লাইফস্টাইল

বয়স বাড়ার আগেই বাড়ছে মৃত্যুঝুঁকি!

লাইফস্টাইল ডেস্ক

দিনের বড় একটা সময় কাটে ডেস্কে বসে। চোখ একদিকে কম্পিউটার স্ক্রিন, হাতে কফি আর মুখে স্ন্যাকস।  সময় না থাকায় ব্যায়াম হয় না, পানি খাওয়ার কথাও ভুলে যাই।  অথচ এমনই কিছু দৈনন্দিন অভ্যাস আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কিডনিকে ধীরে ধীরে দুর্বল করে দিচ্ছে।

বাংলাদেশে প্রতি ৭ জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ১ জন কোনও না কোনও পর্যায়ে কিডনি সমস্যায় আক্রান্ত।  চিকিৎসকরা মনে করে, যখন বোঝার মতো উপসর্গ দেখা দেয়, তখনই কিডনি প্রায় ৭০-৮০% ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে গেছে।

চলুন জেনে নেওয়া যাক প্রতিদিনের তিনটি সাধারণ অভ্যাস কিভাবে ভয়ঙ্করভাবে কিডনিকে ধ্বংস করছে এবং সেগুলো আমরা কিভাবে রোধ করতে পারি।

অতিরিক্ত লবণ খাওয়া: 

লবণ মানেই সোডিয়াম, যা আমাদের শরীরের ইলেক্ট্রোলাইট ব্যাল্যান্স এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।  কিন্তু এই প্রয়োজনীয় উপাদানটি অতিরিক্ত হলেই ঘটতে পারে বড় বিপর্যয়।  সোডিয়ামের অতিরিক্ত মাত্রা কিডনিকে পানির ভারসাম্য রাখতে বাধা দেয়, ফলে কিডনি স্টোন, হাই ব্লাড প্রেসার এবং কিডনি ফেইলিউরের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

গবেষণায় দেখা গেছে, যারা দিনে ৫ গ্রাম বা তার বেশি লবণ খান, তাদের মধ্যে কিডনির জীর্ণ রোগ (CKD) হওয়ার আশঙ্কা দ্বিগুণ বেশি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, দিনে ১.৫ চা চামচের বেশি লবণ নয় (৩৪০০ মিগ্রা সোডিয়াম)।  অথচ শহুরে বাংলাদেশিদের একটি বড় অংশ গড়ে এর দ্বিগুণ লবণ গ্রহণ করে। 

চিনিযুক্ত পানীয়: 

এক গ্লাস ঠাণ্ডা কোমল পানীয় গরমে স্বস্তি দেয় ঠিকই কিন্তু এই স্বস্তির দাম কিডনি দিয়ে দিতে হতে পারে।  চিনিযুক্ত পানীয় কিডনিতে ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধি করে, ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স তৈরি করে এবং ফিল্টারেশন কমিয়ে দেয়, যা কিডনি স্টোন এবং ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথির সম্ভাবনা বাড়ায়।

সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে ২ গ্লাস বা তার বেশি চিনি মেশানো কোমল পানীয় পান করলে কিডনির কার্যক্ষমতা মাত্র ৫ বছরে ২০% কমে যেতে পারে ।

ব্যথানাশক ওষুধের প্রতি নির্ভরতা: 

মাথা ব্যথা, কোমর ব্যথা, দাঁতের ব্যথায় চট করে ব্যথানাশক গিলে নেওয়াটা এখন অনেকের ‘মেডিকেল রিফ্লেক্স’ হয়ে গেছে। কিন্তু কি জানেন, নিয়মিত বা মাত্রাতিরিক্ত NSAID গ্রুপের ওষুধ (যেমন ডাইক্লোফেনাক, ন্যাপ্রোক্সেন, আইবুপ্রোফেন) কিডনির রক্তসঞ্চালন ব্যাহত করে, ফলে ধীরে ধীরে নেফ্রন ধ্বংস হয়, যা কিডনির কাজের মৌলিক ইউনিট। 

২০১৯ সালের একটি আন্তর্জাতিক গবেষণায় বলা হয়, প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ২ কোটি মানুষ ওষুধ সংশ্লিষ্ট কিডনি সমস্যায় আক্রান্ত হন, যার একটি বিশাল অংশের পেছনে দায়ী অপ্রয়োজনীয় ব্যথানাশক সেবন।

মনে রাখা জরুরি : 

রান্নায় পরিমিত লবণ, কাঁচা লবণ না খাওয়া, ফাস্ট ফুড ও প্রক্রিয়াজাত খাবার (প্যাকেট চিপস, ইনস্ট্যান্ট নুডলস) এড়িয়ে চলা জরুরি।

ব্যথার প্রকৃতি বুঝে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যথানাশক সেবন এড়িয়ে চলুন। পারলে ব্যায়াম, পর্যাপ্ত পানি পান ও ঘুমের মাধ্যমে ব্যথা নিয়ন্ত্রণে আনুন।

মিষ্টি পানীয় পিপাসা নিবারণের পরিবর্তে আরও তৃষ্ণা বাড়ায় এর পরিবর্তে খান পানি, ডাবের পানি, গ্রিন টি, হারবাল চা।

মিষ্টি খেতে ইচ্ছা হলে ফল খান যেখানে প্রাকৃতিক চিনি থাকলেও ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্টও থাকে।

কিডনি বিপদে রয়েছে এর লক্ষণগুলো হলো : 

প্রস্রাবের রঙ গাঢ় বা ফেনিল 

চোখের নিচে ফোলা

ঘনঘন প্রস্রাবের প্রয়োজন

বারবার ক্লান্তি, মনোযোগ কমে যাওয়া 

পায়ে বা গোড়ালিতে পানি জমা

কিডনি রোগ একবার স্থায়ী হলে তার চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি, ব্যয়বহুল এবং কষ্টসাধ্য।  তবে কিছু সাধারণ অভ্যাসে পরিবর্তন আনলেই কিডনিকে সুস্থ রাখা সম্ভব।

এসকে// 

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন মৃত্যুঝুঁকি | কিডনি