দেশজুড়ে

কোটি টাকা চাঁদা দাবি, কলাবাগান থানার ওসিসহ ২ এসআই প্রত্যাহার

বায়ান্ন প্রতিবেদন

ছবি: সংগৃহীত

চাঁদাবাজি ও মামলায় ফাঁসানোর হুমকির অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে রাজধানীর কলাবাগান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোক্তারুজ্জামান, উপপরিদর্শক (এসআই) বেলাল উদ্দিন ও এসআই আবু হুরায়রা জিহানকে। রোববার ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী তাদের সাময়িক বরখাস্ত করেন।  আওয়ামী লীগ কর্মী আবদুল ওয়াদুদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাদের বরখাস্ত করা হয়।

আবদুল ওয়াদুদ ২ মে ডিএমপি কমিশনার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন। অভিযোগে তিনি বলেন- গেল ২৯ এপ্রিল সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নিয়ে রাতে সোনারগাঁ রোডে তার বাসায় কলাবাগান থানার পুলিশ অভিযান চালায়। এসময় লুটপাট ও মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দিয়ে তার কাছ থেকে চাঁদা আদায় করে। 

অভিযোগের বিষয়ে সোমবার কলাবাগান থানার বরখাস্ত ওসি মোক্তারুজ্জামান গণমাধ্যমকে জানান, ‘আবদুল ওয়াদুদ আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয়। ৫ আগস্টের পর থেকে পলাতক ছিলেন। সম্প্রতি তিনি বাসায় ফেরার খবর পেয়ে ২৯ এপ্রিল রাতে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা তার বাসা ঘেরাও করে। ১৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. মাঈনুলের কাছে সংবাদ পেয়ে টহল পুলিশ ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়।’

ঘটনাস্থল থেকে তাকে উদ্ধারের সময় তার কোনো কিছু হারিয়েছে বা ভাঙচুর হয়েছে বলে অভিযোগ করেননি। দুইদিন পর উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অভিযোগ করেছেন। এ ছাড়া পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর অনেক পরে ৯৯৯–থেকে কলাবাগান থানায় ফোন আসে। 

এ বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) এস এন মো. নজরুল ইসলাম বলেছেন, গেল ২৯ এপ্রিল কলাবাগানের একটি বাসায় ‘মবের’ ঘটনা ঘটেছিল। সেটা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় দুজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

অন্যদিকে অভিযোগকারী আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ২৯ এপ্রিল রাত সাড়ে ১০টার দিকে এসআই বেলাল হোসেনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ও ১৫-২০ জন সন্ত্রাসী তার বাসায় জোর করে ঢুকে পড়ে। এসময় তার ম্যানেজার ৯৯৯ নম্বরে ফোন করলে শাহবাগ ও নিউমার্কেট থানার টহল দল দ্রুত ঘটনাস্থলে যায়। তখন কলাবাগান থানার ওসি ( মোক্তারুজ্জামান) নিজে উপস্থিত থেকে অন্য থানার পুলিশের দলকে চলে যেতে বলেন। এ সময় লাল মিয়া নামে এক ভাড়াটে ও বাড়ির নাইটগার্ড লুৎফরকে পুলিশের গাড়িতে তোলার নির্দেশ দেন ওসি। পুরো ঘটনার ভিডিও ও সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ করা আছে। 

অভিযোগে আরও বলা হয়, বাসার তৃতীয় তলার দরজা ভাঙার সময় তিনি ওসিকে ফোন করে সহায়তা চান। তখন আবদুল ওয়াদুদকে থানায় যেতে বলা হয়। তিনি দরজা খুললে পুলিশ সদস্যরা তাকে ঘরের ভেতরে টেনে নিয়ে যায়। জানতে চায় তার কাছে অস্ত্র ও টাকা কোথায় আছে। একপর্যায়ে মান্নান নামে একজন তাকে বলেন, এই মুহূর্তে এক কোটি টাকা দিলে থানায় যেতে হবে না। পরে দেনদরবার করে তিনি বাধ্য হয়ে দুই লাখ টাকা দেন। ব্যাংক খুললে বাকি টাকা দেওয়ার আশ্বাস দেন। রাতভর অভিযানে পুলিশ সদস্যরা তার বাসা থেকে ল্যাপটপ, সিসিটিভির হার্ডডিস্ক, কম্পিউটারসহ বেশ কিছু মালামাল নিয়ে যায়। পরে ওসি একটি ল্যাপটপ ফেরত দেন। বাকি কোনো কিছুই তিনি ফেরত দেয়া হয়নি। 

কলাবাগান থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, ওসি মোক্তারুজ্জামানকে  সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। রোববার দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে তিনি চলে গেছেন। 

ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার মাসুদ আলম বলেছেন, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ডিএমপি সদরদপ্তর। একারনে ওসি ও দুই এসআইকে প্রত্যাহার করে রমনা বিভাগে সংযুক্ত করা হয়। পরে তিনজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। 

 

এসি//

 

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন ডিএমপি | ওসি প্রত্যাহার | এসআই প্রত্যাহার