আর্কাইভ থেকে দেশজুড়ে

মুমূর্ষু অবস্থায় মা এবং দুই যমজ মেয়ে শিশুকে উদ্ধার

মুমূর্ষু অবস্থায় মা এবং দুই যমজ মেয়ে শিশুকে উদ্ধার
রাজধানী উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের ১৩ নম্বর সড়কের একটি বাড়ি থেকে মুমূর্ষু অবস্থায় মা এবং দুই যমজ মেয়ে শিশুকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। শাফানা আফিফা শ্যামী নামে ও নারীর বয়স ৩৫। তার দুই সন্তানের নাম ফাতেমা এবং আয়েশা। তাদের বয়স ১০ বছর। ২৮ নম্বর বাড়ির ২/ বি ফ্ল্যাট থেকে তাদের উদ্ধার করে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। গেল শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারী ) রাত ৩টার দিকে পুলিশ গিয়ে দরজা ভাঙে। তখন ঘুটঘুটে অন্ধকার ওই ফ্ল্যাটে বিদ্যুৎ সংযোগ ছিলোনা। তিনটি খাট ছাড়া নেই কোনো আসবাবপত্রও নেই। ফ্রিজ-টিভি কিছু নেই। এক কক্ষে দেখা গেল ফুটফুটে দুই শিশু ফাতেমা ও আয়েশাকে। তাদের এলোমেলো জটলা বাঁধা চুল। দু'জনই নিস্তেজ। আরেক কক্ষের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ ছিলো। সেই ঘরের দরজা ভেঙে পুলিশ ভেতরে গিয়ে দেখে বিছানায় অচেতন অবস্থায় পড়ে আছেন শাফানা। দেরী না করে তিনজনকেই কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। স্থানীয়রা গণমাধ্যমকে জানান,  তিন দিন ধরে ওই ফ্ল্যাটের কেউ বাসার বাইরে বের হয়নি।  এতে নিরাপত্তারক্ষীর মনে সন্দেহ জাগলে কলিং বেল বাজিয়েও কোনো সাড়া-শব্দ পাননি। পরে শনিবার মধ্যরাতে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়া হয়। চিকিৎসক জানিয়েছেন, দীর্ঘ সময় অনাহারে থাকায় তাদের এ অবস্থা হয়েছে। ওই নারীও জানিয়েছেন, তিন দিন বাসায় কোনো রান্না হয়নি। বিল পরিশোধ করতে না পারায় কয়েক দিন আগে ফ্ল্যাটের বিদ্যুৎ লাইন কেটে দেওয়া হয়। উত্তরা থানার পরিদর্শক মুজাহিদ জানান, নাদিম নামে শাফানার এক ভাই খুলনায় থাকেন। তিনি বলেন, বছরখানেক আগে সর্বশেষ বোনের সঙ্গে কথা হয়েছিল। অন্য ভাইদের বিষয়টি জানিয়েছেন।
উত্তরার মুমূর্ষ মা,মেয়ে
উত্তরার মুমূর্ষ মা,মেয়ে
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শাফানার এক স্বজন জানান, শাফানার বাবার নাম অ্যাডভোকেট আবদুল আলিম বুলবুল।  তিনি তিন বছর আগে মারা গেছেন। তাদের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীর হাতিয়ায়। উত্তরার ওই বাড়িটি শাফানার বাবার। শাফানার দাদা মাওলানা আবদুল হাই আইয়ুব খানের আমলে এমএলএ ছিলেন। উত্তরার জমি শাফানার বাবা একটি ডেভেলপার কোম্পানিকে বহুতল ভবন তৈরি করতে দেন। যে ফ্ল্যাট থেকে তাদেরকে উদ্ধার করা হয়েছে, সেটি ওয়ারিশ সূত্রে পেয়েছেন শাফানা। ১০ বছর আগে একজন ব্যাংকারের সঙ্গে শাফানার বিয়ে হয়েছিল। এক বছর না যেতেই অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হয়। পরে যমজ সন্তানের মা হন শাফানা। স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর উত্তরায় বাবার বাসায় ওঠেন। বাবা মারা যাওয়ার পর দুই সন্তাসহ থাকতেন। শাফানা কোনো চাকরি কিংবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। শাফানার ওই আত্মীয় জানিয়েছেন, শাফানার দুই সন্তান উত্তরার একটি ভালো স্কুলে পড়ত। আর্থিক সমস্যার কারণে ওই প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া চালানো সম্ভব হয়নি। পরে আজমপুরে একটি স্কুলে ভর্তি করা হয়। সেখানেও তারা নিয়মিত যেত না। শাফানার সঙ্গে তাঁর পরিবারের সদস্যদের তেমন যোগাযোগ ছিল না। কেউ তাঁদের খোঁজ নিতো না। মারা যাওয়ার আগে শাফানার বাবা মেয়ের জন্য সামান্য কিছু টাকা ব্যাংকে রেখে যান। আর গ্যারেজের ভাড়া হিসেবে মাসে সামান্য কিছু টাকা পেতেন। সংসার চালানোর জন্য ওই টাকা পর্যাপ্ত না। পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে ভাইদের সঙ্গে মতবিরোধে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছিলেন শাফানা। যে ফ্ল্যাটে থাকেন সেই ফ্ল্যাটের ইউটিলিটি বিলসহ কয়েক মাসের সার্ভিস চার্জও পরিশোধ করতে পারছিলেন না তিনি। তাঁর মা ভাইয়ের সঙ্গে থাকেন। আরেক আত্নীয় জানিয়েছেন, মানসিক সমস্যায় ভুগছেন শাফানা। সিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত। কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের চিকিৎসক মো. মামুন বলেছেন, দুই শিশুর মধ্যে একজন ও তাদের মা মানসিক রোগে ভুগছেন। তাঁদেরকে দ্রুত মানসিক হাসপাতালে পাঠানো দরকার। আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলে নিশ্চিত হওয়া যাবে, তারা সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত কিনা। হাসপাতালে আনার সময়  তারা শারীরিকভাবে দুর্বল ছিল। শাফানা এখন মাঝেমধ্যে নিজের ইচ্ছায় দুএকটি কথা বলছেন। পুলিশের উত্তরা বিভাগের ডিসি মোর্শেদ আলম জানিয়েছেন, শাফানার ফ্ল্যাটে মোবাইল কিংবা অন্য কোনো ইলেকট্রনিকস ডিভাইস পাওয়া যায়নি। অদ্ভুত পরিবেশে তারা থাকতেন। তারা সবাই ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতর ছিলেন।    

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন মুমূর্ষু | অবস্থায় | মা | দুই | যমজ | মেয়ে | শিশুকে | উদ্ধার