লাইফস্টাইল

ওষুধ না খেয়েও মাইগ্রেনের যন্ত্রণা কমানোর উপায়

ছবি: সংগৃহীত

গরমের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মাথাব্যথাও যেন এখন নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে ওঠে। বেশি গরমে রোদের তেজ ঠান্ডা ঘরে ঢুকলে এসির ঠান্ডায় শীতলতা থেকে, এমনকি একটু বেশি কাজের চাপও আমাদের মাথার উপর এক গভীর ভার হয়ে উঠতে পারে। 

মাইগ্রেন বা সাধারণ মাথাব্যথা যে ধরনেরই হোক না কেন, গরমে তা প্রায় সবারই বাড়ে। তবে এ সময়ে ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে দ্রুত আরাম পাওয়া গেলেও তা কোনও সমাধান নয়। এই গরমে মাথাব্যথা কমানোর জন্য কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ মেনে চললেই সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

গরমে মাথাব্যথা যেভাবে কমাবেন

জলপান :

কোনোদিন কি মনে হয়েছে, গরমে মাথা ঘোরাতে ঘোরাতে আপনার শরীরে যেন কিছুই নেই? শরীরের মধ্যে পানির অভাবই হতে পারে সেই কারণ। গরমে দেহের জলশূন্যতা মাথাব্যথার অন্যতম কারণ। তাই, দিনে অন্তত ২.৫ থেকে ৩ লিটার জল খেতে হবে। নিজের ব্যাগে একটি পানির বোতল রাখুন, এবং বাইরে বেরোলেই তার থেকে জল খান। প্রয়োজনে, নুন-চিনির জলও সঙ্গে রাখুন, যা শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করবে।

আদা চা :

মাথাব্যথা শুরু হলেই এক কাপ আদা চা আপনার কাছে হতে পারে এক প্রাকৃতিক উপশম। আদায় রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ, যা প্রদাহ কমিয়ে শরীরকে শান্ত করে। আদার তাপমাত্রা এবং গরম পানি মিলে দেহে এক প্রশান্তির অনুভূতি এনে দেয়। আপনি যখন ভাববেন, কিছু শান্তি পাওয়া যাবে না, ঠিক তখনই আদা চায়ের সেই উষ্ণতার অভ্যর্থনা নিতে ভুলবেন না।

ছাতা বা টুপি :

গরমে বাইরে বেরলে ছাতা বা টুপি ব্যবহার করা যেন এক অপরিহার্য অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাইগ্রেনের সমস্যা যদি থাকে, তাহলে রোদ থেকে শরীরের অতিরিক্ত উত্তাপ শোষণ করতে না দেওয়াই শ্রেয়। রোদের তাপে আপনার মাথার ভেতরে চাপ তৈরি হতে পারে, যা মাইগ্রেনের ব্যথাকে আরও তীব্র করে তোলে। এছাড়া, রোদচশমা পরলে চোখে পড়া অতিরিক্ত আলোকরশ্মি কমবে, যা মস্তিষ্কে চাপ কমাতে সাহায্য করবে।

এসির তাপমাত্রা :

এসি-তে প্রবেশ করার সময় খুব কম তাপমাত্রায় ঢোকা শরীরের জন্য কখনওই ভালো নয়। গরম থেকে ঠান্ডা ঘরে ঢোকাটা একধরনের শক হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এসির তাপমাত্রা ২৫ থেকে ২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রাখাই শ্রেয়। এতে আপনার শরীর ও মস্তিষ্ক, দুই-ই স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ফিরতে পারে এবং মাথাব্যথা কমবে।

বাড়তি কিছু পদক্ষেপ :

কম্পিউটারের সামনে একটানা কাজ করলে চোখে চাপ আসে, আর এই চাপও মাথাব্যথার এক কারণ। তাই মাঝে মাঝে উঠে কিছু সময়ের জন্য চোখকে বিশ্রাম দিন। মোবাইল স্ক্রিনে অতিরিক্ত সময় না রেখে, চোখের উপরে চাপ কমাতে চেষ্টা করুন। আর যদি মাথায় ব্যথা বেশ বেড়ে যায়, তবে ইউক্যালিপটাস বা মিন্ট অয়েল দিয়ে মাথা ও গলার অংশে মালিশ করুন। এক-দুটি ফোঁটা আপনাকে দেবেন তাজা অনুভূতি, আর ব্যথায় মিলবে এক প্রশান্তি।

গরমে মাথাব্যথা বাড়লে কিছু অভ্যাস আছে যেগুলি পরিহার করতে হবে। সিগারেট খাওয়ার অভ্যাস থাকলে এখনই তা থামিয়ে দেয়া উচিত ।  ঠান্ডা পানীয় খেলে মাথাব্যথা আরও বাড়তে পারে ।  বিশেষ করে যদি আপনি তা মিষ্টি বা সোডা জাতীয় পানীয় হিসেবে খান। তাছাড়া অস্বাস্থ্যকর খাবার যেমন - ভাজাভুজি, তেলে ভাজা খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। এই খাবারগুলো শরীরে প্রদাহ তৈরি করে যা মাথাব্যথা আরও বাড়ায়। 

গরমে মাথাব্যথার সমস্যা শুধু বিরক্তিকরই নয় , এটি দৈনন্দিন কাজের গতি ও মনোযোগেও ব্যাঘাত ঘটাতে পারে। তবে যদি একটু সচেতন থাকতে চান তাহলে স্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলো নিয়মিতভাবে অনুসরণ করতে হবে । তাহলে এটি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। এই ছোটো ছোটো পরিবর্তনগুলি আনলেই তা দীর্ঘদিনের জন্য মাথাব্যথার সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। মাথাব্যথার উপর একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ পেতে গরমে শুধু তাপমাত্রা নয় , মন ও শরীরকেও সুন্দর ভারসাম্যে রাখতে হবে।

এই সহজ কিছু কার্যকরী অভ্যাসের মাধ্যমে গরমে মাথাব্যথার হাত থেকে মুক্তি পেতে পারেন। আর মনে রাখবেন, প্রতিক্রিয়া নয় প্রতিরোধ অনেক বেশি কার্যকর।

 

এসকে//

এ সম্পর্কিত আরও পড়ুন গরমের তাপমাত্রা | মাইগ্রেন