আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) সাবেক প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজের ডক্টরেট ডিগ্রি ভুয়া বলে জানিয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিভিত্তিক ইউনিভার্সিটি অব নিউ সাউথ ওয়েলস (UNSW)। বিশ্ববিদ্যালয়টির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তুরিন আফরোজ ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সম্পন্ন করেননি, এমনকি তার নামে কোনো শিক্ষার্থীও নথিভুক্ত ছিল না।
রোববার (০৪ মে) আপিল বিভাগে তুরিন আফরোজের বাড়ি সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে এ তথ্য উপস্থাপন করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আইনজীবী ব্যারিস্টার সাজ্জাদ হায়দার।
এর আগে, ১৩ মার্চ আপিল বিভাগে বাড়ি সংক্রান্ত মামলার শুনানিতে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার অনীক আর হক বলেন, প্রসিকিউটর হিসেবে থাকাকালীন তুরিন আফরোজ ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন এবং এক মুহূর্তের মধ্যে তার মাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন। তিনি মায়ের জন্য বাড়িতে থাকার নির্দেশনার আবেদনও জানান।
উত্তরা, রেসিডেনশিয়াল মডেল টাউনের ১১ নম্বর সড়ক, ৩ নম্বর সেক্টরের ১৫ নম্বর প্লটে পাঁচতলা বাড়িটি নিয়ে তুরিন আফরোজের সঙ্গে তার মা শামসুন্নাহার বেগম ও ভাই শিশির আহমেদ শাহনেওয়াজ আহমেদের দীর্ঘদিনের বিরোধ চলছে।
২০০২ সাল থেকে শামসুন্নাহার ও শাহনেওয়াজ ওই বাড়িতে বসবাস করে আসছিলেন। তবে ২০১৭ সালে তুরিন আফরোজ তাদের সেখান থেকে বের করে দেন। এর পর উভয় পক্ষই ঢাকার যুগ্ম জেলা জজ আদালতে দুটি দেওয়ানি মামলা দায়ের করেন।
২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর আদালত উভয় পক্ষের আবেদনের শুনানি শেষে স্থিতাবস্থা জারি করেন। পরে জেলা জজ আদালতে শাহনেওয়াজ আবেদন করলে, ২০২৩ সালের ১৯ জানুয়ারি জেলা জজ আদালত স্থিতাবস্থা বহাল রাখেন।
এরপর শাহনেওয়াজ হাইকোর্টে সিভিল রিভিশন দায়ের করেন। ২০২৩ সালের ২ এপ্রিল বিচারপতি মো. জাকির হোসেনের একক বেঞ্চ রুল জারি করেন। পরে মামলাটি বিচারপতি মো. সেলিমের একক বেঞ্চে স্থানান্তরিত হয়। ১৯ ফেব্রুয়ারি ওই বেঞ্চ স্থিতাবস্থা বাতিল করে রায় দেন। এর ফলে শামসুন্নাহার ও শাহনেওয়াজের ওই বাড়িতে বসবাসে আর কোনো আইনগত বাধা নেই বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।
তুরিন আফরোজের দাবি, তার মা শামসুন্নাহার ১৯৯১ সালে ওই সম্পত্তি ক্রয় করেন এবং ১৯৯২ সালে তার স্বামী তসলিম উদ্দিনকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দেন। ১৯৯৪ সালে তসলিম উদ্দিন হেবা দলিলের মাধ্যমে মেয়ে তুরিন আফরোজকে সম্পত্তি দেন।
অন্যদিকে শামসুন্নাহার ও শাহনেওয়াজ আদালতে লিখিত জবাব দিয়ে জানান, তসলিম উদ্দিন কোনো হেবা দেননি, বরং ১৯৯৭ সালে শামসুন্নাহার স্বেচ্ছায় ছেলেকে সম্পত্তি দেন। এরপর ১৯৯৯ সালে শাহনেওয়াজের নামে নামজারি করা হয় এবং হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন থেকে ২৫ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে রাজউকের অনুমোদিত নকশা অনুযায়ী বাড়ি নির্মাণ করা হয়, যেখানে তারা ২০০২ সাল থেকে বসবাস করছিলেন।
হাইকোর্টের রায়ের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন, বিএম ইলিয়াস কচি, ব্যারিস্টার মনজুর রাব্বী ও ব্যারিস্টার আতিকুল হক। তুরিন আফরোজের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ সাইফুল করিম।
ব্যারিস্টার আতিকুল হক বলেন, হাইকোর্টের রায়ের ফলে শামসুন্নাহার বেগম ও শাহনেওয়াজের বসবাসে কোনো বাধা নেই এবং এখন মামলাগুলো বিচারিক আদালতে স্বাভাবিক নিয়মে চলবে।
এসি//