চলতি (২০২২-২৩) অর্থবছরে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৬৭ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। জানালেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।
আজ বুধবার (২০ জুলাই) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান ।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ২০২১-২১ অর্থবছরে রপ্তানিতে আমরা ৬০ বিলিয়ন ডলার আয় করেছি। সবদিক বিবেচনা করে এবার রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ১১ শতাংশ বাড়িয়ে ৬৭ বিলিয়ন ডলার নির্ধারণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আগের বছর (২০২০-২১) রপ্তানি আয় ছিলো ৪৫ বিলিয়ন ডলার। সেটাকে আমরা ২০২১-২২ সালে লক্ষ্যমাত্রা ধরে ছিলাম ৫১ বিলিয়ন ডলার। এর বিপরীতে রপ্তানি আয় হয়েছে ৬০ দশমিক শূন্য ৮ বিলিয়ন ডলার। এটা আমাদের নিজেদের ধারণার বাইরে। এর জন্য কতোগুলো ফেক্টর কাজ করেছে।
তিনি আরও বলেন, করোনার কারণে দু'বছর মার্কেটটা কম ছিলো। সাধারণভাবে মানুষ তাদের ক্রয় কমিয়ে দিয়েছিলো, সাশ্রয়ী হয়েছিলো। বিভিন্ন ভীতি কাজ করেছে, অর্থনীতির অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। দু'বছর পর করোনা থেকে বেরিয়ে মানুষের মধ্যে কেনার টেন্ডেন্সি তৈরি হয়েছে। দু'বছরের না কেনাটা তারা মোটামুটিভাবে পুষিয়ে নিয়েছে। গ্লোবাল মার্কেট চীন থেকে সরে গেছে। তার কিছু সুবিধা আমরা পেয়েছি।
মন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ব পরিস্থিতি ও বিগত ২০২১-২২ অর্থবছরের রপ্তানি প্রবৃদ্ধির অর্জনের গতিধারা, পণ্য ও বাজার সম্প্রসারণে সরকারের দেয়া আর্থিক সুবিধা, রাশিয়া-যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববাণিজ্যের সাম্প্রতিক গতিধারা, দেশে করোনার প্রভাব, রপ্তানি সম্ভাবনাময় পণ্য ও সেবা খাতের বিকাশ, রপ্তানি সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের পরামর্শ এবং চলতি অর্থবছরের বাজেটে করোনা মোকাবিলায় সরকারের নেয়া নানামুখী উদ্যোগ বিবেচনায় নিয়ে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, পণ্যখাতে ২০২২-২৩ অর্থ বছরের জন্য ২০২১-২২ সালের প্রকৃত আয় থেকে ১১ দশমিক ৩৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করে ৫৮ বিলিয়ন ডলার এবং সেবাখাতে ২০২২-২৩ অর্থ বছরের জন্য ২০২১-২২ সালের প্রকৃত আয় থেকে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রাক্কলন করে ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার প্রাক্কলন করা হয়েছে। সামগ্রিকভাবে পণ্য ও সেবাখাত মিলে সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরের প্রকৃত আয় থেকে ১০ দশমিক ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বিবেচনায় মোট ৬৭ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় হবে আশা করা যায়।
তিনি আরও বলেন, সদ্য সমাপ্ত ২০২১-২২ অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি আগের অর্থবছরের তুলনায় ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেশি ছিলো। পণ্য খাতে ৪৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৫২ দশমিক শূন্য ৮ বিলিয়ন ডলার অর্জিত হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ বেশি। সেবা খাতে ৭ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৮ বিলিয়ন ডলার অর্জিত হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি।
টিপু মুনশি বলেন, করোনার প্রকোপ আবার বাড়ছে। পাশাপাশি এবার ভিশনভাবে তাপপ্রবাহ চলছে। সেটাও একটা চাপ তৈরি করেছে। আজকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ সারাবিশ্বে মূল্যস্ফীতি বেশ এলার্মিং। আমাদের তুলনায় তাদের অবস্থা আরও খারাপ। এসব বিষয় বিবেচনায় নেয়া হয়েছে যে একটা নেগেটিভ ইফেক্ট পড়তে পারে। তারপরও আমরা আমাদের ক্যাপাসিটি, এফোর্ট, শ্রমিক, উদ্যোক্তা সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছি। আমরা আশাবাদী রপ্তানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হবে।
তিনি বলেন, আমাদের কয়েকটা সেক্টর ভালো করছে। আইসিটির ক্ষেত্রে আমরা আশাবাদী। চামড়া পণ্যেও ভালো করতে শুরু করেছি। হোম টেক্সটাইলেও ভালো করছি। ইউক্রেন-রাশায়ি যুদ্ধ থাকার পরও সবকিছু মিলিয়ে আমরা আমাদের যে লক্ষ্যমাত্রা তা অর্জন করতে পারবো বলেও আমি আশাবাদী।
তিনি আরও বলেন, অনেকগুলো আইটেম আমাদের টার্গেট মতো এগোচ্ছে না। তারপরও কোথাও নেগেটিভ নেই, পজিটিভভাবেই এগোচ্ছে। গার্মেন্টস সেক্টর নিয়ে ভীতি অনেক দিনের। কিন্তু গার্মেন্টস সেক্টর নিয়ে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। গার্মেন্টস সেক্টরের এ ধারা অব্যাহত থাকবে। আমরা ২০০৮ সালে শুনেছি রেডিমেন্টস গার্মেন্টস খারাপ হবে, কোটা চলে যাবে। কিন্তু সবার মুখে চুনকালি দিয়ে আমরা চ্যাম্পিয়ারের দিকে এগুচ্ছি।
মন্ত্রী বলেন, আইসিটিকে এবার আমরা বর্ষ পণ্য করেছি। এই সেক্টর নিয়ে আমরা ভিশন আশাবাদী। প্রধানমন্ত্রী আশা করেছেন ২০২৫ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলার আয় হবে আইসিটি থেকে। আমরা যদি সেখানে যেতে পারি, তাহলে ২০২৫ সালে আমরা ৮০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের যে কথা বলেছি সেটা সম্ভব।
মির্জা রুমন