আন্তর্জাতিক

গুয়ানতানামো কারাগারে যেতেই হচ্ছে বাংলাদেশিসহ ১০ অবৈধ অভিবাসীকে!

বায়ান্ন আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেফতার হওয়া এক বাংলাদেশিসহ ১০ অবৈধ অভিবাসীকে কিউবার গুয়ান্তানামো বেতে স্থানান্তর করা হতে পারে। তবে এর তীব্র বিরোধিতা করে গেলো শনিবার আদালতে মামলা করেছে আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়ন-এসিএলইউ নামে দেশটির মানবাধিকার বিষয়ক একটি সংগঠন।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে অভিবাসীদের আটকে রাখা বা তাদের নিজ দেশে অথবা অন্য কোনো আইনি ব্যবস্থার জন্য এ চ্যালেঞ্জ করেনি মানবাধিকার সংস্থাগুলো, বরং তারা গুয়ানতানামোতে অভিবাসীদের স্থানান্তর এবং আটকে রাখার ট্রাম্প প্রশাসনের অভূতপূর্ব এবং বেআইনি সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করছে।

দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় গেলে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেবেন- এই হুংকার আগেই দিয়েছিলেন   বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই অনুযায়ী ক্ষমতা গ্রহণের পর বড় ধরনের অভিযান শুরু করেছে তার প্রশাসন। ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে আরও কঠোর হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরই ধারাবাহিকতায় বাবা-মা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে, এমন লাখো অবৈধ অভিবাসী শিশুকে খুঁজে বের করতে অভিবাসন এজেন্টদের নির্দেশ দিয়েছে হোয়াইট হাউস।

এরই ধারাবাহিকতায় মেক্সিকো, ভেনেজুয়েলা, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের হাজারো অভিবাসীকে আটক করে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তবে এবার অবৈধ অভিবাসীদের জন্য আরও ভয়ানক শাস্তির ব্যবস্থা করতে যাচ্ছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। আটক ব্যক্তিদের কিউবার গুয়ানতানামো বেতে অবস্থিত কুখ্যাত বন্দিশিবিরে পাঠানোর পরিকল্পনা  করা হচ্ছে। এরইমধ্যে চূড়ান্ত হওয়া ১০ জনের তালিকায় বাংলাদেশি এক নাগরিকের নাম রয়েছে।

গুয়ানতানামো বে কারাগারটি কুখ্যাত হিসেবে পরিচিত। কারাগারে বন্দিদের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন, বিনাবিচারে দীর্ঘদিন আটকে রাখা এবং আইনজীবী বা ন্যায়বিচারের সুযোগ না দেয়ার মতো ভয়াবহ অভিযোগ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে নাইন-ইলেভেন হামলার পর শত শত মানুষকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের বেশির ভাগই ছিলেন মুসলিম। এই ব্যক্তিদের ওপর জিজ্ঞাসাবাদের নামে নির্যাতন চালানো হতো। পরে পাঠানো হতো গুয়ানতানামো কারাগারে।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার হওয়া ১০ জনের মধ্যে সাতজনই ভেনেজুয়েলার  নাগরিক। অন্য তিনজন  বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের। বর্তমানে তারা টেক্সাস, অ্যারিজোনা ও ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের বিভিন্ন কারাগারে আটক রয়েছেন। এসব নাগরিক অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছিলেন। আটকের পর তাদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দেওয়ার চূড়ান্ত নির্দেশ জারি হয়। তবে দুর্ভাগ্য হলো- এসব বন্দিদের নিজ দেশে ফেরত না পাঠিয়ে গুয়ানতানামো বে কারাগারে পাঠানো হতে পারে।

দক্ষিণ-পূর্ব কিউবার একটি মার্কিন নৌ ঘাঁটিতে নির্মিত কারাগারটিতে এখন আর মাত্র ১৫ জন বন্দী আছেন। এর মধ্যে ৬ জনই বিনা অপরাধে বন্দী রয়েছেন। ২ জন দোষী সাব্যস্ত এবং ৭ জনের বিরুদ্ধে নাইন ইলেভেনসহ একাধিক বোমা হামলার অভিযোগ রয়েছে।

ট্রাম্প প্রশাসনের এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে আদালতে রিট পিটিশন দায়ের করেছে এসিএলইউ। ওয়াশিংটন ডিসির ফেডারেল আদালতে দায়ের করা আবেদনে বলা হয়েছে, গুয়ানতানামো বেতে কঠিন পরিস্থিতি বিদ্যমান।সেখানে অবস্থান করা অভিবাসীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা প্রবল। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী আইন লঙ্ঘন করা হবে। দ্রুত এ সিদ্ধান্তের প্রতিকার চান তারা।

এ বিষয়ে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি ক্রিস্টি নোয়েম বলেছেন, তারা সবচেয়ে খারাপের মধ্যেও সবচেয়ে খারাপ অভিবাসীকে গুয়ানতানামোতে পাঠাচ্ছেন। তবে তার বিভাগের তথ্য অনুসারে, প্রাথমিকভাবে বেতে পাঠানো ১৭০ জনেরও বেশি  ভেনেজুয়েলানের প্রায় এক তৃতীয়াংশের নামে কোনো অপরাধমূলক রেকর্ড নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্রিসিয়া ম্যাকলাফলিন বলেন, অবৈধ অভিবাসী বিতাড়নের ঘোষণা আগে থেকেই ছিল। এখন এসিএলইউর আদালতে দ্বারস্থ হওয়া ভিত্তিহীন। এ বিষয়ে বিচার বিভাগের সঙ্গে আলোচনা করে সরকার পদক্ষেপ নেবে।

এমআর//