কুড়িগ্রামে চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুকুল থাকায় ফুলকপি ও বাঁধাকপির বাম্পার ফলন হয়েছে। এদিকে ভাল ফলনের পাশাপশি ভাল দাম পাওয়ায় কৃষক-কৃষানীদের মুখে হাসি ফুটেছে। প্রতি বছর প্রান্তিক চাষিরা ভাল দামের আশায় আগাম হাইব্রিট জাতের ফুলকপি ও বাঁধাকটি চাষ করে আসছেন।
শীত মৌসুমে আগাম ফুলকপি ও বাঁধাকপিসহ বিভিন্ন সবজির চাষে নানা মুখি ঝুঁকি থাকা সত্বেও অক্লান্ত পরিশ্রম করে পরিবার-পরিজনদের নিয়ে সাফল্যের সাথে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন কৃষক পরিবারগুলো।
জেলার ফুলবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, চলতি মৌসুমে কোন জমি আর পতিত নেই। বিস্তৃর্ণ জমিতে এখন শোভা পাচ্ছে সবুজের সমাহার। বিশেষ করে উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের গোরকমন্ডল কুটিবাড়ী ও কৃষ্ণনন্দ বকসী এলাকায় শত শত কৃষক পতিত জমিতে আগাম জাতের কেউ ফুলকপি আবার কেউ বাঁধাকপি চাষ করেছেন। এরই মধ্যে কৃষক ক্ষেতের ফুলকপি বিক্রি করা শুরু করেছেন।
আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই স্বপ্নের ফসল ফুলকপি ও বাঁধাকপি ব্যাপক হারে বিক্রি করতে পারবেন চাষিরা। যে সকল চাষির অন্যের জমি লিজ নিয়ে আগাম হাইব্রিট জাতের ফুলকপি-বাঁধাকপি চাষ করেছেন তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে খেতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। সাধারণত সারা বছর আগাম জাতের ফুলকপি ও বাঁধাকপিসহ বিভিন্ন ধরণের সবজির চাষাবাদ করে শতশত কৃষক পরিবার এখন স্বাবলম্বী হয়েছেন।
ফুলবাড়ী উপজেলার কৃষ্ণানন্দ বকসি এলাকার কৃষক কেতারুল ও আফছার আলী জানান, তারা প্রত্যেকেই ২ বিঘা জমিতে আগাম জাতের ফুলকপি আবার কেউ বাঁধাকপির চাষ করেছেন। কৃষক আফছার আলীর বাঁধাকপি বিক্রি করতে আরও ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগবে। তবে কৃষক কেতারুল গেলো এক সপ্তাহ ধরে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা দরে প্রতিমন ফুলকপি বিক্রি করছেন। ফুলকপির বাজারে ভালো দাম থাকলে তিনি ১ বিঘা জমিতে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা বিক্রি করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন।
কৃষক মজনু মিয়া জানান, এ বছর তিনি ৪ বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করেছেন। আবহাওয়া অনুকুল থাকায় বাম্পার ফলন হয়েছে। আগামী দেড় সপ্তাহের মধ্যেই ক্ষেতের কপি বিক্রি করতে পারবেন। চার বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করতে খরচ হয়েছে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার টাকা। বর্তমান বাজারে দাম ভালো থাকলে বিঘা প্রতি ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা আয় করা সম্ভব।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিপ্লব কুমার মোহন্ত, এ অ লে ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে আমন ধান নুয়ে পড়লেও সবজিতে তেমন ক্ষতি হয়নি। আবহাওয়া অনুকুল থাকায় কৃষকরা কৃষি বিভাগের পরামর্শে আগাম হাইব্রিট জাতের ফুলকপি চাষ করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা সৃষ্টি করেছেন। চলতি মৌসুমে চাষিরা আগাম ১৬৫ হেক্টর জমিতে ফুলকপি ও ১৪৫ হেক্টর জমিতে বাঁধাকপির চাষবাদ করেছে। এখনও ফুলকপি ও বাধাকপি রোপন চলমান আছে। অধিকাংশ কৃষক ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি শুরু করেছেন। কয়েকদিন কৃষকরা উৎপাদিত ফুলকপি ও বাঁধাকপি ব্যাপক হারে বিক্রি শুরু করবেন। বর্তমান ফুলকপির বাজার দর প্রতি মন ১ হাজার ৬০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা বিক্রি করায় চাষিরা লাভবান হচ্ছে।