আর্কাইভ থেকে করোনা ভাইরাস

করোনা ছড়িয়েছে চীনের খনি থেকে!

করোনা ছড়িয়েছে চীনের খনি থেকে!

২০১৩ সালে চীনের উহান শহর থেকে দেড় হাজার কিলোমিটার দূরে একটি পরিত্যক্ত খনি থেকে করোনা ভাইরাসের উৎস পাওয়া গিয়েছিল। আক্রান্তদের চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা জরুরি বিভাগের এক চিকিৎসাকর্মীর উদ্ধৃতি দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

রয়টার্স জানায়, পরিত্যক্ত মোজিয়াং তামার খনিতে বাদুড়ের উপদ্রব বেড়ে গেলে সেখানে পরিষ্কারের কাজে নিযুক্ত ছয়জন কর্মী তীব্র নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল। তাদের মধ্যে তিনজন উহানের একটি হাসপাতালে মারা যায়। বাদুড় থেকে তাদের মধ্যে ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়ায় বলে সন্দেহ করা হয়। ওই সময় ভাইরাসের হিমায়িত নমুনা উহানের ল্যাবে পাঠানো হয়েছিল।

চীনের উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজিতে পাঠানো ভাইরাসের নমুনার সঙ্গে করোনাভাইরাসের অনেকটা মিল রয়েছে। প্রতিবেদনে প্রকাশিত এমন তথ্যে বৈশ্বিক মহামারির উৎস নিয়ে রহস্য মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে আরো একবার।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘটনার পর ওই খনি খতিয়ে দেখেন শি ঝেংলি নামে একজন গবেষক। তিনি উইান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজির বাদুড় থেকে উদ্ভূত সার্স করোনাভাইরাস বিশেষজ্ঞ।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত এক নিবন্ধে শি বলেন, ২০১৩ সালে ইয়ুনানের খনি থেকে পাওয়া র‌্যাটজি১৩ ভাইরাস নুমনার সঙ্গে কোভিড ১৯ এর ৯৬ দশমিক ২ শতাংশ মিল। ইয়ুনানের পরিত্যক্ত খনিতে পাওয়া ওই ভাইরাসই র‌্যাটজি১৩ প্রায় নিশ্চিত বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়।

গেল মাসে উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলোজির পরিচালক জানান, র‌্যাটজি১৩ ভাইরাসের আর কোনো লাইভ কপি ল্যাবে নেই। তাই ল্যাব থেকে ভাইরাসটি কোনোভাবে ছড়িয়ে পড়া অসম্ভব। উহান থেকে শুরু হওয়া করোনাজনিত মহামারির উৎস যে উহানের ল্যাব, এর কোনো প্রমাণ নেই। যদিও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, তার কাছে এ ব্যাপারে প্রমাণ রয়েছে। তবে তেমন কোনো তথ্য ছিল না মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে।

এদিকে, চীনের সামুদ্রিক কোন বাজার থেকে করোনাভাইরাস ছড়ানোর তত্ত্ব জোরালে হচ্ছে। করোনা ছড়িয়ে পড়ার সময় বলা হচ্ছিল, চীনের কোন মাংস বাজারে বে-আইনিভাবে অনেক জীবের মাংস বিক্রি হতো যা মানুষ খেত এবং তা থেকেই ছড়িয়ে পড়ে করোনা। মাঝে অনেকদিন এই দাবি নিয়ে আলোচনা বন্ধ ছিল। তবে নতুন তত্ত্ব বলছে, ওই বে-আইনি মাংস বাজার থেকেই করোনা ছড়িয়ে পড়েছে।

সম্প্রতি এ নিয়ে আবারো তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তার ঠিক দুই সপ্তাহ পরই এই গবেষণা পত্রের দাবি, করোনার জন্য চীনের মাংস বাজার দায়ী। ওই বাজারে বেজি, পাম সিভেট, রাকুন কুকুর, সাইবেরিয়ান ওয়েসেল, হগ বেগার, চীনা গেছো ইঁদুরের মতো ৩৮টি প্রাণীর মাংস বিক্রি হত। গেল বছর অক্টোবর মাসে গবেষণা পত্রটি জমা দেওয়া হয়েছিল।

সম্প্রতি মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগকে জো বাইডেন বলেন, ৯০ দিনের মধ্যে করোনার উৎসস্থল খোঁজ করে দিতে হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, করোনার সংক্রমণ প্রাণীর সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ থেকে হয়েছিল কিনা বা কোনও ল্যাব থেকে দুর্ঘটনার কারণে মহামারী ঘটেছে কী না তা নিয়ে পর্যাপ্ত তদন্ত করতে হবে।

এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউস জানায়, করোনাভাইরাসের উৎস নিয়ে দুটি সম্ভাবনা রয়েছে। একটি উহানের মাছ-মাংসের বাজার থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। দ্বিতীয়টি, উহানের ল্যাবে কোনও মারণ ভাইরাস নিয়ে গবেষণা হওয়ার সময় সেখান থেকেই করোনা ছড়িয়ে যায়। গোয়েন্দাদের পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে করোনা মহামারীর উৎপত্তিস্থল নিয়ে ৯০ দিনের মধ্যে জানাতে বলেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

এর আগেও করোনা নিয়ে বহুবার চীনের দিকেই আঙুল তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। এই ভাইরাসকে চীনা ভাইরাস নাম দিয়েছিলেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। করোনা ছড়ানোর জন্য চীনকে অনেকবার দায়ী করেন তিনি। এ নিয়ে আপত্তি করেছিল চীন, কিন্তু তাতে লাভ হয়নি। সে পথেই হাঁটছেন বাইডেনও। করোনার উৎসস্থল নিয়ে চীনের দিকেই সন্দেহের আঙুল তুলেছেন তিনি।

 

এসএন

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন করোনা | ছড়িয়েছে | চীনের | খনি