বাংলাদেশ

রাজধানীতে শ্রমিক দিবস উদযাপন: আনন্দের মাঝে দাবির গল্প

মঈন হাসান, ঢাকা

ছবি: ফাহিম

আজ আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হয়েছে। 

দিনটিতে সরকারি ছুটি থাকায় সকাল থেকেই ঢাকার রাস্তা ছিল বেশ ফাঁকা। পাবলিক পরিবহণের সংখ্যাও ছিলো অনেকটা হাতেগোনা। তবে কিছু বাস শ্রমিকদের নিয়ে ছুটছিল বিভিন্ন স্থানে। উদ্দেশ্য রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে হওয়া শ্রমিক সমাবেশ ও সেমিনারে অংশগ্রহণ।

সকাল ৯ টার দিকে সংসদ ভবনের সামনের রাস্তায় জমায়েত করেছেন ২০-২৫ জন মানুষ। যারা একটি ব্যানার হাতে শ্রমিক দিবসের অনুষ্ঠান করছেন। একটি হ্যান্ডমাইকে বক্তৃতা রাখছেন কেউ কেউ।     

কাকরাইলে শ্রম ভবনের সামনে সকাল ১০ টায় বাংলাদেশ আউটসোর্সিং কর্মচারীরা সমাবেশ করেছেন। সরকারি ও স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে দৈনিক মজুরিতে যারা কাজ করে থাকেন, তারাই মূলত আউটসোর্সিং কর্মচারী হিসেবে পরিচিত।      

এসব কর্মচারীদের অনেকেই বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত আছেন। আবার কেউ হয়েছেন চাকরিচ্যুত। তারা একাধিক দাবি নিয়ে একত্র হয়েছেন। যার মধ্যে অন্যতম, আউটসোর্সিং কর্মচারীদের নিয়ে ২০২৫ সালে করা নীতিমালা বাতিল। এছাড়াও শ্রম কমিশনের সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন তারা। 

বায়ান্ন টিভি
বায়ান্ন টিভি

আউটসোর্সিং কর্মচারীরা আরও আগে থেকেই নিজেদের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। তাদের দেওয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আউটসোর্সিং কর্মচারীরা বছরের পর বছর কর্মরত থেকেও চাকরির স্থায়িত্ব, ন্যায্য মজুরি, পেনশন সুবিধা ও শ্রম অধিকার থেকে বঞ্চিত। এ যেন আধুনিক দাসপ্রথার এক নির্মম উদাহরণ।

আউটসোর্সিং কর্মচারীদের এই সমাবেশে বিভিন্ন শ্রমিক নেতা তাদের বক্তব্য রেখেছেন। সকলেই তাদের দাবির সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছেন। একাধিক কর্মচারীর সঙ্গে কথা বলে তাদের দুঃখ ও অভিযোগের কথা জানা যায়। তারা কেউ কেউ বিনা নোটিশে চাকরিচ্যুত হয়েছেন বলেও জানান।

ঢাকার একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের এক আউটসোর্সিং কর্মী জানালেন, মহামারি করোনাকালীন সময়ে যারা সেবা দিয়েছে, তাদের চাকরিচ্যুত করা হবে না- এমন এক প্রতিশ্রুতি পেয়েছিলেন তারা। এমনকি কোভিড চলাকালীন সময়ে তিনি যে সেবা দিয়েছেন, তার কাছে সেই সার্টিফিকেট রয়েছে। তবে এই কর্মী ক্ষোভ প্রকাশ করলেন, তাকেও চাকরিচ্যুত করেছে প্রতিষ্ঠান।

আউটসোর্সিং কর্মচারীরা ছাড়াও রাজধানীর আরও প্রতিষ্ঠান থেকে মিছিল ও ব্যানারসহ শ্রমিকরা জড়ো হতে থাকেন।

প্রায় সবগুলো মিছিল শ্রম ভবন ঘুরে প্রেসক্লাবের সামনে অবস্থান করে। সেখানে গার্মেন্টস শ্রমিকদের পক্ষে একাধিক সংগঠন চোখে পড়ে। গ্রীণ বাংলা গার্মেন্টস ওয়ার্কাস ফেডারেশন নামে একটি সংগঠনের কয়েকজনের সঙ্গে কথা হলো। তারা গার্মেন্টস শ্রমিকদের হতাশার কথা, চাওয়ার কথা তুলে ধরলেন।

বায়ান্ন টিভি
বায়ান্ন টিভি

তাদের ব্যানারে দেখা গেল বেশ কিছু দাবি। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল, জাতীয় ন্যূনতম মজুরী ঘোষণা, ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করা এবং নারীর মাতৃত্বকালীন ছুটির বৈষম্য প্রসঙ্গ।

নারীর মাতৃত্বকালীন ছুটি প্রসঙ্গে তারা বলছেন, পাবলিক সেক্টরের মতো গার্মেন্টস সেক্টরেও ৬ মাসের ছুটির আইন করতে হবে।

প্রেসক্লাবের সামনে থেকে শ্রমিক ও শ্রমিক নেতাদের কণ্ঠ ভেসে আসতে থাকে। দুপুরের দিকে রোদের মধ্যেই দেখা দেয় কিছুটা বৃষ্টি। আর শ্রমজীবী মানুষের এই দিন পরিণত হয় আনন্দের মাঝেই দাবি জানানোর এক উপলক্ষ।

দিন বাড়ার সাথে সাথে লাল ক্যাপ আর মাথায় লাল ব্যান্ডের জনসমুদ্র কমতে থাকে। শ্রমিকরা ফিরে যান নিজেদের ঘরে। কাল আবারও এই শ্রমিকরা যোগ দেবেন কর্মস্থলে, চলতে থাকবে তাদের ন্যায্যতার লড়াই। 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস | মে দিবস | রাজধানী