চলতি বছরের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সম্মিলিত পাসের হার ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। গত বছর ছিল ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। অন্যদিকে এবার মোট এক লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৮ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছেন। গতবার দুই লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন। ফলে এবার এসএসসি ও সমমানে পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমেছে। এর ব্যাখ্যাও দিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
তার দাবি, গত বছর বা এর আগের বছরে যারা পরীক্ষা দিয়েছে, তারা তো আর পূর্ণ নম্বরে পরীক্ষা দেয়নি। তারা অল্প নম্বরে, অল্প বিষয়ে পরীক্ষা দিয়েছে, সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা দিয়েছে। কাজেই খুব স্বাভাবিকভাবে সেই সময়ে পরীক্ষার পাসের হারটা অনেক বেশি ছিল। আপনি যদি তিন বা চারটি বিষয়ে পরীক্ষা দেন; আপনি এখন ১০টি বিষয়ে পরীক্ষা দিচ্ছেন, পুরো ১০০ নম্বরে পরীক্ষা দিচ্ছেন। সেখানে আগেরবার তারা খুব কম নম্বরে পরীক্ষা দিয়েছে, কম বিষয়ে পরীক্ষা দিয়েছে।
মন্ত্রী আরও যোগ করেন, এখনকার যে পাসের হার, সেটা করোনা মহামারির আগের সময়ে, স্বাভাবিক সময়ে আমাদের যে পাসের হার ছিল, তার সঙ্গে খুবই সঙ্গতিপূর্ণ।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, আমাদের শিক্ষার্থীরা শ্রেণীকক্ষে যেন যথাযথভাবে শিক্ষাকার্যক্রম করতে পারে, আমাদের সেসব যথানিয়মে করব। আমরা আশা করবো, রাজনৈতিক দলগুলো, তারা তাদের যেকোনো কর্মসূচিই দেন না কেন, সেই কর্মসূচির কারণে আমাদের সন্তানদের পড়াশোনায় যেন ব্যাঘাত না ঘটে। অতিমারি আমাদের হাতে ছিল না, আন্দোলন আমাদের হাতে; অতিমারি সারাবিশ্বকে পর্যুদস্ত করেছে, সারাবিশ্বেই টালমাটাল পরিস্থিতি হয়ে গিয়েছিল। আমরা সেটিকেও সামাল দিয়ে এই জায়গা পৌঁছেছি। রাজনীতি-আন্দোলন আমাদের নিজস্ব বিষয়, এর ওপর আমাদের নিয়ন্ত্রণ আছে। আমরা বিশ্বাস করি রাজনীতি মানুষের জন্য, দেশের জন্য। আর আমাদের ভবিষ্যৎ হচ্ছে আমাদের শিক্ষার্থীরা, তাই শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনে জিম্মি করে কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মসূচি যেন পালন না করেন। কারণ, জনগণের কাছে সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না।
এর আগে, শুক্রবার (২৮ জুলাই) সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা ফল ঘোষণা করা হয়।
বোর্ড অনুযায়ী এবার ঢাকা শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৭৭ দশমিক ৫৫, রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৮৭ দশমিক ৮৯, বরিশাল শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৯০ দশমিক ১৮, কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৭৮ দশমিক ৪২, ময়মনসিংহ শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৮৫ দশমিক ৪৯, কারিগরি শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৮৬ দশমিক ৩৫, মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৭৪ দশমিক ৭০, দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৭৬ দশমিক ৮৪, সিলেট শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৭৬ দশমিক ৬, চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৭৮ দশমিক ২৯ এবং যশোর শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৮৬ দশমিক ১৭ শতাংশ।
এরও আগে, সকাল ৯টায় গণভবনে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে এসএসসি ও সমমানের ফলের কপি হস্তান্তর করেন শিক্ষামন্ত্রী।
এবার এসএসসি ও সমমানের ফল তিনভাবে জানতে পারবে পরীক্ষার্থীরা। ফল প্রকাশ হওয়ার পরপরই সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এক সেট পাঠিয়ে দেওয়া হবে। শিক্ষার্থী সেখান থেকে ফল সংগ্রহ করতে পারবে। এ ছাড়া শিক্ষার্থীরা ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়ে রেজাল্ট শিট ডাউনলোড করতে পারবে।
গত ৩০ এপ্রিল শুরু হয় এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। শেষ হয় ২৮ মে।
উল্লেখ্য, এবার ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ড, মাদরাসা এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডসহ ১১টি শিক্ষা বোর্ডের আওতায় মোট ২০ লাখ ২১ হাজার ৮৬৮ পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছে। সারাদেশে ২৯ হাজার ৫৯১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এসব শিক্ষার্থী মোট ৩ হাজার ৭৯০টি কেন্দ্রে পরীক্ষা দেয়।