আর্কাইভ থেকে এশিয়া

সিরিয়ায় টানা চতুর্থ মেয়াদে জয়ী প্রেসিডেন্ট বাশার

সিরিয়ায় টানা চতুর্থ মেয়াদে জয়ী প্রেসিডেন্ট বাশার

সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে টানা চতুর্থ মেয়াদে জয়ী হয়েছেন বাশার আল-আসাদ। বৃহস্পতিবার কমিশন জানায়, ৯৫ দশমিক ১ শতাংশ ভোট পেয়েছেন তিনি। তবে এই নির্বাচনকে প্রহসন আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করেছে বাশারবিরোধীরা।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, সিরিয়ায় পার্লামেন্ট স্পিকার হাম্মুদা সাব্বাগ লাইভ কনফারেন্সে নির্বাচনের ফল ঘোষণা করেছেন। এতে দেখা যায়, বুধবারের নির্বাচনে ৯৫ দশমিক ১ শতাংশ ভোট পেয়েছেন বাশার। তাঁর দুই প্রতিদ্বন্দ্বী মাহমুদ আহমেদ মারি ও আব্দুল্লাহ সালৌম আবদুল্লাহ পেয়েছেন যথাক্রমে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ ও ১.৫ শতাংশ ভোট। নির্বাচনে ৭৮ দশমিক ৬ শতাংশ ভোট পড়েছে।

সিরিয়ায় এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন মূলত সরকার-নিয়ন্ত্রিত এলাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। একইসঙ্গে বিদেশে কয়েকটি সিরীয় দূতাবাসে ভোটগ্রহণ করা হয়েছে। নির্বাচনের বিরুদ্ধে বড় ধরনের প্রতিবাদ হয়েছে বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত ইদলিব প্রদেশে।

এই নির্বাচনকে প্রহসনের নির্বাচন বলে আখ্যায়িত করেছে সিরিয়ার নির্বাসিত বিরোধী নেতারা। নির্বাচনকে সিরীয় জনগণের অবমাননা হিসেবে উল্লেখ করেছেন সিরিয়ান নেগোসিয়েশন কমিশনের মুখপাত্র ইয়াহইয়া আল আরিদি। তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করতে রাশিয়া ও ইরানের সহযোগিতায় এটি সরকারি একটি সিদ্ধান্ত। এর মধ্য দিয়ে স্বৈরতন্ত্রকেই চালু রাখা হয়েছে।

নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু ছিল না বলেছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোও। এক বিবৃতিতে সিরিয়ার নির্বাচনকে অবৈধ উল্লেখ করেছে ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। নির্বাচনের আগে দেওয়া বিবৃতিতে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধান ছাড়া এটি অবাধও নয়, সুষ্ঠুও নয় বলে জানান তারা। বিবৃতিতে আরো বলা হয়, সুশীল সমাজ, সংগঠন, বিরোধী দলসহ সিরীয় জনগণ যারা এই নির্বাচন প্রক্রিয়াকে অবৈধ বলছেন তাদের সমর্থন করি।

সিরিয়ার সংবিধান অনুযায়ী, একজন নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট সাত বছরের জন্য দেশ পরিচালনা করতে পারেন। ২০০০ সালে বাবার মৃত্যুর পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রথম সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন পঞ্চান্ন বছর বয়সী বাশার আল আসাদ। এর আগে প্রায় পঁচিশ বছর সিরিয়া শাসন করেছেন বাবা হাফেজ আল-আসাদ।

গেল বুধবার ভোট দেওয়ার পর পশ্চিমাদের সমালোচনা করেন সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার। তিনি বলেন, পশ্চিমাদের মতামত শূন্য হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

২০১১ সালে আরব বসন্তের জেরে বাশারবিরোধী বিক্ষোভ শুরু হয় সিরিয়ায়। গণতন্ত্রপন্থিদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচিতে রক্তক্ষয়ী নিপীড়ন চালায় সরকারি বাহিনী। দেশটিতে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। এক দশকের গৃহযুদ্ধে এখন বিপর্যস্ত সিরিয়া। এতে নিহত হয়েছে অন্তত তিন লাখ ৮৮ হাজার জন। দেশটির প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠী বাস্তুচ্যুত। এর মধ্যে প্রায় ৬০ লাখ বিদেশে শরণার্থী শিবিরে বসবাস করছে।

২০১৪ সালে সিরিয়াজুড়ে গৃহযুদ্ধের মধ্যে সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই নির্বাচন বর্জন করেছিল বিরোধীরা। এরপর থেকেই যুদ্ধ পরিস্থিতি বাশারের অনুকূলে যেতে থাকে। রুশ বিমান হামলা আর ইরানের সামরিক সহযোগিতায় বড় শহরগুলোতে আবারও কর্তৃত্ব স্থাপন করে সরকারি বাহিনী।

তবে সিরিয়ার বড় একটি অংশ এখনও বিদ্রোহী, জিহাদি ও কুর্দি নেতৃত্বাধীন বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দেশটিতে এখনও দেখা যাচ্ছে না সংঘাতের রাজনৈতিক সমাধানসূত্র।

 

এসএন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন সিরিয়ায় | টানা | চতুর্থ | মেয়াদে | জয়ী | প্রেসিডেন্ট | বাশার