সাংবাদিক মুন্নী সাহার ব্যাংক হিসাবে ১৩৪ কোটি টাকার সন্দেহভাজন লেনদেনসহ অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) দুদকের প্রধান কার্যালয় থেকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টি গণমা্ধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।
দুদকের মহাপরিচালক জানান, সাংবাদিক মুন্নী সাহা ও তার স্বামী এবং বিজ্ঞাপনী সংস্থা এমএস প্রমোশনালর সত্ত্বাধিকারী কবির হোসেন তাপসের বিরুদ্ধে নিজ ব্যাংক হিসাবে ১৩৪ কোটি টাকা লেনদেন, বর্তমান স্থিতি ১৪ কোটি টাকা ও জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ কমিশন কর্তৃক অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। কয়েক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দেশজুড়ে বঙ্গবন্ধুর অপ্রয়োজনীয় ভাস্কর্য-ম্যুরালে সরকারি অর্থ অপচয় ও তছরুপ করার অভিযোগটি কমিশন কর্তৃক অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
দুদক সূত্র, বিভিন্ন অভিযোগ ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ি, সরকারি চা্করিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের মুখে পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যাওয়ারি পরই মুন্নী সাহার আমানতের মধ্যে ১২০ কোটি টাকাই উত্তোলন করা হয়েছে। স্থগিত করা হিসাবে এখন স্থিতি আছে মাত্র ১৪ কোটি টাকা। ১৭টি ব্যাংকের মাধ্যমে এ লেনদেন হয়েছে। সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে ওয়ান ব্যাংকের মাধ্যমে। বিধিবহির্ভূত লেনদেনের অভিযোগে মুন্নী সাহার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ইতোমধ্যে জব্দ করেছে বাংলাদেশের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট (বিএফআইইউ)।
বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, বেসরকারি ওয়ান ব্যাংকের কারওয়ানবাজার শাখায় মুন্নী সাহার স্বামী কবির হোসেনের মালিকানাধীন এমএস প্রমোশনের নামে ২০১৭ সালের ২ মে একটি হিসাব খোলা হয়। যেখানে নমিনি হিসেবে নাম রয়েছে মুন্নী সাহার। অন্যদিকে, ব্যাংকটির চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখায় জনৈক মাহফুজুল হকের মালিকানায় প্রাইম ট্রেডার্সের নামে ২০০৪ সালের ২১ জুলাই একটি হিসাব খোলা হয়। দুটি প্রতিষ্ঠানের নামে ব্যাংকটি থেকে ৫১ কোটি ৫০ লাখ টাকার ঋণ নেওয়া হয়। ঋণ পরিশোধ না করে বারবার সুদ মওকুফ ও নবায়ন করেছে ব্যাংকটি। এর মধ্যে কেবল ২০১৭ সালেই সুদ মওকুফ করা হয় ২৫ কোটি ৭৮ লাখ টাকার। যদিও প্রতিষ্ঠান দুটির মধ্যে পারস্পরিক ব্যবসায়ীক কোনো সম্পর্ক নেই। অথচ বিভিন্ন তারিখে হিসাব দু’টির মধ্যে বিপুল অঙ্কের অর্থ লেনদেন হয়েছে।
গেলো ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর ৬ অক্টোবর বিএফআইইউ মুন্নী সাহার ব্যাংক হিসাব তলব করে। ব্যাংক হিসাবের বাইরে গুলশান-তেজগাঁও লিংক রোড এলাকায় শান্তিনিকেতনে ১৬৫, রোজাগ্রীণে তার একটি ডুপ্লেক্স বাড়ির সন্ধান মিলেছে।
প্রসঙ্গত, দৈনিক ভোরের কাগজ দিয়ে মুন্নী সাহার সাংবাদিকতা শুরু। পরবর্তীতে একুশে টেলিভিশন ও এটিএন বাংলায় কাজ করেন। এরপর যোগ এটিএন নিউজে বার্তা প্রধান হিসেবে কাজ করেন দীর্ঘদিন। বর্তমানে মুন্নী সাহা ‘এক টাকার খবর’ নামের একটি অনলাইন পোর্টালের সম্পাদক।
গেলো জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে গুলিতে শিক্ষার্থী নাঈম হাওলাদার (১৭) নিহত হওয়ার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। গত ২২ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের হওয়া ওই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ একাধিক মন্ত্রী-এমপি, আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ সদস্য এবং পুলিশ ও র্যাব কর্মকর্তাদের সঙ্গে যে ৭ সাংবাদিককে আসামি করা হয়েছে, তাদের মধ্যে মুন্নী সাহার নাম রয়েছে।
এমআর//