্বল সরকারের বিরুদ্ধে বড় ধরণের চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে  এমনটাই মনে করছেন বিশ্লেষকদের অনেকে।

সাবেক রাজা জ্ঞানেন্দ্র শাহর সঙ্গে বরাবর ভালো সম্পর্ক যোগীরএমনকী উত্তরপ্রদেশ সফরের সময় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলেন জ্ঞানেন্দ্র। ওইসব প্রসঙ্গ টেনে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলির সমর্থকরা সরব হয়েছেন। সমাবেশে যোগীর ছবি প্রদর্শনকে তারা রাজা জ্ঞানেন্দ্রর পেছনে ভারতের হাত রয়েছে বলে বর্ণনা করছেন

তবে মিছিলের আয়োজকরা ওলি সরকারের বিরুদ্ধে পাল্টা ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলেছেন। রাজতন্ত্রের সমর্থকদের দাবি, নেপালের প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মুখ্য উপদেষ্টা বিষ্ণু রিমালের নির্দেশেই এই ছবি ঢোকানো হয়েছে। আসলে আন্দোলনকে বদনাম করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

খোদ জ্ঞানেন্দ্রই দাবি করছেন, এর পিছনে রয়েছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী কেপি ওলির হাত সোশাল মিডিয়ায় এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, ‘যোগী আদিত্যনাথের ছবি ওই মিছিলে দেখানোর পিছনে রয়েছে বিষ্ণু রিমালের নির্দেশ তিনি প্রধানমন্ত্রী কেপি ওলির মুখ্য উপদেষ্টাএই দাবি অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন রিমাল

গেলো জানুয়ারি মাসে ভারত সফরে এলে যোগীর সঙ্গে সাক্ষাৎও করেন রাজা জ্ঞানেন্দ্রস্বাভাবিক ভাবেই  প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি এই আন্দোলনের দিকে পুরোদস্তুর নজরে রেখেছে নয়াদিল্লি? এই প্রতিবাদ-বিক্ষোভের পিছনে নয়াদিল্লির কূটনৈতিক অবস্থানও দেখছেন বিশ্লেষকদের অনেকেই নেপালে যতগুলি সরকার এসেছে, ক্রমে তারা ঝুঁকেছে চীনের দিকে তাই ভারতই পরোক্ষভাবে এই ধরনের আন্দোলনের পেছনে নলকাঠি নাড়ছে কিনা তা-ও উঠে এসেছে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের পোর্টে

২০০৬ সালে নেপালে দেখা গিয়েছিল বর্তমান বিক্ষোভ-মিছিলের বিপরীত ছবি ওইসময় রাজাকে ক্ষমতাচ্যুত করার দাবিতে রাজপথে ব্যাপক জন সমাবেশ হয়েছিল শেষপর্যন্ত জনগণের আন্দোলনের কাছে হার মেনে সরে যান জ্ঞানেন্দ্র বছর দুয়েক পরে ২০০৮ সাল থেকে পাকাপাকি ভাবে যতিচিহ্ন পড়ে যায় রাজতন্ত্রের উপরে  একেবারেই সাধারণ জনগণের একজন হয়ে ওঠেন নেপালের সাবেক শাহেন শাহ জ্ঞানেন্দ্র শাহ।

এরপর থেকেই রাজতন্ত্রের সমর্থক অনেকেরই  বিশ্বাস ছিল  ‘সুসময়ফিরবে তবে  ২০০৮ সাল থেকে পর্যন্ত ১৩টি সরকার দেখেছে নেপাল রাজনৈতিক স্থিরতা আসেনি বরং দুর্নীতি বেড়েছে উত্তরোত্তর অর্থনীতি ধুঁকতে শুরু করেছে দেশটিতে নেপালি জনগণের বড় অংশই এখন মনে করছেন এই অস্থিরতা থেকে বাঁচাতে পারে রাজতন্ত্রই আর তাই শুরু হয়েছে আন্দোলন আর এই  আন্দোলনে জড়িয়ে গেলেন ভারতের উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ও কট্টর হিন্দু জাতীয়তাবাদী নেতা যোগী আদিত্যনাথও

এমআর//