সাবেক নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন,‘আমি স্বীকার করছি, আমি ডামি নির্বাচন করেছি। রাজনৈতিক সমঝোতার অভাবে একতরফা নির্বাচন হয়েছে। তবে এখানে আমাকে পয়সা দেওয়ার কোনও প্রশ্ন আসেনি। আমার জীবনে আমি অর্থ আত্মসাৎ বা দুর্নীতি করিনি।’
বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোস্তাফিজুর রহমানের আদালতে রিমান্ড শুনানিকালে তিনি এসব কথা বলেন।
সাবেক সিইসি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে। এটা রাষ্ট্রীয় নির্বাচন কাঠামোর সমস্যা। কিন্তু সংবিধান ও আইনের পরিপন্থি কোনও কাজ করিনি। দেশের নির্বাচনি কাঠামো সংশোধন না করলে এক হাজার বছরেও নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না।’
নিজেকে আর্থিকভাবে সৎ দাবি করার প্রেক্ষিতে বিচারক বলেন, ‘প্রত্যেক জেলায় নির্বাচনি তদন্ত কমিটি করা হয়। যেখানে একজন যুগ্ম জেলা জজ পদমর্যাদার কর্মকর্তা দায়িত্বে থাকেন। আগে যার ভাতা ছিল ২২ হাজার টাকা, সেটা আপনি ৫ লাখে উন্নীত করেছেন। এতে কি জনগণের টাকা অপচয় হয়নি?
জবাবে কাজী হাবিবুল আউয়াল জানান,বিষয়টি তার জানা নেই। পাঁচ বছরের মুদ্রাস্ফীতি হিসাব করে হয়তো ভাতা বাড়ানো হয়েছিলো।
এরপর বিচারক আবারও বলেন, ‘এই যে তদন্ত কমিটি করা হয়েছিল নির্বাচনের সময়, কোথাও কি তারা সরেজমিন গিয়েছিলেন?
জবাবে সাবেক সিইসি বলেন, ‘একজন রিটার্নিং অফিসারের অধীনে ৪-৫টা সংসদীয় আসনের দায়িত্ব দেওয়া হয়। তাকে সহযোগিতা করতে আরও ৪-৫ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট রিটার্নিং অফিসার থাকেন। একটা নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করার জন্য দুই ভাগ দায়িত্ব কমিশনের, বাকি ৯৮ ভাগ দায়িত্ব মাঠ পর্যায়ে কাজ করা অফিসারদের।’
নির্বাচনের আগে এমন অবস্থা জেনে আপনি পদত্যাগ করলেন না কেন? বিচারকের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘ওই অবস্থায় পদত্যাগ করা সম্ভব ছিল না। আমার এক বন্ধুও আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল পদত্যাগের কথা। আমি বলেছি, তুমি যদি আগে বলতা এমন ভয়ংকর নির্বাচন হবে, তাহলে আমি দায়িত্বই নিতাম না।’
বিগত সময়ের নির্বাচনের কথা তুলে ধরে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘বাহাত্তরের সংবিধান প্রণয়নের তিন মাসের মাথায় অনুষ্ঠিত ৭৩-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৯৩টি আসন পেয়েছিল। সেই নির্বাচনও সুষ্ঠু ছিল না। ক্ষমতার লোভ এমন যে শেখ মুজিবও তা সামলাতে পারেননি। শেখ মুজিবের মতো নেতা নির্বাচনে কারচুপি করেছেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করে। পরবর্তীকালে তারাই আবার দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে সংবিধান সংশোধন করে।’
আই/এ