শিশুদের শাকসবজি খাওয়ানো যেন এক দীর্ঘ যাত্রার। যেটি প্রায় প্রতিটি বাবা-মায়ের জন্যই এক প্রকার চ্যালেঞ্জ। শিশুরা সাধারণত তাদের প্রিয় খাবার ছাড়া অন্য কিছু খেতে চায় না। আর যদি সেটা শাকসবজি হয় তবে তো কথাই নেই। তবে কিছু সৃজনশীল উপায়ে এবং ধৈর্য ধরে সহজেই শিশুদের শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা সম্ভব।
একটা সাধারণ সবজির প্লেটও যখন আপনি শিশুদের জন্য আকর্ষণীয় করে সাজান, তখন তাদের কাছে সেটি আগের চেয়ে অনেক বেশি মজাদার মনে হবে। আপনি সবজির টুকরোগুলোকে এমন আকৃতিতে কেটে পরিবেশন করতে পারেন যা তাদের আকর্ষণ করে। যেমন- হৃদয়ের আকার, হাসিমুখ, বা তারার মতো আকৃতি। এমনভাবে সাজালে শিশুদের খাওয়ার প্রতি আগ্রহ বাড়ে এবং খাবারের প্রতি ইতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়।
প্রিয় খাবারে লুকিয়ে দিন সবজি:
অনেক সময় শিশুরা সরাসরি শাকসবজি খেতে চায় না, তবে তারা পছন্দের খাবারের মধ্যে যদি একটু সবজি লুকিয়ে দেওয়া যায়, তবে তারা হয়তো বুঝতেই পারবে না। স্যান্ডউইচ, কাটলেট বা এমন কোনও খাবারে যে সবজি মিশিয়ে দেওয়া হয়, তা তারা আনন্দের সাথে খেতে পারে।
কার্টুন চরিত্রের সঙ্গী করুন:
শিশুরা প্রায়ই তাদের প্রিয় কার্টুন চরিত্রদের অনুসরণ করে থাকে। এক্ষেত্রে আপনি শিশুকে বলুন, পালংশাক খেলে শক্তিশালী হয়ে যাবে। অথবা ঢেঁড়স খেলে আয়রন ম্যানের মতো শক্তি পাবে। এমন মজার ও সৃষ্টিশীল ধারণা তাদের কাছে আকর্ষণীয় হতে পারে এবং শাকসবজি খাওয়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি করবে।
রান্নায় অংশগ্রহণে শিশুদের উৎসাহিত করুন:
শিশুদের যদি রান্নার কাজের মধ্যে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেওয়া হয়, তাহলে তাদের আগ্রহের মাত্রা অনেকটাই বেড়ে যায়। ছোট কাজ যেমন সবজি ধোয়া, সালাদ তৈরি বা স্যান্ডউইচ বানানো। এতে তাদের উৎসাহ জন্মে। নিজের হাতে তৈরি খাবার খাওয়ার আনন্দ শিশুদের মধ্যে স্বাভাবিকভাবে তৈরি হয় এবং তারা খেতে আরও আগ্রহী হয়ে ওঠে।
রোল আর র্যাপের মাধ্যমে চমক আনুন:
শাকসবজি অনেক সময় র্যাপ বা রোলের মধ্যে মজাদার করে পরিবেশন করলে তা শিশুরা অনেক বেশি উপভোগ করে। এটি শুধু সুস্বাদু নয় বরং, শিশুরা আনন্দিত হয়ে খাবে এমনকি তারা অনুভবও করবে না যে তারা শাকসবজি খাচ্ছে। সবজি যদি একটু ভিন্নভাবে পরিবেশন করা হয়, তবে খাবারটি তাদের কাছে আরও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।
নিজের উদাহরণ দিন:
শিশুরা বাবা-মায়ের আচরণ দেখে শেখে। আপনি যদি নিয়মিত আনন্দের সাথে শাকসবজি খান, তাহলে শিশুও সেটি অনুসরণ করতে আগ্রহী হবে। একসাথে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে খাবারের সময় কাটালে এটি আরও ভালোভাবে কাজ করবে, কারণ শিশুরা তাদের কাছ থেকে শেখে এবং এটা তাদের জন্য মডেল হয়ে দাঁড়ায়।
ছোট গল্প দিয়ে শাকসবজির উপকারিতা বুঝিয়ে দিন:
শিশুরা গল্প শুনতে ভালোবাসে। আপনি যদি তাদের শাকসবজির উপকারিতা নিয়ে একটি ছোট গল্প বলুন, তবে তা তাদের মনে বেশ দাগ কেটে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে বলবেন, শাকসবজি খেলে শরীর শক্তিশালী হয় বা সবজি খেলে মস্তিষ্ক তীক্ষ্ণ হয়। এমন গল্প তাদের শাকসবজি খাওয়ার প্রতি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করতে সহায়তা করবে।
শাকসবজি খাওয়ানোর কাজটি যে কতটা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে তা সবাই জানে। তবে কিছু সৃজনশীলতা যোগ করে এই অভ্যাস শিশুদের মধ্যে সহজেই গড়ে তুলতে পারবেন।
এসকে//