ব্রণ বা পিম্পল দেখা দিলে অনেকেই একে ফাটিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে এই অভ্যাসটি শুধু ত্বকের জন্য ক্ষতিকর নয়, কিছু ক্ষেত্রে সমস্যারও তৈরি করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, মুখের এমন কিছু জায়গা রয়েছে যেখানে ব্রণ ফাটানো বিপজ্জনক এবং কখনো কখনো প্রাণঘাতী হতে পারে। কেন এটি এত বিপদজনক এবং কিভাবে সঠিকভাবে ত্বকের যত্ন নেওয়া উচিত জেনে নেয়া যাক।
ডার্মাটোলজিস্ট ডা. শীনা কাপুর জানান, মুখের ‘ডেঞ্জার ট্রায়াঙ্গেল’ (Danger Triangle) সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা। যেখানে ব্রণ ফাটানো বিপজ্জনক হতে পারে। কেননা, এই ত্রিভুজাকৃতির অংশটি মুখের দুই কোণ থেকে নাক পর্যন্ত বিস্তৃত। অর্থাৎ, রক্তনালীগুলো সরাসরি মস্তিষ্কের সঙ্গে সংযুক্ত। তাই এখানে সংক্রমণ ছড়িয়ে গেলে তা মস্তিষ্কে পৌঁছাতে পারে। যার ফলে ক্যাভার্নাস সাইনাস থ্রম্বোসিস (CST) সৃষ্টি করতে পারে।
ক্যাভার্নাস সাইনাস থ্রম্বোসিস (CST) একটি মারাত্মক সমস্যা, যেখানে মস্তিষ্কের নিচে অবস্থিত বড় একটি শিরায় রক্ত জমাট বাঁধে। এই শিরা মুখ ও মস্তিষ্ক থেকে রক্ত নিষ্কাশন করে। যদি সেখানে রক্ত জমাট বাঁধে এবং সংক্রমণ ছড়ায়। তবে এটি চোখের সমস্যা, পক্ষাঘাত এবং অত্যন্ত গুরুতর অবস্থায় মৃত্যুও ঘটাতে পারে।
ব্রণ ফাটানো আরাম দিলেও দীর্ঘমেয়াদী এটি অনেক বেশি ক্ষতির কারণ হতে পারে। বিশেষ করে যদি সিস্ট বা নডিউল ধরনের গভীর ব্রণ থাকে, তাহলে এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। হাত দিয়ে ব্রণ ফাটালে ত্বকের গভীরে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করতে পারে। যার ফলে ইনফেকশন ও স্থায়ী দাগ তৈরি হতে পারে।
এছাড়া মুখের উপর বা নাকের আশপাশে ব্রণ ফাটানো ত্বককে আরও বেশি সংবেদনশীল এবং সোরিতে পরিণত করতে পারে। এ ধরনের ব্রণ যদি সঠিকভাবে চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে এটি পেটেন্ট স্কিন ইনফেকশন বা অন্য কোনও বড় ত্বকের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
ব্রণ ফাটানোর পরিবর্তে যা করবেন :
ডা. শীনা কাপুর ত্বকের সঠিক যত্ন নেওয়ার জন্য কিছু পরামর্শ দিয়েছেন, যা অনুসরণ করলে আপনি নিরাপদে ব্রণ সমস্যার সমাধান পেতে পারেন। তার মধ্যে যেগুলো মেনে চলা উচিত :
ব্রণ ফাটানো বন্ধ করুন:
যতই বিরক্তিকর হোক না কেন, ব্রণ ফাটানোর চেষ্টা করবেন না। এটি দীর্ঘমেয়াদী ত্বকের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:
ত্বকের ধরন অনুযায়ী সঠিক স্কিনকেয়ার রুটিন গ্রহণ করুন এবং প্রয়োজনে ডার্মাটোলজিস্টের সাহায্য নিন।
কার্যকর স্কিন কেয়ার পণ্য ব্যবহার করুন:
যেমন- সালিসিলিক অ্যাসিড বা বেনজয়েল পারঅক্সাইডের মতো পণ্য ব্রণ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে। তবে এগুলো ব্যবহার করার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
প্রফেশনাল এক্সট্রাকশন:
ব্ল্যাকহেড বা হোয়াইটহেড নিয়ে সমস্যা হলে, পার্লারে না গিয়ে, একজন পেশাদার ডার্মাটোলজিস্ট বা স্কিন কেয়ার বিশেষজ্ঞের কাছে গিয়ে এক্সট্রাকশন করান।
অতিরিক্ত পরামর্শ
রেগুলার স্কিন কেয়ার রুটিন:
ত্বক পরিষ্কার রাখতে নিয়মিত মুখ ধোয়া এবং ভালো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
সাধারণ ত্বকের সমস্যা সমাধানে সঠিক চিকিৎসা:
পিম্পল বা ব্রণ বৃদ্ধির কারণ হতে পারে শরীরের অভ্যন্তরীণ সমস্যাও, যেমন হরমোনাল পরিবর্তন বা স্ট্রেস। এসব কারণ চিহ্নিত করে সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হেলদি ডায়েট এবং পানি:
ত্বক সুস্থ রাখতে প্রচুর পানি পান করুন এবং পুষ্টিকর খাবার খান। এতে ত্বক আর্দ্র ও সজীব থাকবে।
বিশেষত মুখের ‘ডেঞ্জার ট্রায়াঙ্গেল’ অংশে ব্রণ ফাটানো ভয়ানক হতে পারে। তাই এ বিষয়ে সচেতন থাকুন। সময়মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং নিজের ত্বকের যত্ন নিতে নিয়মিত স্কিন কেয়ার রুটিন অনুসরণ করুন।
এসকে//