লাইফস্টাইল

মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসের কারণ, উপসর্গ ও চিকিৎসা

লাইফস্টাইল

ছবি: সংগৃহীত

মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস (MS) একটি দীর্ঘমেয়াদী মস্তিষ্ক ও স্নায়ুতন্ত্রের রোগ।  যা মস্তিষ্ক স্পাইনাল কর্ড এবং দেহের অন্যান্য অংশে স্নায়ুর কার্যক্রম বিঘ্নিত করে। এই রোগে শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা (immune system) ভুলভাবে মস্তিষ্ক ও স্নায়ু সেলের সুরক্ষিত আবরণ মায়েলিন শীট-কে আক্রমণ করে, যার ফলে মস্তিষ্ক এবং শরীরের অন্যান্য অংশের মধ্যে সিগন্যাল প্রেরণ ব্যাহত হয়। এর ফলে বিভিন্ন শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা তৈরি হতে পারে।

মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসের সঠিক কারণ এখনও পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে কিছু কারণের ওপর এই রোগটি নির্ধারণ করা যায়। 

জিনগত কারণ: MS আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কিছু পরিবারে বেশি থাকে, এবং জিনগত কিছু পরিবর্তনের কারণে রোগের প্রবণতা বেড়ে যেতে পারে।

অটোইমিউন প্রতিক্রিয়া: এটি একটি অটোইমিউন রোগ। যেখানে শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থা নিজের স্নায়ু কোষের সুরক্ষিত আবরণ আক্রমণ করে।  কম সূর্যালোক এবং ভিটামিন ডি এর অভাব।  এছাড়া ভাইরাল সংক্রমণের মতো পরিবেশগত কারণও এই রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।  মহিলাদের মধ্যে এই রোগের প্রবণতা পুরুষদের তুলনায় বেশি।  সাধারণত ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সী ব্যক্তিরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হন।

মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসের উপসর্গ

এই রোগের উপসর্গ ব্যক্তিভেদে পরিবর্তিত হতে পারে। তবে কিছু সাধারণ উপসর্গ রয়েছে। যেমন- 

শরীরের দুর্বলতা:

বিশেষ করে হাত-পায়ে শক্তি হ্রাস, চলাফেরায় সমস্যা হওয়া।

দৃষ্টির সমস্যা:

এক চোখে দৃষ্টি মুছে যাওয়া বা ঝাপসা দৃষ্টি দেখা।

সমন্বয় এবং ভারসাম্য সমস্যা: 

হাঁটতে সমস্যা, দুলে চলা বা কাঁপুনি।

শরীরের অংশে অনুভূতির অভাব: পিন অ্যান্ড নিডল অনুভূতি, বা শরীরের অংশে অস্বস্তি।

মানসিক সমস্যা:

উদ্বেগ, হতাশা, স্মৃতিশক্তি দুর্বল হওয়া।

মূত্র ত্যাগের সমস্যা:

মূত্র ধারণে সমস্যা, ঘন ঘন মূত্রত্যাগের অনুভূতি বা কঠিনভাবে মূত্র ত্যাগ।

নিউরোপ্যাথিক ব্যথা:

শরীরের নানা অংশে ব্যথা, যেমন হাত, পা বা পিঠে ব্যথা।

মাল্টিপল স্ক্লেরোসিসের সম্পূর্ণ চিকিৎসা না হলেও কিছু চিকিৎসা এবং থেরাপির প্রচলন রয়েছে। MS এর গতি ধীর করার জন্য কিছু ঔষধ রয়েছে যা রোগের বিকাশ রোধে সহায়ক হতে পারে।

স্টেরয়েড থেরাপি:

তীব্র উপসর্গ বা প্রদাহ কমাতে স্টেরয়েডের ব্যবহার করা হতে পারে।

ফিজিওথেরাপি:

শরীরের কার্যক্ষমতা বাড়ানোর জন্য ফিজিওথেরাপি সহায়ক হতে পারে।

মানসিক সহায়তা:

উদ্বেগ বা হতাশা কমানোর জন্য কাউন্সেলিং বা থেরাপি নিতে হতে পারে।

অ্যান্টি-স্প্যাস্টিক ও পেইন মেডিকেশন:

পেশীর টান বা ব্যথা কমাতে চিকিৎসকের পরামর্শে বিভিন্ন ঔষধ ব্যবহার করা হতে পারে।

রোগীকে সুস্থ থাকতে এবং শারীরিক কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে একটি সুস্থ জীবনযাপন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস, এবং নিয়মিত শারীরিক অনুশীলন করার পরামর্শ দেওয়া হয়। মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস জটিল এবং দীর্ঘমেয়াদী রোগ হলেও চিকিৎসা ও সচেতনতার মাধ্যমে রোগী তাদের জীবনের গুণগত মান বজায় রাখতে পারে।

এসকে//