২০২৪ সালের বন্যা ছিল আগের যেকোনো বছরের চেয়ে ভিন্ন এবং ভয়াবহ- এমন মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই শুরু হয় এই অপ্রত্যাশিত দুর্যোগ। শুরুতে আমরা বুঝতেই পারিনি, এই অঞ্চলে আদৌ এমন বন্যা হতে পারে। এটা ছিল একেবারেই ভিন্ন প্রেক্ষাপটের বন্যা- যা অতীতে সাধারণত দেখা যায়নি। এই বন্যার গভীরতা বা মানুষের জীবনে এর প্রভাব কতটা ভয়ংকর হবে, তা তখন অনুমান করা যায়নি। কেউ কেউ ভেবেছিলেন, এটা সাময়িক- দ্রুত সরে যাবে। কিন্তু সময় যত এগিয়েছে, পরিস্থিতি তত কঠিন হয়ে উঠেছে।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে ভার্চুয়ালি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের বন্যাকবলিত তিনশ পরিবারের হাতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত ঘরের চাবি তুলে দেয়া হয়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বন্যা যখন শুরু হয়, তখন ভাবতে পারিনি এটা এত ভয়াবহ রূপ নেবে। আমরা ধরে নিয়েছিলাম এটি হয়তো দ্রুতই শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু পরিস্থিতি দিনকে দিন জটিল হয়ে উঠছিল।’
তিনি জানান, বন্যায় ঘর হারানো মানুষের জন্য শুরুতে অনেকে নগদ অর্থ সহায়তার প্রস্তাব দিলেও তিনি সরাসরি টাকা দেয়ার পক্ষে ছিলেন না। কারণ এতে সঠিকভাবে অর্থ পৌঁছানো নিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়। পরে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ঘর নির্মাণের প্রস্তাব আসলে তিনি স্বস্তি পান- বিশেষ করে যখন জানতে পারেন এটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী।
ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দিয়েছিলাম, তার অর্ধেক খরচেই ঘর নির্মাণ সম্ভব হয়েছে। এটা সত্যিই ব্যতিক্রম। সাধারণত যেখানে এক টাকা বরাদ্দ দিলেই দুই টাকা দাবি আসে, সেখানে এখানে বরাদ্দের অর্ধেকেই কাজ শেষ হয়েছে- এটা আনন্দের খবর।’
তিনি ঘরগুলোর গুণগত মান নিয়েও সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং বলেন, সঠিক পরিকল্পনা ও সততার মাধ্যমে কীভাবে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া যায়- এই প্রকল্প তার উদাহরণ।
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আজ যাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই হলো, তাদের সন্তানদের উন্নত ভবিষ্যতের দিকে নজর দিতে হবে। নতুন ঘর শুধু আশ্রয় নয়, এটি একটি নতুন সম্ভাবনার দরজা।’
অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকারউজ্জামানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ড. ইউনূস সেনাবাহিনীর দক্ষতা ও দায়বদ্ধতার প্রশংসা করে বলেন, ‘তাদের হাতে দায়িত্ব তুলে দিতে পেরে আমরা নিশ্চিত ছিলাম- অর্থের অপচয় হবে না। সেটিই প্রমাণিত হয়েছে।’
এসি//