কখনও একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা। কখনও আবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে পরমাণু হামলার হুমকি। সারা বছরই খবরের শিরোনামে থাকেন উত্তর কোরিয়ার সর্বাধিনায়ক কিম জং-উন। অনেকেরই ধারনা জোর করে দেশের ক্ষমতা দখল করেছেন তিনি। আসলে কিন্তু তেমনটা নয়। রীতিমতো ভোট দিয়ে তাকে নির্বাচিত করেছেন কোরিয়াবাসী।
উত্তর কোরিয়ার ভোট
উত্তর কোরিয়ার সংসদের নাম Supreme People’s Assembly বা SPA। প্রতি পাঁচ বছর অন্তর ভোট হয় দক্ষিণ চীন সাগরের এই দ্বীপরাষ্ট্রে। অর্থাৎ দেশের জনগণের দ্বারাই নির্বাচিত হন SPA-র সদস্যরা।
নির্বাচনের ক্ষেত্রে উত্তর কোরিয়ায় কিছু অদ্ভুত নিয়ম-কানুন রয়েছে। সেখানে ভোটে অংশগ্রহণ করেন ১৭ বছরের বেশি বয়সী নাগরিকরা। উল্লেখ্য, কিমের দেশে ভোট দেয়া বাধ্যতামূলক। নির্বাচনে অংশ না নিলে বড়সড় শাস্তির মুখে পড়তে হয় নাগরিকদের। ফলে প্রতিটা নির্বাচনে ১০০ শতাংশ ভোট পড়ে উত্তর কোরিয়ায়।
কীভাবে ভোট দান
নিয়ম অনুযায়ী, নির্বাচনের দিন উত্তর কোরিয়াবাসীকে বুথে গিয়ে লাইন দিতে হয়। সেখানে ব্যালট পেপার পান তারা। ব্যালটে থাকে একটিই নাম। ভোট দেয়ার জন্যে কোনও পেন বা কালির প্রয়োজন নেই। ব্যালটি নিয়ে গিয়ে বাক্সে ফেলে দিলেই ভোট দান সম্পন্ন হয়।
প্রসঙ্গত, গোপন ব্যালটে ভোট হয় না উত্তর কোরিয়ায়। ব্যালট বাক্স সকলের সামনেই খোলা অবস্থায় রাখা হয়। বুথের মধ্যে একটি জায়গা ঘেরা থাকে। সেখানে গিয়ে কেউ ব্যালটে থাকা নাম কেটে দিতে পারেন। তবে সেক্ষেত্রে উত্তর কোরিয়ার পুলিশ খোঁজ শুরু করে ওই ব্যক্তির। পাশাপাশি, তাকে পাগল বলেও ঘোষণা করা হয়।
মূলত, সরকারের প্রতি আনুগত্যের পরীক্ষা হিসেবে ভোট হয় উত্তর কোরিয়ায়। ভোটদান হয়ে গেলে আনন্দে মেতে ওঠেন কোরিয়াবাসী। ভোটের ফল সন্ধ্যার মধ্যেই সরকারি টিভি চ্যানেলে সম্প্রচার করা হয়। সেখানেও নির্বাচনের দিনকে রাষ্ট্রীয় উৎসবের দিন বলে দেখানো হয়।
উঃ কোরিয়ার সংসদের ক্ষমতা
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দাবি, উত্তর কোরিয়ার পার্লামেন্ট তথা SPA-র হাতে কোনও ক্ষমতাই নেই। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ভাষায় একে ‘রাবার স্ট্যাম্প সংসদ’ (Rubber Stamp Parliament) বলা হয়। কিমের দেশের ক্ষমতাসীন দল আইন তৈরি করে। সেগুলিকে অনুমোদন দেয় SPA।
উল্লেখ্য, কিমের নেতৃত্বাধীন Workers’ Party-র কাছে রয়েছে সবচেয়ে বেশি আসন। এছাড়াও Social Democratic Party ও চেন্ডোইস্ট চঙ্গু পার্টিরও কিছু আসন রয়েছে। এই তিন দল মিলে তৈরি করেছে Democratic Front for Reunification of Korea। এই জোটই শাসন করে উত্তর কোরিয়া।