দেশজুড়ে

ইউএনওর অনুমতিপত্র জাল করে মিয়ানমারে নির্মাণ সামগ্রী পাচার

কক্সবাজার প্রতিনিধি

রাখাইন রাজ্যে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পর থেকে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে চোরাচালান আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সম্প্রতি একটি ট্রলার নির্মাণ সামগ্রী নিয়ে সেন্টমার্টিন যাওয়ার কথা বলে যাত্রা শুরু করলেও শেষমেশ তা পৌঁছে গেছে মিয়ানমারে। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনায় ব্যবহার করা হয়েছে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) জাল অনুমতিপত্র।

বুধবার (৩০ এপ্রিল) দুপুরে টেকনাফ থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রলারটিতে ছিল উল্লেখযোগ্য পরিমাণ নির্মাণ সামগ্রী।

ট্রলারটি অনুমোদিত গন্তব্য সেন্টমার্টিনে না গিয়ে সরাসরি পাড়ি জমায় মিয়ানমারের আরাকান অঞ্চলে। অনুমোদনের বাইরে অতিরিক্ত ৪০০ ব্যাগ সিমেন্ট পাচার করা হয়।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ এহসান উদ্দিন ২৮ এপ্রিল একটি অনুমতিপত্র জারি করেন, যাতে ২০ ব্যাগ সিমেন্ট, ৯ বাইন টিন, ৭০ ফুট কাঠ, ৩০ কার্টুন টাইলস ও ৩০০ ফুট বালু সেন্টমার্টিনে পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হয়। অনুমতিপত্রের স্মারক নম্বর ছিল: ০৫.২০.২২৯০.০০০.০৯.১৪.২৫.৮১৭।

কিন্তু পাচারকারী সিন্ডিকেট এই অনুমতিপত্র জাল করে। একদিকে স্মারক নম্বরের দুটি অঙ্ক বদলে তারা তৈরি করে একটি প্রায় হুবহু নকল কপি, অন্যদিকে সামগ্রীর তালিকায় কৌশলে সিমেন্টের পরিমাণ ২০ ব্যাগ থেকে বাড়িয়ে ৪০০ ব্যাগ দেখানো হয়। টিন, কাঠ ও টাইলসের পরিমাণ অপরিবর্তিত রাখা হয় যাতে অনুমতিপত্রটি বাস্তব বলে মনে হয়।

ধারণা করা হচ্ছে, এই চক্রের সঙ্গে যুক্ত আছেন ট্রলার মালিক মোহাম্মদ আলম, ইউপি সদস্য মাহফুজা আক্তার, প্রশাসনের কর্মচারী আসেকুর রহমান, ইউপি সদস্য আকতার কামাল, ট্রলার মাঝি নুরুল ইসলাম, লাইনম্যান জাহাঙ্গীর আলম এবং কেফায়েত উল্লাহ। চক্রটি দীর্ঘদিন ধরেই প্রশাসনিক কাগজপত্র জাল করে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বিভিন্ন সামগ্রী পাচার করে আসছে।

সার্ভিস ট্রলারের লাইনম্যান করিম উল্লাহ জানান, ৩০ এপ্রিল দুপুরে মালামাল বোঝাই করে ট্রলারটি রওনা দেয়, কিন্তু নির্ধারিত সময়ে সেন্টমার্টিন পৌঁছায়নি। পরবর্তীতে অনুসন্ধানে জানা যায়, ট্রলারটি আরাকান এলাকায় পাচার করা হয়েছে।

টেকনাফ ইউএনও শেখ এহসান উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, অনুমতিপত্র জালিয়াতির বিষয়টি উদঘাটন হয়েছে এবং আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন এই ঘটনাকে ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি’ হিসেবে উল্লেখ করে দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। যদিও বিজিবি টেকনাফের পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

এমএ//

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন আরাকান আর্মি | রাখাইন রাজ্য | চোরাচালান