সাংবাদিকদের সুরক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রোটেক্ট (সিপিজে) বাংলাদেশের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার আহ্বান জানিয়েছে।
সোমবার (১১ নভেম্বর) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ইমেইলে পাঠানো এক চিঠিতে এ আহ্বান জানানো হয়েছে।
সিপিজের সিইও জোডি গিন্সবার্গের পাঠানো চিঠিটি সোমবার রাতে সংগঠনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়।
চিঠিতে বলা হয়, ৪ নভেম্বর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় ঘোষণা করে যে সাইবার নিরাপত্তা আইন এক সপ্তাহের মধ্যে বাতিল করা হবে। আইনটি ২০২৩ সালে পাস করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল, যা পূর্ববর্তী সরকারের অধীনে সাংবাদিকদের উপর দমন করার জন্য বারবার ব্যবহার করা হয়। বর্তমানে কয়েক ডজন সাংবাদিক, যাদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং তার ক্ষমতাচ্যুত দল আওয়ামী লীগের সমর্থক বলে মনে করা হয়, আপাত প্রতিশোধ হিসেবে পুলিশি তদন্তের সম্মুখীন হয়। অক্টোবরের শেষের দিকে এবং নভেম্বরের শুরুতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য মন্ত্রণালয় এই সাংবাদিকদের বেশ কয়েকজনের প্রেস অ্যাক্রিডিটেশন প্রত্যাহার করে, যাদের মধ্যে চারজন এখনো কারাগারে রয়েছেন।
চিঠিতে সিপিজে সাংবাদিকতা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে তার সাংবিধানিক ক্ষমতার পরিধির মধ্যে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহ্বান জানায়।
এর মধ্যে রয়েছে, দণ্ডবিধির অধীনে ফৌজদারি মানহানি মামলা এবং ঔপনিবেশিক যুগের অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, ১৯২৩-সহ দমনমূলক আইনের উপর অবিলম্বে স্থগিতাদেশ আরোপ, যা মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায় বাংলাদেশের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতাকে ক্ষুণ্ণ করে।
চিঠিতে বলা হয়, আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাম্প্রতিক ঘোষণাকে স্বাগত জানাই যে সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ বাতিল করা হবে। সিপিজে সাইবার নিরাপত্তা আইনের পূর্বসূরি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮, সেইসঙ্গে ফৌজদারি মানহানি আইন এবং অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের ব্যাপক ব্যবহার নথিভুক্ত করেছে, যাতে স্বাধীন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার এবং দীর্ঘায়িত হয়রানির শিকার হতে হয়।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা শত শত ফৌজদারি মামলা প্রত্যাহার বা খারিজ করার আহ্বান জানানো হয় চিঠিতে। বলা হয়, এর মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০৬-এর বাতিল হওয়া ধারা ৫৭-এর অধীনে মামলা রয়েছে।
বিগত সরকারের সময়ে করা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের মামলার মধ্যে ফটোসাংবাদিক এবং সিপিজে-এর ২০২০ ইন্টারন্যাশনাল প্রেস ফ্রিডম অ্যাওয়ার্ড বিজয়ী শহীদুল আলম, রিপোর্টার পলাশ কুমার দের (প্রান্ত পলাশ নামেও পরিচিত) কথা উল্লেখ করা এ চিঠিতে।
ঢাকাভিত্তিক থিঙ্ক ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর গভর্নেন্স স্টাডিজ অনুসারে, আওয়ামী রীগ সরকারের সময়ে সাংবাদিকরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দ্বিতীয় সবেচেয়ে খারাপ শিকার হয়, যার অধীনে গণমাধ্যমকর্মীদের বিরুদ্ধে ৪০০টিরও বেশি মামলা দায়ের করা হয়েছিল।
এ বিষয়টিও চিঠিতে উল্লেখ করেছে সিপিজে।
আওয়ামী লীগ সমর্থক চারজন কারাবন্দী সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, মোজাম্মেল বাবু এবং শ্যামল দত্তের মুক্ত বিচারের অধিকারসহ প্রক্রিয়াগত অধিকারকে বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ সম্মান করে- এটা নিশ্চিত করতে বলেছে সিপিজে।