জাতীয়

আজ স্বাধীনতা দিবস: জাতীয় পরিচয় ও আত্মত্যাগের স্বীকৃতির দিন

বায়ান্ন প্রতিবেদক

ছবি: সংগৃহীত

আজ ২৬ মার্চ বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবস ২৬ মার্চ আমাদের জাতীয় পরিচয়ের প্রতীক স্মরণ করিয়ে দেয় আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রামের গৌরবময় অধ্যায়কে এ দিনটি আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মত্যাগ ও সাধারণ জনগণের সাহসী ভূমিকার স্বীকৃতি প্রদান করে। স্মরণীয় এদিনটি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণার উৎসজাগ্রত করে জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেমকে ।

১৯৪৭ সালে ভারত বিভক্ত হওয়ার পর পাকিস্তান নামে একটি নতুন রাষ্ট্রের সৃষ্টি হয় যার দুটি অংশ ছিল পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) এবং পশ্চিম পাকিস্তান (বর্তমান পাকিস্তান)। তবে ভাষা, সংস্কৃতি ও অর্থনৈতিক দিক থেকে ভিন্ন পূর্ব পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠীর অবিচারের শিকার হতে থাকে। পূর্ব পাকিস্তানের মানুষকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিকভাবে শোষণ করতে থাকে।

এরই ধারাবাহিকতায় পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণের প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে ওঠে ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করলেও পশ্চিম পাকিস্তানিরা ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখে ১৯৬৬ সালে ঐতিহাসিক ছয় দফা ঘোষণা এবং সবশেষ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজয়ী হলেও পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আওয়ামী লীগের কাছে দেশ শাসনভার হস্তান্তর করেনি প্রতিবাদে ফুঁসে ওঠে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পূর্বপাকিস্তানের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ঐতিহাসিক ভাষণ দেনযে ভাষন হয়ে উঠে বাঙালির মুক্তির সনদ কিছুদিন পর ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনারা অপারেশন সার্চলাইটনামক অভিযানে ঢাকায় গণহত্যা শুরু করেহত্যা করা হয় হাজার হাজার নিরপরাধ মানুষকে। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে গ্রেফতার করা হয় শেখ মুজিবুর রহমানকে। তবে গ্রেপ্তারের আগেই শেখ মুজিব স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে বিশ্বনেতাদের কাছে সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসার আহবান জানান

পরদিন চট্টগ্র্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন তৎকালীন বাঙালি সেনা কর্মকর্তা মেজর জিয়াউর রহমান শুরু হয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ 

স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

রাষ্ট্রপতির বাণী: রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার বাণীতে বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণার মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে। এরপর দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হয়। আমি সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করছি মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদদের, যাদের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা।’

রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সুসংহত করতে হবে। রাষ্ট্র ও সমাজের সব ক্ষেত্রে সাম্য, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে তরুণ প্রজন্ম আমাদের স্বাধীনতার অপূর্ণ স্বপ্নগুলো পূরণে আবারও বুকের তাজা রক্ত দিয়ে গেছে। নতুন প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ, সুখী, সুন্দর ও উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা আমাদের পবিত্র কর্তব্য।’

বৈষম্যমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, ‘তাই আসুন, স্বাধীনতার লক্ষ্য বাস্তবায়নে একটি বৈষম্য ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে আরও বেশি অবদান রাখি। দেশ ও জাতিকে উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে আরও এগিয়ে নিয়ে যাই, বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াক এক নতুন বাংলাদেশ-মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে এই আমার প্রত্যাশা।’

প্রধান উপদেষ্টার বাণী:  মহান স্বাধীনতা দিবসে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। মুহাম্মদ ইউনূস তার বাণীতে বলেন, ‘আজ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস। এ উপলক্ষে  দেশে ও প্রবাসে বসবাসরত সব বাংলাদেশিকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাই।’

তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতা অর্জন ছিল আমাদের আত্মমর্যাদা, অস্তিত্ব রক্ষা এবং অধিকার আদায়ের দীর্ঘ লড়াই সংগ্রামের চূড়ান্ত ধাপ। যে রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়ায়, তার আনুষ্ঠানিক সূচনা হয়েছিল আজকের এই দিনে। আমি সশ্রদ্ধচিত্তে স্মরণ করি মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী বীর শহীদদের, যাদের সর্বোচ্চ ত্যাগের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘গত ১৬ বছর দেশের মানুষ এই স্বাধীনতার সুফল ভোগ করতে পারেনি। স্বৈরাচারী শাসক জগদ্দল পাথরের মতো জনগণের ঘাড়ে চেপে বসে তাদের স্বাধীনতা ও মৌলিক সব অধিকার কেড়ে নিয়েছিল। ছাত্র-শ্রমিক-জনতার সফল গণ-অভ্যুত্থান দেশের মানুষকে স্বৈরাচারের রাহুগ্রাস থেকে মুক্ত করেছে।’

‘অন্তর্বর্তী সরকার দেশকে আরও উন্নত ও শক্তিশালী করতে এবং স্বাধীনতার পূর্ণ সুফল জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে বদ্ধপরিকর। রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সংস্কারের মাধ্যমে সুশাসন ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, জনমুখী ও টেকসই উন্নয়ন এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’

কর্মসূচি: ৫৫তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয়  দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় উদযাপনের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, সূর্যোদয়ের সময় রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাদের সাথে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর, বিদেশি কূটনীতিক, রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ অন্যান্য শ্রেণির মানুষ শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

এছাড়া, দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার স্মৃতিসৌধেও পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। জাতীয় পতাকা উত্তোলন, জাতীয় সংগীত পরিবেশন, এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীদের সমাবেশ ও কুচকাওয়াজও অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিকদল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন করবে। 

এমআর//

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন স্বাধীনতা দিবস