অপরাধ

টিকটকের জন্য ফটোগ্রাফারকে খুন করে ক্যামেরা ছিনতাই, গ্রেপ্তার ১০

টিকটক করতে ভালো ক্যামেরা দরকার। আর এ জন্য পরিকল্পিতভাবে ফটোগ্রাফার নুরুল ইসলামকে ডেকে নিয়ে খুন করে ক্যামেরা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। রাজধানীর মোহাম্মাদপুর ফটোগ্রাফার জাফরাবাদ পুলপাড় এলাকায় সংঘটিত এ ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে হাজারীবাগ থানা পুলিশ।

মঙ্গলবার (২০ মে ) ঢাকা ও ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেয়া তথ্য মতে ছিনতাইকৃত দুটি ডিএসএলআর ক্যামেরা এবং হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত একটি চাপাতি, একটি রামদা ও একটি বড় ছোরা উদ্ধার করা হয়। এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে হাজারীবাগ থানা পুলিশ।

পুলিশ জানিয়েছে,  নিহত নুরুল ইসলাম (২৬) “Nurislam Photographer” নামে একটি ফেসবুক পেইজ পরিচালনা করে বিভিন্ন ইভেন্টে ফটোগ্রাফির কাজ করতেন। গেল ১৫ মে অজ্ঞাত মোবাইল নম্বর থেকে নূরুল ইসলামের মোবাইলে কল আসে। ওই ব্যাক্তি একটি বিয়ের ইভেন্টে ছবি তোলার জন্য তাকে বুকিং দিয়ে ৫০০ টাকা বিকাশের মাধ্যমে অগ্রিম পাঠায়।

পরের দিন (১৬ মে ) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তাকে একই নম্বর থেকে ফোন করে শংকর চৌরাস্তায় অপেক্ষা করতে বলে।  নূরুল ইসলাম তার সহযোগী মোঃ ইমন ওরফে নুরে আলমসহ মতিঝিলের এজিবি কলোনীর বাসা হতে বের হয়ে সেই অজ্ঞাত ব্যক্তির কথা মতো শংকর বাসস্ট্যান্ডে তাদের সাথে দেখা করে। পরে ওই ব্যাক্তি তাদেরকে একটি অটোরিকশাযোগে জাফরাবাদ পুলপার ব্লুমিং চাইল্ড স্কুলের কাছে বিয়ের অনুষ্ঠানের উদ্দেশে রওনা করে। রাত আনুমানিক ৮টার দিকে জাফরাবাদ পুলপার ঋষিপাড়া এলাকায় যায়।

তখন অজ্ঞাত দুষ্কৃতকারীরা তাদের রিকশার গতিরোধ করে। ঘটনার আকস্মিকতায় ইমন রিকশা থেকে লাফিয়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু দুষ্কৃতকারীরা নুরুল ইসলামকে ধরে ফেলে। তারা ধারালো চাপাতি দিয়ে নুরুল ইসলামের মাথা, ঘাড়, বাহু ও হাতের আঙ্গুলে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে গুরুতর জখম করে তার কাছে থাকা দুটি ডিএসএলআর ক্যামেরাসহ ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। নুরুল ইসলামের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে দুষ্কৃতকারীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে নূরুলকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় নূরুল ইসলামের বড় ভাই মোঃ ওসমান গনি বাদী হয়ে হাজারীবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

 পুলিশ ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় হত্যাকান্ডে জড়িতদের চিহ্নিত করে। এরপর মঙ্গলবার ধারাবাহিক সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে রাজধানীর শংকর ও রায়েরবাজার এবং ময়মনসিংহের ধোবাউড়া ও তারাকান্দা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

 

হাজারীবাগ থানা আরও জানায়, গ্রেপ্তারকৃতদের বয়স ১৮-২০ বছর। তারা টিকটকে বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও তৈরি করে পোস্ট করতো। উন্নতমানের ও আকর্ষণীয় ছবি ও ভিডিও করার জন্য ডিএসএলআর ক্যামেরা সংগ্রহের পরিকল্পনা করে তারা। ঘটনার এক সপ্তাহ আগে রায়েরবাজার বুদ্ধিজীবী খেলার মাঠে ফুটবল খেলার পর নাঈম আহম্মেদের নেতৃত্বে ক্যামেরা ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হয়। তারা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টের নাম করে ফটোগ্রাফারদের কাছ থেকে কৌশলে ক্যামেরা ছিনতাইয়ের সিদ্ধান্ত নেয়।

 পুলিশ আরও জানায়, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় গ্রেফতারকৃত নাঈম শংকর বাসস্ট্যান্ডে নূরুল ইসলাম ও তার সহযোগী ইমনের সাথে দেখা করে। নাঈম তাদেরকে একটি অটোরিকশাযোগে জাফরাবাদ পুলপার ব্লুমিং চাইল্ড স্কুলের কাছে বিয়ের অনুষ্ঠানের কথা বলে নিয়ে যায়। পরে জাফরাবাদ পুলপার ঋষিপাড়া ক্ষণিকালয়নামক বাসার গেইটের সামনে অটোরিকশাটি পৌঁছলে গ্রেফতারকৃত নাঈম, শাহীন, শাহীনুল, রহিম, নয়ন, রিদয়, রাজ্জাক, আনোয়ার, শহিদুল ও আরমান অটোরিকশার গতিরোধ করে নূর ইসলামের কাছ থেকে ডিএসএলআর ক্যামেরা ও ব্যাগ ছিনতাইয়ের চেষ্টা করে। ক্যামেরা না দিতে চাইলে তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে নূরুল ইসলামের শরীরে এলোপাতাড়ি আঘাত করে এবং ক্যামেরাসহ ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন,   মোঃ নাঈম আহম্মেদ (২০), মোঃ শাহীন অকন্দ ওরফে শাহিনুল (২০)মোঃ শাহীন চৌকিদার (২২)মোঃ রহিম সরকার (১৯)মোঃ নয়ন আহম্মেদ (১৯), রিদয় মাদবর (১৮), মোঃ আব্দুর রাজ্জাক ওরফে রাজা (১৯), মোঃ আনোয়ার হোসেন (১৯), মোঃ শহিদুল ইসলাম (২০)মোঃ আরমান (১৮)।

 আই/এ

 

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন #ফটোগ্রাফার #জাফরাবাদ পুলপাড়