জাতীয়

বাংলাদেশের নিয়ে এবার কথা বললেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং

বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত সবসময় সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায় বলে জানিয়েছেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির সাবেক সভাপতি রাজনাথ সিং। শনিবার(৮ মার্চ) ভারতের বার্তা সংস্থা ইন্দো-এশিয় নিউজ সার্ভিসকে (আইএএনএস)  দেয়া বিশেষ সাক্ষাতকারে তিনি একথা বলেন।

বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ  সিং বলেন,

 ‘ভারত সবসময় তার প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায় এবং বাংলাদেশও আমাদের প্রতিবেশী দেশ। আমরা সবসময় আমাদের প্রতিবেশীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা করি। কারণ (সাবেক প্রধানমন্ত্রী) অটল বিহারী বাজপেয়ী বলতেন, আমরা আমাদের বন্ধুদের পরিবর্তন করতে পারি; প্রতিবেশীদের নয়। সুতরাং আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চাই।’

 

প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে গেলো ৫ আগস্ট বাংলাদেশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এরপর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসে। বর্তমান সরকারের শাসনামলে বাংলাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে একাধিকবার উদ্বেগ জানিয়েছে নয়াদিল্লি।

গেলো শুক্রবারও নয়াদিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের  নিয়মিত সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

এর আগে, গেলো ২৫ ফেব্রুয়ারি এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ভারতকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক চায়। আশপাশ থেকে দু’চারজন কী বলল, না বলল সেটাতে মনোযোগ না দিয়ে আমরা বরং আমাদের সম্পর্ক ভালো করার চেষ্টা করি।

একদিন আগে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্করের এ সংক্রান্ত বক্তব্য নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।

ওইদিন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন আরও বলেন, তিনি (জয়শঙ্কর) বলেছেন, কেমন সম্পর্ক চায় বাংলাদেশ; সেটা বাংলাদেশকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অবশ্যই বাংলাদেশ সিদ্ধান্ত নেবে, ভারতের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক চায়। একইভাবে ভারতকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তারা বাংলাদেশের সঙ্গে কেমন সম্পর্ক চায়। এটা দুই পক্ষেরই বিষয়, এটা বলাতে দোষের কিছু নেই।

শুক্রবার(৭ মার্চ) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণবীর জয়সওয়াল অভিযোগ করে বলেন, ‘আমরা বারবার উল্লেখ করেছি হিন্দুসহ অন্যান্য সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চয়তা করার দায়িত্ব বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের। আমি ফের একবার এই বিষয়ের উপর জোর দেব। একই সঙ্গে সংখ্যালঘুদের জীবন, সম্পত্তি ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রক্ষার দায়িত্ব সে দেশের অন্তর্বর্তী সরকারের।

শুক্রবারের প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রথম বারের মতো ভারতের পক্ষ থেকে সংখ্যালঘুদের ওপর ‘নির্যাতনের’ একটি খতিয়ানও দেওয়া হয়। মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল সেই খতিয়ান নিয়ে বলেন,

‘আপনারা দেখেছেন ২০২৪ সালর বছরের ৫ আগস্ট থেকে এবছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ২৩৭৪টি সংখ্যালঘু নির্যাতনের মামলা দায়ের হয়েছে। যার মধ্যে সে দেশের পুলিশ  এক হাজার ২৫৪টি ঘটনা খতিয়ে দেখেছে। আর এসব ঘটনার ৯৮ ভাগই রাজনৈতিক মোড়ক দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।  ভারত চায় খুন, অগ্নি সংযোগ, হিংসার ঘটনাকে রাজনৈতিক রঙ না দিয়ে প্রতিটি ঘটনার যথাযথ ও পুঙ্কানুপুঙ্খ তদন্ত শেষে  অপরাধীদের সাজা দেওয়া হোক।’

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অভিযোগ প্রসঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘সংখ্যালঘু সম্পর্কে তিনি(ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র) আবার বলেছেন। এই অভিযোগ প্রধানত ভারতীয় মিডিয়ার যে বিকৃত তথ্যপ্রবাহ সৃষ্টি করেছে, তার ভিত্তিতে এগুলো বিভিন্নজন বিভিন্ন জায়গায় বলে বেড়াচ্ছে।

এম তৌহিদ হোসেন আরও বলেন, বাংলাদেশের সংখ্যালঘু ভারতের বিষয় হতে পারে না। বাংলাদেশের সংখ্যালঘু বাংলাদেশের বিষয়। ভারতের সংখ্যালঘুর বিষয়টি আবার তাদের বিষয়। কাজেই এ ব্যাপারে অন্যের বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতিতে যেতে হবে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এম তৌহিদ হোসেনের এমন বক্তব্যেরে পরই মূলত ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার বিষয়টি উল্লেখ করলেন।

এমআর//

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন রাজনাথ সিং