বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী ফারদিন নূর পরশ (২৪) হত্যা মামলা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ফারদিন গেলো ৪ নভেম্বর নিখোঁজ হন। ৫ নভেম্বর তার বাবা রামপুরা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এর পর থেকেই তারা ছায়া তদন্ত শুরু করেন। গেলো ৭ নভেম্বর তার মরদেহ শীতলক্ষ্যা নদী থেকে উদ্ধারের দুদিন পর গতকাল রাতে তার বাবা বাদী হয়ে রামপুরা থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন। মামলায় বুশরা নামে এক শিক্ষার্থীকে আসামি করা হয়েছে। তিনি ফারদিনের বান্ধবী। তাকে এর আগেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মামলা হওয়ার পর বুশরাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে তাকে।
আরও পড়ুন :
ফারদিন হত্যায় বান্ধবী বুশরা রিমান্ডে
তিনি আরও বলেন, এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে পারিবারিক, সামাজিক কোনো ঝামেলা ছিল কি না, এ ব্যপারে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ যাচাই-বাছাই চলছে। ঘটনাটি কীভাবে ঘটেছে, সে সম্পর্কে এখনই বলা সম্ভব হচ্ছে না। দু-তিনটি টিম কাজ করছে প্রতিদিন। আরও পারিপার্শ্বিক বিষয় মাথায় রেখে তদন্ত করা হচ্ছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১০ নভেম্বর) সকালে ফারদিনের বাবা নূর উদ্দিন রানার করা মামলায় রাজধানীর রামপুরা এলাকার একটি বাসা থেকে ফরাদিনের বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরাকে গ্রেপ্তার করে আদালতে হাজির করে পুলিশ। এরপর মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তাকে সাতদিনের রিমান্ডে নিতে আবেদন করে রামপুরা থানা পুলিশ। শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান বুশরার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
প্রসঙ্গত, নিখোঁজের তিন দিন পর নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদী থেকে ফারদিনের মরদেহ উদ্ধার করে নৌ পুলিশ। সোমবার (৭ নভেম্বর) রাতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন বনানী ঘাট সংলগ্ন লক্ষ্মী নারায়ণ কটন মিলের পেছনে শীতলক্ষ্যা নদীতে পরশের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
আরও পড়ুন:
ফারদিন হত্যার প্রধান আসামি বান্ধবী বুশরা গ্রেপ্তার
ফারদিন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিবেটিং ক্লাবেরও যুগ্ম-সম্পাদক ছিলেন তিনি। তিন ভাইয়ের মধ্যে ফারদিন সবার বড়।
নারায়ণগঞ্জ সদর জেনারেল (ভিক্টোরিয়া) হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) শেখ ফরহাদ গণমাধ্যমকে বলেন, ময়নাতদন্তে আমরা দেখতে পেয়েছি, তার মাথায় এবং বুকে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে সেই আঘাত কোনো ধারালো অস্ত্রের নয়। আঘাতের চিহ্ন দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে এটি হত্যাকাণ্ড। পুলিশের চাহিদা ও অধিকতর তথ্যের জন্য তথ্য উপাত্ত ও আলামত মহাখালি ভিসিআরে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে প্রতিবেদন পেলে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়া যাবে তাকে কীভাবে মারা হয়েছে।
আরও পড়ুন:
বুয়েট ছাত্র ফারদিন হত্যার ঘটনায় মামলা, বান্ধবী বুশরাও আসামি
ফারদিনের বাবা কাজী নুর উদ্দিন রানা ৮ নভেম্বর বলেছিলেন, দেশের তিনটি শীর্ষ বিদ্যাপিঠে সুযোগ পাওয়ার পর সে বুয়েটে ভর্তি হয়। তবে আবাসিক হলের পরিস্থিতি বিবেচনা করে সে হলে যেতে চায়নি। ফারদিন বাসায় থেকেই তার পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছিল। তিনি প্রধানমন্ত্রীর মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রশাসনের সর্বোচ্চ মহলে জড়িতদের দ্রুত সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানান।