আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে ‘নিষিদ্ধ সংগঠন’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করার বিষয়ে সরাসরি কোনো কথা বলা যাবে না বলে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর। মার্কিন সরকারের শক্তিশালী সংস্থাটি আরও জানিয়ে দিয়েছে, সরকারি চাকরিতে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন খুব কাছ থেকে দেখছে ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস। আর সুদুর ওয়াশিংটন ডিসিতে বসে মার্কিন কর্মকর্তারা গভীরভাবে নজারদারি করছেন, শিক্ষার্থীদের এই কোটাবিরোধী আন্দোলন।
স্থানীয় সময় বুধবার (১৭ জুলাই) ওয়াশিংটনে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে খালেদা জিয়ার সাবেক সহকারী প্রেস সচিব মুশফিকুল ফজল আনসারীর এক প্রশ্নের জবাবে ম্যাথিউ মিলার এসব কথা বলেন।
প্রেস ব্রিফিংয়ে খালেদা জিয়ার সাবেক সহকারী প্রেস সচিব ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেটের মুখপাত্রের কাছে জানতে চান, ‘বাংলাদেশে ছাত্র বিক্ষোভের বিরুদ্ধে দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে। শাসক বাহিনীর হাতে অন্তত ছয় ছাত্র নিহত হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ বিক্ষোভরত ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর নিষ্ঠুর আচরণ করেছে, বিশেষ করে মেয়ে ও নারীদের প্রতি। গত দেড় দশক ধরে বারবার একই কাজ করে আসছে। আপনি কি ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করবেন? ’
মুশফিকুলের এই প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, নির্দিষ্ট বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত অন্য বিষয়ে অমি কথা বলবো না।তবে আমি বলব যে আমরা ঢাকায় ছাত্র বিক্ষোভের সময় যে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছিল তা নিরীক্ষণ করে চলেছি এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ করার জন্য বারবার আহবান জানিয়ে আসছি। পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের সময় যে কোনও সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে আসছি।
পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ নামে এক আন্দোলনকারী নিহতের বিষয়টি তুলে ধরে বাংলাদেশে কোটা আন্দোলন ইস্যুতে মার্কিন প্রশাসন নিরব কেন জানতে চেয়ে আরেকটি একটি প্রশ্ন করেন। তার প্রশ্নটি ছিল, ‘বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের তরুণ শিক্ষার্থী আবু সাঈদ তার সহপাঠীদের বাঁচাতে পুলিশের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু শাসক বাহিনী তাকে গুলি করতে দ্বিধা করেনি। এমনকি সে বুঝতে পারেনি যে তার বন্ধুদের উদ্ধার করার চেষ্টা করার সময় তাকে গুলি করা হয়েছে। এভাবেই উপহাসের নির্বাচনের আগে থেকেই শেখ হাসিনা তার শাসন ক্ষমতা ধরে রেখেছেন। আমি দুঃখিত। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন, সারা বিশ্ব বাংলাদেশের নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে এবং এ জন্য স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও যুক্তরাষ্ট্র প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ নেবে। কিন্তু জনগণের অধিকার যখন হরণ করা হয়, তখন হঠাৎ আপনি নীরব হয়ে যান। কেন এমন হয়?’
জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘প্রথমত আপনি যা বলছেন সেটি সঠিক নয়। আপনি অমাকে এই সপ্তাহে বেশ কয়েকবার বলতে শুনেছেন। সোমবার বলেছিলাম এবং আমার মনে হয় গতকালও ফের বলেছিলাম। আমি অজ আবারও বলছি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের বিরুদ্ধে যে কোনো সহিংসতার আমরা নিন্দা জানাই। আমরা বিষয়টিকে আমাদের দূতাবাস থেকে খুব কাছ থেকে প্রত্যক্ষ করছি এবং ওয়াশিংটনের কর্মকর্তারা বিক্ষোভ কর্মসূচির গভীরভাবে নজারদারি করছেন। আন্দোলনে মানুষের মৃত্যু ও শিক্ষার্থীদের নিহতের খবর দেখছি এবং আমরা আবারও, শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদ করার জন্য ব্যক্তিদের অধিকার সমুন্নত রাখার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।’
কে এই মুশফিকুল ফজল আনসারী?
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে মুশফিকুল ফজল আনসারী ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত খালেদা জিয়ার সাবেক সহকারী প্রেস সচিব ছিলেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব ও বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরীর ভাগিনা হচ্ছেন মুশফিকুল ফজল আনসারী।
বিএনপির আন্তর্জাতিক কমিটির সাবেক এই সদস্য এক সময় বেসরকারী স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভি ও বাংলাভিশনে টক শো করতেন।এই মুশফিক ফজল আনসারী এখন রীতিমত বিএনপির রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়নে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ অনেকের।
এরই অংশ হিসেবে মুশফিকুল ফজল আনসারী জাতিসংঘ, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ও হোয়াইট হাউসের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে যোগ দিয়ে বাংলাদেশ সরকারের বিপক্ষে এবং বিএনপি ও খালেদা জিয়ার পক্ষে নানা কথা বলেন, প্রশ্ন করেন। মুশফিকুল ফজল আনসারী জাস্ট নিউজ ডট কম নামে একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল পরিচালনা করেন।
এমআর//