সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড নিয়ে চলমান বিরোধের মধ্যে আজ সোমবার (৬ মে) থেকে দেশজুড়ে এক ঘণ্টার কর্মবিরতি শুরু করেছেন শিক্ষকরা। তারা দাবি করছেন, তাদের বেতন গ্রেড অন্তত ১১তম নির্ধারণ করতে হবে, যেটি শুরু থেকেই কার্যকর করতে হবে। বর্তমানে সরকারের পক্ষ থেকে ১২তম গ্রেডে বেতন দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যা শিক্ষকদের মতে, ন্যায্য নয়।
শিক্ষকরা রোববার পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিলেন সরকারের কাছে তাদের দাবি পূরণের জন্য। দাবির মধ্যে রয়েছে সহকারী শিক্ষকদের শুরু থেকেই ১১তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ করা হোক, চাকরির ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে স্বাভাবিক নিয়মে উচ্চতর গ্রেড দেওয়া হোক, প্রধান শিক্ষক পদে সকল শিক্ষককে পদোন্নতি প্রদান করতে হবে।
এ দাবিতে শিক্ষকরা আগামী ১৫ মে পর্যন্ত এক ঘণ্টার কর্মবিরতি চলবে। এরপর আন্দোলন আরও তীব্র হবে। ১৬ থেকে ২০ মে পর্যন্ত দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি এবং ২১ থেকে ২৫ মে পর্যন্ত অর্ধদিবস কর্মবিরতির ঘোষণা দিয়েছেন তারা। পরবর্তীতে ২৬ মে থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতির হুমকি দিয়েছেন।
এই কর্মবিরতি সারাদেশে ৬৫,৬২০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পালন করা হচ্ছে, যেখানে প্রায় ৪ লাখ শিক্ষক কর্মরত আছেন।
আজ সোমবার থেকে শুরু হওয়া এই কর্মবিরতি চলবে ১৫ মে পর্যন্ত। এরপর পর্যায়ক্রমে কর্মবিরতির সময় আরও বৃদ্ধি করা হবে। ৬ মে থেকে ১৫ মে এক ঘণ্টার কর্মবিরতি,১৬ মে থেকে ২০ মে দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি,২১ মে থেকে ২৫ মে অর্ধদিবস কর্মবিরতি,২৬ মে থেকে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি (দাবি পূরণ না হলে)।
শিক্ষকরা দীর্ঘদিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছেন যে, সহকারী শিক্ষকদের শুরুতেই ১১তম গ্রেডে বেতন দেওয়ার মাধ্যমে তাদের কর্মদক্ষতা ও সম্মান ফিরিয়ে দেওয়া উচিত। তারা দাবি করছেন, বর্তমানে ১২তম গ্রেডে বেতন নির্ধারণ করা হচ্ছে, যা শিক্ষকদের পক্ষে অত্যন্ত অযৌক্তিক। পাশাপাশি তারা ১০ ও ১৬ বছরের চাকরিতে পদোন্নতির সমস্যা সমাধান এবং প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতি চান।
এই কর্মবিরতি প্রতিবাদী শাখা থেকে এক ঘণ্টা করে চালানো হচ্ছে। আন্দোলন ধাপে ধাপে তীব্র হবে এবং এর মধ্যে শিক্ষকরা শ্রেণীকক্ষে পাঠদান বন্ধ রেখে কর্মবিরতিতে অংশ নেবেন।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে দাবি পূরণের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হলেও এখনও কোনও সুষ্ঠু সমাধান আসেনি, যার ফলে শিক্ষকরা আন্দোলন জারি রেখেছে ।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তাদের গঠিত পরামর্শক কমিটি ইতোমধ্যে একটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে, যেখানে প্রাথমিক শিক্ষকদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো বাস্তবায়নের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এতে সহকারী শিক্ষক পদ বিলুপ্ত করে ‘শিক্ষক’ পদ শুরু করার সুপারিশ করা হয়েছে, যার জন্য ১২তম গ্রেড হবে শুরুতে। দুই বছর পর সিনিয়র শিক্ষক পদে তাদের বেতন ১১তম গ্রেডে উন্নীত হবে। এছাড়া প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডে বেতন দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যা উচ্চ আদালতের নির্দেশ অনুসারে বাস্তবায়ন হচ্ছে।
গেলো ১৩ মার্চ উচ্চ আদালত রায় দিয়েছিল যে, প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১০ম গ্রেডে নির্ধারণ করতে হবে। এছাড়া, প্রধান শিক্ষকদের দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদাও প্রদান করা হয়। তবে সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১০ম গ্রেডে নির্ধারণের জন্য আলাদা কাঠামো প্রয়োজন বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন এবং প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজের সভাপতি শাহিনুর আল-আমীন বলছেন, সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড দেওয়া না হলে তারা আন্দোলন আরও কঠোর করবেন।
এসকে//