অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরি চক্রের অন্যতম হোতা সোহেল কাজীসহ ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। এ সময় জব্দ করা হয় ২২ কোটি টাকারও বেশি মূল্যমানের অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প, জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরির মেশিন ও বিপুল পরিমাণ অন্যান্য সরঞ্জাম।
বুধবার (১৪ জুন ) সকালে রাজধানীর কাওরান বাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে গণমাধ্যম পরিচালক খন্দকার আল মঈন এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ঢাকার আশুলিয়া ও মানিকগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের নাম সোহেল কাজী (৩১), মোঃ জাহাঙ্গীর আলম, (৪০), মোঃ সোহেল রানা(৩৫), মোঃ সাব্বির হোসেন (২২), মোছাঃ সাবিনা ইয়াছমিন (৩০), মোছাঃ শাহনাজ আক্তার (৩১), কামরুল হাসান (২৬), মোঃ সুমন (২২), বিল্টু (১৯) এবং মোঃ সেন্টু মিয়া (২৫)।
তাদের কাছ থেকে ৩,৮০,৮৬০ টি ৫০০ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প, ৬২,০০০টি ২০০ টাকা মূল্য মানের স্ট্যাম্প, ৯২,২০০ টি ১০০ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প, ৬০,৭৬০টি ৫০ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প, ৩২,২০০টি, ২০ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প, ৪,২১,৯০০টি,১০ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প, ৯,০০০টি ৫ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প, ৩৬,৯০০টি ৪ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প, ৫,৬০০টি, ২ টাকা মূল্যমানের স্ট্যাম্প। এছাড়া ৩টি পারফেক্ট মেশিন ও ২০টি স্ট্যাম্প তৈরির প্যাটেন্ট ।
তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে খন্দকার আল মঈন জানন, এ চক্রটি প্রায় ২ বছর ধরে ঢাকার আশুলিয়ার বলিভদ্র এলাকায় অবৈধজাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি তৈরি করে দেশের বিভিন্নস্থানে সরবরাহ করছে। তাদের প্রতারণার কারণে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। চক্রটি পরিচালনা করছে মূলত সোহেল কাজী। চক্রের অন্যান্য সদস্য রাজাল স্ট্যাম্প তৈরি ও বিক্রিতে সোহেল কাজীকে সহযোগিতা করে।
এক সময় সোহেল কাজী বিভিন্ন প্রিন্টিং প্রেস এ চাকরি করতেন। সেখান থেকে সে বিভিন্ন রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরির কাজ রপ্ত করে। আশুলিয়াস্থ ‘কনফিডেন্সপ্রিন্টিং’ প্রেস এর মালিক ও অন্যান্য কর্মচারিদের সঙ্গে পরিচয়ের সুত্র ধরে সে উল্লেখিত ছাপাখানায় অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প মূদ্রণ শুরু করে।
জাল স্ট্যাম্প ছাপানোর অপকর্ম করে সাব্বির, সুমন, কামরুল সেন্টু ও বিল্টু। অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প মূদ্রণের পর পারফেক্ট মেশিনের মাধ্যমে কাটিং করা হয়। পরে জাহাঙ্গীরের মাধ্যমে রাজধানীর উত্তরা, বনানী, গুলশান, সাভার ও টঙ্গীসহ দেশের বিভিন্ন আদালতে কোর্টফি ও অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প সরবরাহ করা হয়। বিভিন্ন অনুমোদিত ভেন্ডররা ও তাদের কাছ থেকে কমমূল্যে জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি কেনে। পরে সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করে।
গ্রেপ্তারকৃতরা আরও জানায় যে, এরকম কাগজ দিয়ে অবৈধ জাল রেভিনিউস্ট্যাম্প তৈরি করতে গড়ে তাদের ৩০-৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। এসব অবৈধ জাল স্ট্যাম্প রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে আড়াই লাখ টাকায় বিক্রি করে। এভাবে তারা প্রতিমাসে ৮-১০ রীম কাগজের অবৈধ জাল স্ট্যাম্প তৈরি করে।
র্যাব জানিয়েছে, সোহেল কাজী প্রায় ১৬ বছর আগে মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকায় এসে বিভিন্ন প্রিন্টিং প্রেসে কাজ শুরু করে। এক পর্যায়ে অবৈধ জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরিতে জড়িত হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে এই অপকর্মে তার স্ত্রী সাবিনা ইয়াছমিন, স্ত্রীর বড়ভাই সোহেল রানাকেও সম্পৃক্ত করে।