রাজধানীর মগবাজারে দিনের বেলা প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে ছিনতাইয়ের একটি ভিডিও সম্প্রতি ফেইসবুকে ভাইরাল হয়। গেল ১৮ মে মগবাজারের গ্রিনওয়ে গলিতে এ অপকের্ম জড়িতদের পুলিশ খুঁজতে শুরু করে। অবশেষে এ ঘটনায় তিন ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় দুটি চাপাতি ও ছিনতাইয়ের সময় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলটি জব্দ করা হয়।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ রাজু এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, মোঃ শামিম (২৪) পিতা আবুল কালাম, মোঃ হৃদয় (২৭) পিতা মোঃ সোলেমান বিশ্বাস ও সোহেল রানা(৩৬) পিতা আব্দুল আপন।
এর আগে গত ২৫ মে এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। তার আগে, ১৮ মে ভোর ৫টা ২০ মিনিটের দিকে রাজধানীর মগবাজারের গ্রীনওয়ে রোডে এ লোমহর্ষক ঘটনা ঘটে।
ওই ঘটনার সিসিটিভি ভিডিওতে দেখা যায়, এক তরুণ একটি ব্যাগ কাঁধে নিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় তার পথ আটকায় বাইকে আসা তিনজন। বাইক থেকে দু’জন নেমে দুটি চাপাতি নিয়ে ওই তরুণকে একটি বাড়ির ফটকের সামনে নিয়ে যায়। এসময় চাপাতি দিয়ে আঘাতও করে। এক পর্যায়ে তরুণের ব্যাগটি কেড়ে নিয়ে দুই ছিনতাইকারী বাইকে উঠে পড়ে। এরপর ভুক্তভোগী বাইকের সামনে এসে চাকা ধরে অনুরোধ করেন। কিন্ত চাপাতি হাতে দুইজন আবার বাইক থেকে নেমে তাকে আঘাত করে সরিয়ে দেয়।
এক পর্যায়ে বাইকটি চলে যাওয়ার সময় হামলাকারী একজন আবারও ভুক্তভোগীর দিকে তেড়ে যায়। ভিডিওতে রেকর্ডের সময় অনুযায়ী তখন সময় বিকেল ৫ টা ২২ মিনিট। মাত্র এক মিনিটের মধ্যে ব্যাগটি ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায় তিনজন। হেলমেট পরে থাকায় তাদের কার চেহারা দেখা যায়নি।
ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব আব্দুল্লাহ তখন চলে যাওয়া বাইকের দিকে অপলক তাকিয়ে ছিলেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী আব্দুল্লাহ বলেন, কোনো কথা না বলেই ওরা এসে চাপাতি ঘুরিয়ে আমার ব্যাগ, ব্যাগে থাকা চৌদ্দ হাজার টাকা, আমার মানিব্যাগ ও মোবাইলফোন নিয়ে যায়। আমি অনেক অনুরোধ করেছিলাম অন্তত ব্যাগটা যেন আমাকে দিয়ে যায়। কোনো কাজ হয়নি। কথা না বলে শুধু তারা চাপাতি দিয়ে কোপ দিতে চেয়েছে। পাঁচটা কোপ আমার শরীরের বিভিন্ন অংশে লেগেছে। না কাটলেও জখম হয়েছে অনেক।
তিনি আরও বলেন, আমার ব্যাগে অফিসের কিছু টাকাসহ আমার পরীক্ষা ও কলেজের ফির জন্য মোট চৌদ্দ হাজার টাকা ছিল। এজন্য আমি শেষ মুহূর্তে তাদের বাইকের চাকা আটকে ধরে অনুরোধ করেছিলাম, যেন আমার ব্যাগটা অন্তত দিয়ে যায়। তারা কোনো অনুরোধই শোনেনি। আমার কথার জবাবে তারা চাপাতি চালিয়েছে।
ঘটনার পরপরই অভিযোগ জানাতে সংশ্লিষ্ট হাতিরঝিল থানায় গেলেও সেদিন থানা-পুলিশ মামলা না নিয়ে তাকে হয়রানি করেছেন বলে অভিযোগ তোলেন আব্দুল্লাহ।
তিনি বলেন, সকাল পাঁচটার দিকের ঘটনা এটি। এর পরপরই স্থানীয়দের পরামর্শে আমি হাতিরঝিল থানায় গিয়েছিলাম মামলা বা অভিযোগ দিতে। তবে থানা থেকে আমার অভিযোগ না নিয়ে হাসপাতাল থেকে রিপোর্ট নিয়ে আসতে বলে। আমি স্থানীয় মগবাজার কমিউনিটি হাসপাতালে যাই। সেখান থেকে আমাকে ঢাকা মেডিকেলে যেতে বলে। আমার শরীর তখন অনেক দুর্বল থাকায় আমি আর কোথাও যাইনি। মামলাও করিনি।
পরে ২৫ মে রাতে এ ঘটনায় মামলা করেন আব্দুল্লাহ।
প্রসঙ্গত, ভুক্তভোগী আব্দুল্লাহ উচ্চ মাধ্যমিকে পড়াশোনা করছেন। এর পাশাপাশি রাজধানীর পল্টনে একটি চাকরি করেন। তার পড়াশোনার ফি বাবদ কিছু টাকা মামাতো বোনের বাসায় জমা রেখেছিলেন। আর সেই টাকা নিয়ে সেদিন তিনি গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার দেবিদ্বারে রওনা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে পথেই এ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।
এসি//