প্রচন্ড গ্রীষ্মের তাপদাহে যখন তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রির বেশি চলে যায় , তখন প্রতিদিনের রুটিনের সাথে বাড়তি চাপ আসে । বড়দের জন্য সামলানো সহজ হলেও ছোট বাচ্চাদের জন্য এই সময়টা একেবারেই অসহনীয় হয়ে ওঠে । গরমের তীব্রতায় তাদের খাবারের প্রতি আগ্রহ কমে যায় , শরীরের তাপমাত্রা বাড়ে এবং নানা ধরনের রোগের উপসর্গও দেখা দেয় । যেমন - ডায়রিয়া , বদহজম , সর্দি , কাশি , র্যাশ । গরমে বাচ্চারা কি খাবে , কেমন ধরনের খাবার হওয়া উচিত , কিভাবে তাদের ভালো রাখা যাবে এই নিয়ে বাবা মায়ের চিন্তার শেষ নেই । গ্রীষ্মে শিশুদের যত্ন নেওয়া এবং সঠিক খাবারের রুটিন তৈরি করতে কিছু উপায় মেনে চলা গুরুত্বপূর্ণ ।
শিশুর খাবারের রুটিন
গ্রীষ্মের দিনে শিশুর পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে হলে খাবার হতে হবে সহজপাচ্য , তাজা এবং পুষ্টিকর । এতে তাদের শরীরও থাকবে সুস্থ । অযথা গরমের প্রভাব তাদের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না।
সহজপাচ্য খাবার
গ্রীষ্মে শিশুর হজমশক্তি কিছুটা কমে যেতে পারে, তাই তাদের খাবার সহজপাচ্য ও হালকা হওয়া উচিত । নরম ভাত বা জাউ ভাত তাদের জন্য আদর্শ । তেল মশলায় কম রান্না করা সবজি যেমন- পেঁপে , লাউ , ঝিঙ্গা , শশা এসব পানি জাতীয় সবজি দিয়ে একেবারে পাতলা মাছের ঝোল তৈরি করতে পারেন।
বাইরের খাবার থেকে বিরত থাকুন
গ্রীষ্মে বাড়ির বাইরে খোলা খাবার , ভাজাপোড়া বা অপ্রস্তুত খাবার এড়িয়ে চলুন । এসব খাবারে ব্যাকটেরিয়া এবং অস্বাস্থ্যকর উপাদান থাকতে পারে । সেসবের বদলে হালকা পুষ্টিকর খাবার । যেমন — কম তেল ও মসলায় রান্না করা সবজির স্যুপ , নরম খিচুড়ি বা মাছের পাতলা ঝোল দিন।
ফল ও ফলের রস
ফল হলো গ্রীষ্মের সেরা বন্ধু । তরমুজ , পেঁপে , জাম , জামরুল , লেবু এসব দেশীয় ফল শিশুর শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে এবং প্রয়োজনীয় ভিটামিন সরবরাহ করে । বড় বাচ্চাদের মাঝে মাঝে শশা , গাজর , কলা বা দই-চিড়া দিতে পারেন । এসব খাবার বাচ্চাদের পুষ্টির চাহিদা পূরণে সহায়ক।
পানি ও হাইড্রেশন
গ্রীষ্মে শিশুদের শরীরকে হাইড্রেট রাখা অত্যন্ত জরুরি । তাই নিয়মিত ফিল্টার পানি পান করাতে হবে । বাইরের খোলা শরবত থেকে দূরে রাখুন , কারণ এতে পানির নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় থাকে।
অপ্রয়োজনীয় প্যাকেটজাত খাবার
গ্রীষ্মে চিপস , কেক , চকলেট , বিস্কুট , আচার এসব প্যাকেটজাত খাবার শিশুর পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে । তাই সেগুলো থেকে দূরে থাকুন এবং সেগুলির জায়গায় হালকা , পুষ্টিকর খাবার দিন।
গ্রীষ্মে শিশুর বিশেষ যত্ন
গ্রীষ্মের তীব্রতায় শিশুদের যত্ন নেওয়ার জন্য কিছু সহজ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ রয়েছে , যা মেনে চললে তাদের শারীরিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত থাকবে।
ঘরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করুন
গ্রীষ্মের সময় শিশুকে এমন ঘরে রাখা উচিত যেখানে তাপমাত্রা সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় । এসি থাকলে ঘর বেশি ঠান্ডা না হওয়ার দিকে নজর রাখুন।
নিয়মিত গোসল
শিশুদের ত্বকও গরমে কষ্ট পায় , তাই তাদের নিয়মিত গোসল করানো ভালো । যারা বেশি ঘামেন তাদের গা ও মাথা সুতি কাপড় দিয়ে মুছে দিন । এতে তারা স্বস্তি অনুভব করবে।
পানি পান নিশ্চিত করুন
শিশুর প্রস্রাব ঠিকভাবে হচ্ছে কিনা, তা লক্ষ্য রাখতে হবে । পানি পান না করলে ইউরিন ইনফেকশনের ঝুঁকি বাড়ে । তাই শিশুকে খেলা বা পড়াশোনার মাঝেও পানি পান করতে উৎসাহিত করুন।
সুতি কাপড় পরানো
গ্রীষ্মে সুতি কাপড় পরানো সবচেয়ে ভালো । এটি ঘাম শুষে নিয়ে ত্বককে শীতল রাখে এবং র্যাশ বা চর্মরোগের ঝুঁকি কমায়।
সানস্ক্রিন ও সুরক্ষা
বাইরে পাঠানোর আগে শিশুর ত্বকে উপযুক্ত সানস্ক্রিন লাগান । তাছাড়া ছাতা , রুমাল এবং পানি বোতলও সঙ্গে দিতে ভুলবেন না।
গ্রীষ্মের গরমে শিশুদের যত্ন নেওয়া কিছুটা চ্যালেঞ্জিং হলেও যদি কিছু সহজ নিয়ম মেনে চলা হয় , তবে তারা সুস্থ থাকবে । খাবারের ক্ষেত্রে একটু সতর্কতা এবং সঠিক যত্ন নিলে এই তীব্র গরমেও শিশুর শরীর থাকবে স্বাস্থ্যবান । গ্রীষ্মকালীন সময়েও তারা আনন্দ উপভোগ করবে।
তাই গ্রীষ্মে শিশুর যত্ন নেওয়ার জন্য এসব সহজ নিয়মগুলো মেনে চলুন আর আপনার সন্তানকে সুস্থ , খুশি ও সুরক্ষিত রাখুন ।
এসকে//