জাতীয়

এক ট্রেন ধুতেই খরচ ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা

ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ রেলওয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ট্রেন ধোয়ার জন্য ৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি ওয়াশিং প্ল্যান্ট  বা স্বয়ংক্রিয় ধৌতকরণ ব্যবস্থা  কিনেছিলো। কিন্তু স্থাপনের ২০ মাসের মাথায় প্ল্যান্ট দুটি বন্ধ হয়ে যায়।

রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, দুটি প্ল্যান্ট দিয়ে ২ হাজার ৯২৯ বার ট্রেন ধোয়া হয়েছিল। প্ল্যান্ট দুটি স্থাপনে ব্যয় এবং প্রতিটি ট্রেন ধোয়ার পেছনে সরকারের ব্যয় হিসাব করলে দেখা যায় ট্রেন প্রতি খরচ হয়েছে প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। অথচ  প্রচলিত ব্যবস্থায় হাতে ট্রেন ধুতে খরচ হয় ১ হাজার টাকার মতো।

রেলওয়ে জানিয়েছে, প্ল্যান্ট দুটির একটি স্থাপন করা হয় ঢাকার কমলাপুরে, অন্যটি রাজশাহীতে।

ওয়াশিং প্ল্যান্ট নামে যে ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছিলো, তাতে মূলত কিছু স্বয়ংক্রিয় ব্রাশ, সাবানপানি ও সাধারণ পানি ছিটানোর ব্যবস্থা এবং কয়েকটি বৈদ্যুতিক পাখা ছিলো। সাধারণ এই ব্যবস্থা তৈরিতে এত ব্যয় নিয়ে তখনই প্রশ্ন উঠেছিল।

রেল কর্মকর্তারা বলছেন, অনেক দিন ধরে প্ল্যান্ট দুটি বন্ধ। সেগুলো পুনরায় চালু করতে আরও বিনিয়োগ দরকার,যা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের সাবেক সংসদ সদস্য ফজলে করিম চৌধুরী দুই মেয়াদে রেলপথ মন্ত্রণালয়সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ছিলেন। ওয়াশিং প্ল্যান্ট সরবরাহে যুক্ত প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশ প্রতিনিধির পক্ষে ফজলে করিম কাজ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ফজলে করিম চৌধুরী ভারতে পালানোর সময় বিজিবির হাতে আটক হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন।

রেলের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা জানান,ওয়াশিং প্ল্যান্ট দুটি কেনা হয়েছিল কোচ কেনার একটি প্রকল্পের আওতায়। শুধু প্রকল্প বড় করার জন্যই এই যন্ত্র কেনা হয়েছিল। রেলের কিছু কর্মকর্তা এবং বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীর আগ্রহে যন্ত্র দুটি কেনা হয়।

রেলওয়ের নথিপত্র সূত্রে জানা যায়, ওয়াশিং প্ল্যান্ট দুটির যন্ত্রপাতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেনা হয়েছিলো। এই যন্ত্রের কার্যকারিতা দেখতে ২০১৯ সালে তিনজন কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্র সফর করেন। এর মধ্যে রেলের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি রোলিং স্টক) সৈয়দ ফারুক আহমেদ যন্ত্র কেনার কিছুদিন পরই অবসরে যান। প্রকল্প পরিচালক ফকির মো. মহিউদ্দিন এখনো রেলে কর্মরত। বর্তমানে তিনি ২০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন ও ১৫০টি মিটারগেজ কোচ কেনার প্রকল্পের পরিচালক। এই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ১৫৮ কোটি টাকা।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ফকির মো. মহিউদ্দিন রেলওয়েতে বৈষম্যবিরোধী ফোরাম প্রতিষ্ঠা করে এর মুখ্য সমন্বয়ক হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করা আরেকজন হচ্ছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন উপসচিব মাহাবুবুল হক।

স্বয়ংক্রিয় ওয়াশিং প্ল্যান্ট কেনার সময় বলা হয়েছিল, সনাতন পদ্ধতিতে ট্রেন ধোয়ার কাজে যে পরিমাণ পানি খরচ হয়, এর চেয়ে প্রায় ৯০ শতাংশ কম পানি লাগবে। তা ছাড়া একবার ব্যবহৃত পানি শোধন করে আবার কাজে লাগানো যাবে। কিন্তু এই ব্যবস্থা কখনোই এ ধৌত ব্যবস্থায় ছিলো না।

রেলের কোচ ধোয়ার কাজে নিয়োজিত কর্মীরা গণমাধ্যমকে জানান, গড়ে ১০ জনের একটা দল দিনে চারটি ট্রেন ধোয়ার কাজ করতে পারেন। তাঁদের একেকজনের মাসিক বেতন ৮ থেকে ১২ হাজার টাকা। কমলাপুরে সব মিলিয়ে  ৭০ জনের মতো কর্মী কাজ করেন। তাঁদের পেছনে বছরে ব্যয় ১ কোটি টাকার কম।

অথচ একেকটি স্বয়ংক্রিয় ওয়াশিং প্ল্যান্টের পেছনে ১৮ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। হিসাব অনুযায়ী এ যন্ত্র কেনার সমপরিমাণ টাকা দিয়ে সনাতন ব্যবস্থায় প্রায় ১৮ বছর শ্রমিকদের বেতন দেয়া সম্ভব।

রেলের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা জানান, ওয়াশিং প্ল্যান্ট যতদিন চালু ছিলো, তখনও তাদের কাজ করতে হত। কারণ মেশিন দিয়ে কেবল রেলের বাহিরের অংশ পরিষ্কার করা যেতো। ভেতরের অংশ সনাতন পদ্ধতিতেই পরিষ্কার করতে হত।

প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের নভেম্বরে ওয়াশিং প্ল্যান্টগুলো  উদ্বোধন করেছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের তৎকালীন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।

 

আই/এ

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন ট্রেন | ধোয়া