আর্কাইভ থেকে বলিউড

সৃষ্টিকর্তা আমার বেঁচে থাকার কারণটা কেড়ে নিলেন: সায়রা বানু

সৃষ্টিকর্তা আমার বেঁচে থাকার কারণটা কেড়ে নিলেন: সায়রা বানু

বড় পর্দার ট্র্যাজেডি কিং হলেও বাস্তব জীবনের চিত্রনাট্যে প্রেমকেই আগে রেখেছিলেন দিলীপ কুমার। প্রেমজীবনে এসেছে একাধিক উত্থানপতন। কিন্তু দিলীপ কুমারকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত আগলে রেখেছিলেন সায়রা বানুই। 

বলিউড সিনেমার কিংবদন্তি অভিনেতা দিলীপ কুমার বুধবার (৭ জুলাই) না ফেরার দেশে চলে গেছেন এই অভিনেতা। অভিনেত্রী সায়রা বানুর সঙ্গে দিলীপ কুমারের ৫৪ বছরের দাম্পত্য জীবন। দীর্ঘদিনের সঙ্গীকে হারিয়ে শোকাহত সায়রা। 

যখন ডক্টর এসে বলেছিলেন যে তিনি আর নেই... তখনই সায়রা বানু বলেন, ‘সৃষ্টিকর্তা আমার বেঁচে থাকার কারণটাই কেড়ে নিলেন। দিলীপ সাহেবকে ছাড়া তো আমার জীবন অর্থহীন, আমি কিছু ভাবতেই পারছি না। দয়া করে সকলে প্রার্থনা করুন।’

নিজের 'কোহিনূর' এর এতটুকু যত্ন লোপ হতে দেননি তিনি। শেষসময়েও হাসপাতালে গিয়েছিলেন দেখতে। তাদের চির বসন্তের এই দাম্পত্য বলিউডে বিরল।

ছোটবেলা থেকেই দিলীপ কুমারের ভক্ত ছিলেন সায়রা বানু। সায়রা বানুর মা নাজিম বানুও অভিনেত্রী ছিলেন। মায়ের দৌলতেই প্রথম দিলীপের সঙ্গে দেখা সায়রার। দিলীপ হেসে বছর ষোলোর যুবতীর প্রশংসা করেছিলেন মাত্র। তাতে কী! লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইট সার্থক করলেন সায়রা বানু। প্রথম সাক্ষাতে সায়রা বুঝতে পারেন দিলীপের সহধর্মিনী হয়ত তিনিই হবেন।


‘ঝুক গায়া আসমান’ সিনেমার সেটে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন দিলীপ কুমার। বিয়ের সময় এই অভিনেতার বয়স ছিল ৪৪, অন্যদিকে সায়রা বানুর ২২ বছর। কিন্তু একসঙ্গে ১৬ বছর সংসার করার পর পাকিস্তানি সমাজকর্মী আসমা রেহমানকে বিয়ে করেন দিলীপ কুমার। কিন্তু তাদের সংসার টিকেছিল মাত্র দুই বছর। এরপর আবার সায়রা বানুর কাছে ফিরে যান তিনি।  

১৯৬৬ এর ১১ই অক্টোবর তাদের বিয়ে হয়। দিলীপ কুমার তখন বছর ৪৪ এর  প্রতিষ্ঠিত তারকা। ২২ বছরের ছোট ছিলেন সায়রা। ১৯৭২ এ গর্ভবতী হওয়ার আট মাসের মাথায় উচ্চ রক্তচাপের দরুণ সন্তানকে বাঁচানো যায়নি। তারপর আর সন্তান নেননি এই দম্পতি।  

সায়রার সঙ্গে বিয়ের আগে দু'বার দুই নায়িকার প্রেমে পড়েছিলেন দিলীপ কুমার। কামিনী কৌশলের সঙ্গে তার প্রেম তৎকালীন বলিউডে অন্যতম চর্চার বিষয় ছিল। যদিও বাড়ির চাপে পিছু হটতে হয় কামিনীকে। মধুবালার সঙ্গেও তার প্রেম ছিল। যদিও নানান টানাপোড়েনে সে সম্পর্কও ভেঙে যায়। 

১৯৭৬ এই অভিনয় ছেড়ে দিয়েছিলেন সায়রা। জীবনসঙ্গী 'ইউসুফ সাহাবের' খেয়াল রাখতে। ১৯৮১ তে সায়রার সঙ্গে দাম্পত্য জীবনে যেন দুঃসময় নেমে আসে। হায়দ্রাবাদে এক ক্রিকেট ম্যাচে সাক্ষাতে পাক অভিনেত্রী আসমা রেহমানের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন দিলীপ। বিয়েও করেন। যদিও তা দু'বছরের বেশি টেকেনি। জীবনের এই পর্যায়কে ভুলে যেতে চান সায়রা। ভুল করেছিলেন বলে আক্ষেপও করেন দিলীপ কুমার। 

যদিও আবারও সায়রার কাছে ফিরে আসেন দিলীপ। পাঁচ দশকেরও বেশি সময় একসঙ্গে কাটিয়েছেন তারা। ২০১৪ এ এক সাক্ষাতকারে সায়রা বলেন, 'কোনো বৈবাহিক সম্পর্কই পারফেক্ট হয় না। হবেই বা কীভাবে যখন মানুষই পারফেক্ট হল না। বাকিদের মতো আমাদেরও অনেক ঝড়ঝাপটা গিয়েছে। কিন্তু একে অপরের প্রতি ভালোবাসা, মর্যাদা ও স্নেহই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখে।' 

এতটা বছর দিলীপ কুমার ও সায়রা বানুর একসঙ্গে ছিলেন। বলিউডের ‘ট্র্যাজেডি কিং’ হিসেবে পরিচিত এই অভিনেতা অসুস্থ হলে তার সেবা-যত্ন করে পাশে থেকেছেন সায়রা বানু। শেষ সময়েও হাসপাতালে দিলীপ কুমারের পাশে ছিলেন তিনি। 

এস

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন সৃষ্টিকর্তা | আমার | বেঁচে | থাকার | কারণটা | কেড়ে | নিলেন | সায়রা | বানু