আজকাল আধুনিক জীবনে একদিকে ব্যস্ততার ধকল, অপরদিকে অনিদ্রা বা ঘুমের সমস্যা এই দুইয়ে মিলিয়ে এক চরম দুশ্চিন্তার জন্ম দিয়েছে। ঘুমের অভাব শুধু শরীরকেই ক্লান্ত করে না, মনও হয়ে ওঠে অস্থির। তবে আপনি জানেন কি, দিনেও ঘুমের একটা বিশেষ ভূমিকা রয়েছে? তবে তারও রয়েছে সঠিক সময় ও সীমা। আপনি যদি দিনে ঘুমানোর শখ করেন, তবে আগে জানুন বিশেষজ্ঞরা কী বলেন!
সত্যিই কি দিনে ঘুমালে শরীরের ক্ষতি হয়?
বিকেল বেলায় ঘণ্টা খানেকের ঘুম না হয় কিছুটা মন্দ নয়, কিন্তু জানেন কি, দিনরাতের ঘুমের সময় যদি অপ্রত্যাশিতভাবে বদলে যায়, তাহলে সে কেমন হয়ে দাঁড়াতে পারে? বিশেষজ্ঞরা একবাক্যে বলেন, দিনে ঘুমানোর অভ্যাস যতটা নির্ভেজাল মনে হতে পারে, ততটা ভালো নয়। ভাতঘুম বা দিনের ঘুমের কিছু খারাপ দিক থাকতে পারে, যেমন ওজন বাড়ানো, রাতের ঘুমের ব্যাঘাত, কিংবা পুরো দিনের কার্যক্ষমতার অভাব।
একটু ঘুম, অনেক ফায়দা
আমাদের প্রতিদিনের জীবনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত থাকে, যখন ক্লান্তি এসে ঢুকতে চায়। তখন যদি মিনিট বিশেক ঘুমিয়ে নেওয়া যায়, তবে তার ফল বেশ ভালো। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে যেকোনো ছোট্ট ঘুম আপনার মেজাজ ভালো করতে সাহায্য করবে, ফোকাস বাড়াবে, এবং দিনের বাকি সময়টিকে অনেক বেশি প্রোডাক্টিভ করে তুলবে। তবে সাবধান! এর চেয়ে বেশি সময় ঘুমালে গভীর ঘুমে চলে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে, যার ফলে পুরো দিনটা ঝিমুনির মধ্যে কেটে যেতে পারে।
ঘুমের সময়ের সুনির্দিষ্ট সীমা
যারা নিয়মিত ঘুমের সমস্যায় ভুগছেন বা ইনসোমনিয়া (অশান্ত ঘুম) আছে, তাদের জন্য বিকেল ৪টার পর ঘুমানো একেবারে নিষেধ। কারণ, এই সময়ের ঘুম স্বাভাবিক ঘুমের সাইকেলকে নষ্ট করে দেয়, যার প্রভাব রাতে ঘুমাতে সমস্যা তৈরি করে। চিকিৎসকদের মতে, দিনের মধ্যে ঘুমানোর জন্য সেরা সময় হলো দুপুর ১টা থেকে ৩টা এসময় শরীরও ক্লান্ত থাকে এবং স্নায়ু কিছুটা রিল্যাক্সড থাকে।
ঘুমের ঘাটতি পূরণের উপায়
রাতে যদি ঘুম ঠিক মতো না হয়, তবে দিনের একেবারে মাঝখানে একটু ছোট ঘুম তার ঘাটতি মেটাতে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু এই ঘুমটি অবশ্যই সীমিত সময়ের হতে হবে যেমন ৩০ মিনিটের মধ্যে। ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করতে হবে, তবেই শরীর এবং মন ভালো থাকবে। তবে যদি দীর্ঘদিন ঘুমের সমস্যা চলে, তাহলে ডাক্তারি পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
অতিরিক্ত ঘুমের কারণ বুঝুন
বেশি ঘুমানো শুধু অলসতার লক্ষণ নয় বরং, এটি কিছু অন্তর্নিহিত সমস্যা থেকেও হতে পারে। যদি আপনি প্রতিদিন নিয়মিত ঘুমাতে যান, তবে তা কিছু শারীরিক সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। যেমন স্ট্রেস, লো আয়রন লেভেল, বা অন্যান্য কোনো স্বাস্থ্যগত সমস্যা। সুতরাং, যদি একটানা ক্লান্তি অনুভব করেন, তবে একজন চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত। ঘুম শুধু বিশ্রাম নয়, এটি আপনার স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দেয়ার উপায়ও।
স্বাস্থ্যকর ঘুমের রুটিন
আমাদের দেহের জন্য আদর্শ ঘুমের সময় ৬-৮ ঘণ্টা। এই সময়ের মধ্যে ঘুম হলে আপনার শরীর এবং মন পরিপূর্ণভাবে পুনরুজ্জীবিত হয়। রাতের ঘুমই আমাদের শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তবে যদি দিনমজুর কাজের মাঝে ক্লান্ত হয়ে পড়েন, তবেই দিনের কোনো এক সময় একটু ন্যাপ নেওয়া যেতে পারে কিন্তু নিয়মিত নয়।
ঘুম না হলে যা হবে:
ঘুমের অভাব মানে শুধু ঘুমের স্বাভাবিক অভ্যন্তরীণ সাইকেলেই ব্যাঘাত নয়, শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা, মুড, এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যাও ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়। তাই নিজের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে সঠিক সময়ে ঘুমানোর অভ্যাস তৈরি করুন, এবং চেষ্টা করুন রাতে পর্যাপ্ত ঘুম নিতে। যদি সেই ঘুমের ঘাটতি দিনের মধ্যে পূর্ণ করতে হয়, তবে শুধু ২০-৩০ মিনিটের জন্যই ঘুমান , অধিক নয়।
এসকে//