শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অনিয়ম, দুর্নীতি ও দলীয়করণের হাত থেকে মুক্তির দাবি জানিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন নানা অঙ্গনের শিল্পীরা। বিভিন্ন দাবিতে বিটিভিতে সাংস্কৃতিক গণজমায়েত, শিল্পকলা একাডেমির সামনে থিয়েটারকর্মী সমাবেশ ও রিপোর্টার্স ইউনিটির সভায় অংশ নেন সংস্কৃতিকর্মীরা।
বাংলাদেশ টেলিভিশনের নানা দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে সোচ্চার হয়েছেন বৈষম্যবিরোধী শিল্পী ও কলাকুশলীরা। মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৯টা থেকে শিল্পী, গীতিকার ও কলাকুশলীরা বিটিভি ভবনের সামনে কর্মসূচিতে এসব কথা জানান। এই সময় বিটিভির দুর্নীতিতে যুক্ত কর্মকর্তাদের পদত্যাগ চান তারা। দীর্ঘ সময় ধরে শিল্পীদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে বলে মনে করেন গীতিকার শেখ সাদী খান। তিনি এ আয়োজনের আহ্বায়ক।
শেখ সাদী বলেন, ‘আমরা চাই বিটিভি, রেডিও, শিল্পকলা একাডেমিসহ সাংস্কৃতিক যে প্রতিষ্ঠান আছে, সেখান থেকে বৈষম্য দূর হোক। আমরা কর্মবণ্টন চাই। যাদের প্রতিভা রয়েছে, তাদের মূল্যায়ন করা হোক। এ ছাড়া বিটিভিতে দীর্ঘ বছর ধরে দুর্নীতি চলছে, এ নিয়ে অনেক অভিযোগও রয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ দেখে, জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের এই অনিয়মতান্ত্রিকতা বন্ধ হোক। তিনি আরও বলেন, ‘বিটিভিতে অডিশনের নামে যা-তা হয়েছে, এটা বন্ধ হোক। নতুন করে যারা মেধাবী, তাদের মূল্যায়ন এখন সময়ের দাবি। কারণ, আমাদের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে এগিয়ে নিতে হবে। আমাদের একটাই কথা, শিল্প অঙ্গন থেকে দুর্নীতি, অরাজকতা দূর করা।’
কর্মসূচিতে আরও উপস্থিত ছিলেন ফোয়াদ নাসের বাবু, পার্থ মজুমদার, শেখ জসিম, পলাশ, আবু বকর সিদ্দিকী প্রমুখ। এখান থেকে বেলা ১১টার পর বিটিভির সামনে কর্মসূচি শেষে তারা শিল্পকলার উদ্দেশে যাত্রা করেন।
রাজধানীর রিপোর্টার্স ইউনিটিতে মঙ্গলবার দুপুর ২টায় ‘মুক্ত শিল্পী সমাজ’ এর ব্যানারে এক সভার আয়োজন করা হয়। এতে তিনশতাধিক শিল্পী-কলাকুশলী অংশ নেয়। এ ব্যাপারে ক্লোজআপ ওয়ানখ্যাত সংগীতশিল্পী মুহিন খান বলেন, ‘এটা আমাদের অরাজনৈতিক একটি অবস্থান। গত ১৬ বছরে বিটিভিতে দলীয়করণের যে মহোৎসব দেখা গেছে, তা থেকে পরিত্রাণ চাই আমরা। যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে সবাই যেন বিটিভিতে কাজের সুযোগ পান, আমরা সেটা চাই’। এছাড়া মিউজিক রেগুলেটরি কমিশনের অনুমোদন, শিল্পীদের [গীতিকার, সুরকার, কণ্ঠশিল্পী, যন্ত্রশিল্পী, সংগীত পরিচালক ও শব্দগ্রাহক] পেশার স্বীকৃতি, দলীয়করণমুক্ত, সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগে দুর্নীতি দূর করা, সরকারি-বেসরকারি সব মাধ্যমে শিল্পীদের সম্মানী বৃদ্ধি, রয়্যালটির সমবণ্টন, অডিও-ভিডিও কোম্পানির একাধিপত্য দূর করাসহ অনেক যৌক্তিক দাবি তুলে ধরা হয় সভায়।
এদিকে গেল সোমবার দুর্নীতির অভিযোগ এনে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর পদত্যাগ দাবি করেছেন মঞ্চকর্মীরা। এক যুগের বেশি সময় ধরে দায়িত্বে থাকা মহাপরিচালক ১২ আগস্ট পদত্যাগ করেছেন। শিল্পকলা একাডেমির পদত্যাগী মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর দুর্নীতির তদন্ত করে তাঁকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন থিয়েটারকর্মীরা।
একই সঙ্গে গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশন ও পথনাটক পরিষদের গণতান্ত্রিক রূপান্তরেরও দাবি তুলেছেন তারা। সেগুনবাগিচার জাতীয় নাট্যশালার সামনে ‘বিক্ষুব্ধ থিয়েটার কর্মীগণ’-এর সমাবেশ থেকে এসব দাবি তোলা হয়। তাদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে মহাপরিচালকের স্বেচ্ছাচারিতার শিকার হয়ে কর্মস্থলে নানা রকম বৈষম্য-বঞ্চনার শিকার হচ্ছিলেন তারা। তাঁর পদত্যাগের মধ্যদিয়ে শিল্পকলায় একটি দুর্নীতিমুক্ত, স্বাধীন কর্ম-পরিবেশ পাওয়ার আশাও তাদের।
থিয়েটারকর্মীদের সমাবেশে আয়োজকদের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান অভিনেত্রী শাহানা রহমান সুমি। বক্তব্য দেন প্রাচ্যনাটের কাজী তৌফিকুল ইসলাম ইমন, তাড়ুয়ার বাকার বকুল, অপেরার নাহিদ স্মৃতি, আরণ্যক নাট্যদলের ফয়েজ জহির, বটতলার কাজী রোকসানা রুমা, মোহাম্মদ আলী হায়দার প্রমুখ।
এসআই/