লাইফস্টাইল

গ্রিন টি: সুস্বাস্থ্যের জন্য উপকারী, তবে সতর্কতা জরুরি!

বায়ান্ন লাইফস্টাইল ডেস্ক

ছবি: সংগৃহীত

গ্রিন টি যা বিশ্বব্যাপী একটি জনপ্রিয় এবং পুষ্টিকর পানীয়। প্রায় বহু যুগ ধরে চীনা, জাপানি এবং অন্যান্য এশীয় সংস্কৃতিতে গ্রিন টি ব্যবহৃত হচ্ছে। এতে বহু গবেষণায় গ্রিন টির নানা উপকারিতা প্রমাণিত হলেও এর অতিরিক্ত খাওয়ার কিছু ক্ষতিকর দিকও প্রকাশ পেয়েছে। তাই এর স্বাস্থ্য উপকারিতা এবং কিছু সতর্কতার বিষয়ে আরও বিস্তারিত জানা জরুরি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বিভিন্ন গবেষণায় পাওয়া ফলাফল অনুযায়ী গ্রিন টি উপকারী হলেও এর সঠিক পরিমাণ ও সঠিক সময়ে গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ।

হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের গবেষক ড. এডওয়ার্ড হট (Edward Hott) জানান, গ্রিন টি অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর। তবে এর অতিরিক্ত সেবন লিভারের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। তাই এটি পরিমাণমতো খাওয়া উচিত। 

এছাড়া ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার অধ্যাপক ড. রাহুল শাহ (Rahul Shah) জানান, গ্রিন টি সরাসরি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করতে সহায়তা করে। তবে এতে কিছু উপাদান রয়েছে যা নির্দিষ্ট স্বাস্থ্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে।

গ্রিন টির উপকারিতা:

হার্টের স্বাস্থ্য:

গ্রিন টিতে থাকা ক্যাটেচিন (একধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট) রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে এবং খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) হ্রাস করতে সক্ষম। এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং রক্তনালীতে আড়ষ্টতা কমিয়ে রাখে। হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথের এক গবেষণায় জানানো হয়েছে যে, নিয়মিত গ্রিন টি পান করা হৃদরোগের ঝুঁকি ৩৫% পর্যন্ত কমাতে সাহায্য করতে পারে।

ওজন কমানো ও মেটাবোলিজম:

গ্রিন টি মেটাবোলিজম বৃদ্ধি করে এবং শরীরের চর্বি পোড়াতে সাহায্য করে। বিশেষ করে EGCG (Epigallocatechin gallate) নামক একটি যৌগ, যা গ্রিন টিতে উপস্থিত, এটি ফ্যাটের সঞ্চয় হ্রাস করে এবং শরীরের শক্তি উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করে। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া এর একটি গবেষণায় জানানো হয়েছে, গ্রিন টি মেটাবলিক রেট বৃদ্ধিতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে, বিশেষ করে যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন, তাদের জন্য এটি আরও উপকারী।

ক্যান্সার প্রতিরোধ:

গ্রিন টিতে উপস্থিত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করতে পারে। কিছু গবেষণায় বলা হয়েছে, গ্রিন টি স্তন ক্যান্সার, প্রস্টেট ক্যান্সার, ওয়ারিং ক্যান্সার এবং কোলন ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়তে সহায়তা করে। ওহিও স্টেট ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছে যে, গ্রিন টিতে থাকা ক্যাটেচিন ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধ করে।

মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ও স্মৃতিশক্তি:

গ্রিন টিতে থাকা ক্যাফিন এবং এল-থিওনিন মস্তিষ্কে সেরোটোনিন এবং ডোপামিনের উৎপাদন বাড়াতে সাহায্য করে, যা আমাদের মনোযোগ এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করে। গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রিন টি আমাদের মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করতে এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করতে পারে।

গ্রিন টির সম্ভাব্য ক্ষতি:

যদিও গ্রিন টির অসংখ্য উপকারিতা রয়েছে। তবে এর অতিরিক্ত ব্যবহার কিছু সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। যেমন- 

অতিরিক্ত ক্যাফিন:

গ্রিন টিতে ক্যাফিন থাকে, যা শরীরে উত্তেজনা সৃষ্টি করতে পারে। অতিরিক্ত ক্যাফিন গ্রহণ করলে অনিদ্রা, উদ্বেগ, মাথাব্যথা এবং মূত্রত্যাগের সমস্যা হতে পারে। তাই যারা অতিরিক্ত ক্যাফিন গ্রহণ করতে চান না, তাদের জন্য গ্রিন টি নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত।

লিভারের ক্ষতি:

গ্রিন টির অতিরিক্ত সেবন লিভারের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, বেশি পরিমাণে গ্রিন টি খেলে লিভারের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে উচ্চমাত্রায় ক্যটেচিন গ্রহণ লিভারের কার্যক্রম ব্যাহত করতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এবং অস্ট্রেলিয়ান ডিপার্টমেন্ট অব হেলথ এর এক যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে যে, অতিরিক্ত গ্রিন টি গ্রহণে লিভারের বিষক্রিয়া (toxicity) দেখা দিতে পারে।

আয়রন শোষণ রোধ:

গ্রিন টিতে উপস্থিত ট্যানিন নামে একটি উপাদান শরীর থেকে আয়রন শোষণকে বাধাগ্রস্ত করে। তাই যারা আয়রনের অভাবে ভুগছেন বা অ্যানিমিয়ায় আক্রান্ত, তাদের জন্য গ্রিন টি পরিহার করা বা নিয়ন্ত্রণে খাওয়া উত্তম।

গ্যাস্ট্রিক সমস্যা:

অনেকেই পেট খালি অবস্থায় গ্রিন টি পান করলে পেটের অস্বস্তি বা পেট ব্যথা অনুভব করতে পারেন। এটি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এজন্য গ্রিন টি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় খাবারের পর।

গ্রিন টি যেমন একদিকে শক্তিশালী পানীয় হিসেবে কাজ করে তেমনি অতিরিক্ত সেবন শরীরের উপর কিছু নেতিবাচক প্রভাবও ফেলতে পারে। তাই এটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সচেতন হওয়া জরুরি। স্বাস্থ্য উপকারিতার জন্য এটি মডারেশনে গ্রহণ করা উচিত এবং যদি আপনার বিশেষ কোনও স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে। তবে আপনার চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে এটি পান করা উচিত।

এসকে// 

 

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন #গ্রিন টি #উপকারী